শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


বাবরি মসজিদের নিচে মন্দিরের কোনো প্রমাণ নেই: প্রত্নতত্ত্ববিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: ভারতের গুজরাটে বাবরি মসজিদের মাটির নিচে কোনো মন্দিরের অস্থিত্ব নেই বলে জানালেন ভারতের দুই প্রত্নতাত্ত্বিক সুপ্রিয় ভার্মা ও জয়া মেনন।

সুপ্রিয় ভার্মা ভারতের জওহারলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ব বিভাগের অধ্যাপক আর শিব নদর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান জয়া মেনন।

এর আগে ২০০৩ সালে বাবরি মসজিদ ৬ মাস খোঁড়াখুঁড়ির পর আগস্টে ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে বিভাগ (এএসআই) এলাহাবাদ হাইকোর্টকে জানায় যে, মসজিদের নিচে একটি মন্দির থাকার প্রমাণ মিলেছে।

১৯৯২ সালে করা সেবক নামে একদল উগ্রবাদী হিন্দু গোষ্ঠী বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ দাবিতে যে, সেখানে রাম মন্দির ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে।

ফলে এএসআই’র বক্তব্য সেই দাবিকে আরো জোরালো করে। তবে সুপ্রিয় ভার্মা ও জয়া মেনন নামে দুই প্রত্নতাত্ত্বিক তখনই এএসআই’র বিরুদ্ধে খোঁড়াখুঁড়ি শুরুর আগেই পূর্বানুমান ধারণ করার অভিযোগ আনেন।

তারা আদালতকে জানান, ওই খোঁড়াখুঁড়ি থেকে এমন কোনো প্রমাণ উঠে আসেনি যা এএসআই’র বক্তব্যকে সমর্থন করে।

প্রত্নতাত্ত্বিক সুপ্রিম ভার্মা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৬তম বছরপূর্তিতে হাফিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ২০০৩ সালের খোঁড়াখুঁড়িতে যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

যা মূলত এএসআই-এর আবিষ্কৃত। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে বি. আর. মনির নেতৃত্বে হওয়া এই খননে পদ্ধতিগত ভুল-ত্রুটি হয়েছে।

পরে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে তাকে এই খননকার্য থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এবং ২০১৬ সালে এসে নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বি. আর. মনিকে জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক করেছে।

কোনো রামমন্দিরের ওপর বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এমন কোনো প্রত্মতাত্বিক প্রমাণ রয়েছে কিনা? সুপ্রিয় ভার্মা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কোনো ধরণের প্রমাণ নেই। এমনকি আজও কোনো প্রত্মতাত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে বাবরি মসজিদের নিচে মন্দির রয়েছে।

কিন্তু কী প্রমাণের ভিত্তিতে এএসআই এমন দাবি করেছিল? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খননকার্য থেকে এএসআই মূলত তিন খন্ড প্রমাণ পেয়েছে। একটি হলো পশ্চিমমুখী দেয়াল, ৫০টি স্তম্ভের গোড়া আর কিছু স্থাপত্য খন্ড।

পশ্চিমমুখী দেওয়াল মূলত একটি মসজিদের বৈশিষ্ঠ্য। এ দেওয়ালের সামনে ফিরেই মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন। এটি কোনো মন্দিরের বৈশিষ্ট্য নয়। মন্দিরের বৈশিষ্ট্য পুরোই আলাদা। অপরদিকে যে ৫০টি স্তম্ভের গোড়ার কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণই ভুয়া।

আমরা আদালতের কাছে অনেকবার এ অভিযোগ করেছি। আমাদের যুক্তি হলো, তারা যে জিনিসকে স্তম্ভের গোড়া বা ভিত্তি বলছে সেটা মূলত ভাঙ্গা ইটের খন্ড। এগুলোর ভেতরে মাটি আর এসবের ওপর কোনো পিলার দাঁড় করানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তৃতীয় প্রমাণ সম্পর্কে তিনি ব্যাখা করে বলেন- আর্কিটেকচারাল কিছু অংশবিশেষ নিয়ে তারা বলছে যে, ৪০০-৫০০ টুকরো পাওয়া গেছে। এগুলো মূলত যেকোনো ভবনেরই অংশ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে ১২টিকে তারা বলছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এই ১২টি খন্ড খননের সময় পাওয়া যায়নি। এগুলো মূলত মসজিদের মেঝের ওপর পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ থেকে নেয়া হয়েছে।

তিনি অরো বলেন, সেখানে একটি মূর্তিসদৃশ ছিল, সেটাকে বলা হচ্ছে, কোনো স্বর্গীয় জোড়া! কিন্তু সেটাকে সত্য ধরলেও, সেখানে শুধু একজন পুরুষ ও একজন নারীর প্রতিকৃতির মতো আছে তা আবার অর্ধভাঙ্গা।

আর কিছুই সেখানে নেই! একটি মন্দির যাকে প্রস্তর মন্দির বলে দাবি করা হচ্ছে, সেসব মন্দিরে আরও অনেক বেশি মূর্তি বা প্রস্তরে খোদাই করা জিনিস থাকার কথা। কিন্তু এখানে এমন কিছুই পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও এই প্রস্তরের কোনো তারিখ নির্ণয় করা যায় না। এসব প্রস্তর যেকোনো সময়ের হতে পারে। এবং এগুলোর সঠিক বয়স নির্ণয় করার কোনো উপায় নেই।

অর্থাৎ এটি কোনো রাম মন্দিরের কিনা তার কোনো প্রমাণ নেই। আর যেসব পিলারের গোড়া রয়েছে, সেগুলো আমার মতে স্পষ্টতই ১২ থেকে ১৫শ’ শতাব্দীর সময়কার।

এএসআই নিজেরাও বলছেন না, এসবের বয়স কতদিন। তা সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন, সংস্থাটি শুধু বলেছে যে, মসজিদের নিচে একটি মন্দির আছে। এতোটুকুই!

এরআগে ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি নামে একটি সাময়িকীতে এএসআই’র অনুসৃত পদ্ধতি ও ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি নিবন্ধ ২০১০ সালে প্রকাশ করেন।

সেখানে তারা উল্লেখ করেন, তৎকালীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের চাপের কারণে বাবরি মসজিদকে ধ্বংস করার কাজকে বৈধতা দিতেই ঐ বক্তব্য দেয় এএসআই।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ