শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

এনআরসির আড়ালে বিজেপির ভিন্ন খেলা চলছে: আল্লামা আরশাদ মাদানী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ভারতের জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের প্রধান আল্লামা আরশাদ মাদানী বলেছেন, আমাদের দেশ যুগ যুগ ধরে নিরাপত্তা, সম্প্রীতি ও ভালবাসার নিদর্শন হয়ে আছে। বহু সংস্কৃতি ও ভাষার এ দেশে শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা এক সাথে বসবাস করে আসছে। ধর্মীয় সহনশীলতা ভারতবর্ষের অস্তিত্বের পরিচায়ক। প্রত্যেক নাগরিককে এ দেশে আইন সমান অধিকার দেয়। ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও অঞ্চল ভেদে নাগরিকদের সাথে বর্ণবাদী আচরণ করা সরাসরি দেশের আইন বিরোধী।

মুম্বাই-এ জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ৪ দিনব্যাপী আলোচনা সমাবেশে আয়োজন কমিটির মজলিসের পূর্বে সাংবাদিকদের দেওয়া এক প্রেস ব্রিফিং তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আফসোস করে বলেন, কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থে বর্তমান সরকার দেশে যেভাবে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মাঝে বিভেদের দেয়াল দাড় করিয়ে ভোটাধিকার নিয়ে যেভাবে রাজনীতি করছে, তাতে দিন দিন দেশের অবস্থা নাজুক হতে চলেছে।

এনআরসি ও সিআইআই বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে একক হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর যেই অবৈধ ইচ্ছার দিকে সরকার আগাচ্ছে, এতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্ম পরিচয় থেকে বঞ্চিত হয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠের মাঝে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। যা অবশ্যই দেশের নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের জন্য হুমকি।

জমিয়ত প্রধান বলেন, সিসিআই নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সরকার যাকে ইচ্ছা নাগরিকত্ব দিতে পারে।কিন্তু ধর্মকে ইস্যু বানিয়ে যেভাবে একটি গোষ্ঠীকে নিয়মের আওতায় এনে আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট আপত্তি আছে।কারণ এটা সরাসরি দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধানবিরোধী। শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে আপনি কোন নাগরিককে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারেন না। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে আমাদের সংবিধানে।

আরোপিত আইন দেশের বর্তমান অবস্থার বিপরীত। এই আইনের বিরুদ্ধে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ আদালতের দারস্থ হলে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে নতুন আরোপিত আইনে যা কিছু যুক্ত করা হয়েছে তা একেবারে অপ্রয়োজনীয়। তাই এই আইন বেশি বিপদজনক।

মাওলানা মাদানী আরো বলেন, যখন নতুন এই আইন বাস্তবায়ন করা হবে তখন দায়িত্বশীলদের ইচ্ছাধিকার থাকবে। তারা চাইলেই কাউকে অনাগরিক হিসেবে গণ্য করতে পারবেন। আমরা আসামে এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি।সন্দেহভাজনদের আর ভোটাধিকার দেওয়া হবে না। এভাবে চলতে থাকলে শুধু মুসলিম নয় হিন্দুদের বড় একটা অংশও এই নির্যাতনের শিকার হবে।

সরকার এখনো এই আইন বাস্তবায়ন করেনি তারপরও এই ব্যাপারে আপনি শঙ্কিত কেন? এ প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ১৯৫১ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত দেশে যেভাবে আদম শুমারি চলে আসছিল এবার সেভাবে হ বেনা একথা স্পষ্ট। বরং এবার এমন কিছু তথ্য চাওয়া হবে যার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া প্রায় নাগরিকের জন্য অসম্ভব।

আমরা এজন্যও শঙ্কিত যে বর্তমান সরকার গত ৬ বছর ধরেই জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে এমন কাজগুলোই করে যাচ্ছে। সিসিআই - এর মত আইন সামনে আনা শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দেয়। আরোপিত আইন সম্পর্কিত সরকারের বর্তমান কার্যক্রম সরকারের অবৈধ অভিসারকে আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে।

এনআরসি, সিআইআইসহ মুসলমানদের অন্যান্য সমস্যা নিয়ে জমিয়তে ওলামে হিন্দের চার দিন ব্যাপী এই কার্যক্রম ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মাওলানা মাদানী।

জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের এই আলোচনা সভা দেওবন্দে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সরকার পক্ষের অনুমতি না পাওয়ায় মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

'যরবে দেওবন্দ ' এর সূত্রে জানা যায় ১৭,১৮ ও ১৯ বিগত এই তিন বছরে সরকার পক্ষ দেওবন্দে এই আলোচনা সভার অনুমতি দিলেও শেষ মুহুর্তে আয়োজক কমিটি তা বাতিল করে অভ্যন্তরীণ কোন কারণে।

মাওলানা মাদানী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটাই প্রথম বার যখন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের এই আলোচনা সভাকে দেওবন্দে অনুমতি না দেওয়ার পর দিল্লীতেও অনুমতি মেলেনি। কিনতে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষের কাছে কিছু জরুরি বার্তা দেওয়ার জন্য আমাদের এই প্রোগ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই এই মজলিস মুম্বাই-এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এছাড়াও মাওলানা মাদানী আরো বলেন, আমরা কোন দলের পক্ষ বা বিরোধী নই।আমরা শুধু দেশের সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার পক্ষে।আমরা বিজেপি বিরোধী বলে অনেকেই অভিযোগ তোলেন। যার কোন ভিত্তি নেই।দেশের সম্প্রীতিতে ফাটল ধরাবে যে মতাদর্শ আমরা তো শুধু তার বিরোধী।

মাওলানা মাদানী আরো বলেন, দেশে সুদিন ফুরিয়ে আনার কথা বলে ক্ষমতায় আসা এই সরকার এখন দেশে বিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনে ব্যস্ত। যা এক সেকুলার দেশের জন্য কখনো কাম্য নয়। সরকারের বর্ণবাদী আইনের বিরুদ্ধে দেশে চলমান আন্দোলনকে জায়গায় জায়গায় দমন করা হচ্ছে।

মাওলানা মাদানি এক প্রশ্নের উত্তরে আরো বলেন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে উত্তর প্রদেশে অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমদ আসা বিক্ষোভকারীদের উপর সরকার বাহিনী শুধু পৈচাশিক আচরণ করেনি, সরাসরি তাদের বুকে গুলিও চালিয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশের পক্ষ থেকে মিথ্যাচার করা হয়েছে, আন্দোনলকারীরা পরস্পরে পরস্পরকে গুলি করে বলে। আর তা থামাতে পুলিশ ফাঁকা লাঠি চার্জ করেছে।

তিনি আরো বলেন, এটা বড় দুঃখজনক যে বিক্ষোভে অংশগ্রহণের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা বিক্ষোভকারীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে। অথচ পুলিশ এতোগুলো জীবনের ক্ষতি করল এটা নিয়ে না উত্তর প্রদেশ সরকার কোন প্রশ্ন তুলেছে না কেন্দ্রীয় সরকার।

তিনি আরো বলেন, দেশে ভয় ও সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি চলছে। অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে যারা গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলছে তাদের দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে।

সবশেষে মাওলানা মাদানী বলেন, আমরা সি আই আই ও এন আর সি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের সাথে কথা বলেছি,আদালত সরকারকে এ ব্যাপারে নোটিশ দিয়েছে।

যেসব বিষয় রাজনৈতিকভাবে মিমাংসিত হয় না জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ সেসব বিষয়ে আদালতের দারস্থ হন। অনেক বিষয়েই আমরা আদালতের কাছ থেকে আশানুরূপ ফল পেয়েছি। তাই এ ব্যাপারেও আদালতের কাছ থেকে ন্যায়সঙ্গত কোন সমাধান আসবে আশা করি।

তিনি বলেন, আলোচনা সভায় কমিটি যা সিদ্ধান্ত নিবে তা ২৩ ফেব্রুয়ারি জানানো হবে।

আল্লামা আরশাদ মাদানী বলেন, দেশে যেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে একে হিন্দু- মুসলিমের ধর্মী সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা অন্যায়।বর্তমানে দেশের অস্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দেশের প্রত্যেক সুশীল নাগরিকের ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিত।

জারবে দেওবন্দ অবলম্বনে নুরুদ্দিন তাসলিম 

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ