ইসমাঈল আযহার: আবদুল মালেক বিন মারওয়ান ছিলেন, সুবুদ্ধিসম্পন্ন যুবক, চালাক, ইবাদতকারী, আইনবিদ, কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানভান্ডারে সমৃদ্ধ একজন ব্যক্তি। বড় সাহাবিগণও তার ব্যাপারে ভিবিন্ন রকম মন্তব্য করেছিলেন যা হুবহু বাস্তবতার রুপ নিয়েছে। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পান্ডিত্য ও প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন তিনি।
ইবনে যুবায়ের খিলাফতকালে আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান আব্দুল মালিককে উত্তরাধিকার মনােনীত করেন। মিসর আর সিরিয়া নির্যাতনের মাধ্যমে প্রথম থেকেই তার অধীনে ছিল। এরপর ইরাক ইত্যাদি তার পদানত হয়।
৭৩ হিজরীতে ইবনে যুবায়েরের শাহাদাতের পর খিলাফত বিশুদ্ধ হয় মারওয়ানের খেলাফাত। আর এ বছরই হাজ্জাজ কাবা শরীফ বর্তমানে যেভাবে তৈরি আছে সেভাবে পুনর্নির্মাণ করেন।
হাজ্জাজের ইশারায় এক ব্যক্তি কর্তৃক বিষ মিশ্রিত বর্শার আঘাতে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. গুরুতর আহত হােন। আর এ কারণেই দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকার পরে ইন্তেকাল করেন তিনি।
৭৪ হিজরীতে হাজ্জাজ মদীনা শরীফে গিয়ে মদীনাবাসী আর যে সকল আসহাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে সময় জীবিত ছিলেন তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করতে আরম্ভ করে। আনাস রা, জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা., সহল বিন সাদী রা. প্রমুখ সাহাবীদের গলা আর হাতে মােহর এঁটে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের চরম অপমানিত করে হাজ্জাজ।
৭৫ হিজরীতে আব্দুল মালিক হজ্জ করেন আর হাজ্জাজ ইরাকের গভর্নর নিযুক্ত হন।
৭৭ হিজরীতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি দুর্গ বিজিত হয় আর মিসরের ঐতিহাসিক জামে মসজিদ ভেঙে আব্দুল আযীয বিন মারওয়ান চারিদিকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ করেন।
৮২ হিজরীতে সিনানা দুর্গ হস্তগত হয় আর আর্মেনিয়া ও সানহাযার যুদ্ধ হয়।
৮৩ হিজরীতে হাজ্জাজ একটি শহরের গােড়া পত্তন করে।
৮৪ হিজরীতে মাসীসা আর আওদীয়ায়ে মাগরিব হাতে আসে।
৮৫ হিজরীতে আব্দুল আযীয বিন আবু হাতিম বিন তাগমান আল বাহলী নগর প্রাচীর নির্মাণ করেন।
৮৬ হিজরীতে তাওলিক আর ইহজাম নামক দুটি দুর্গ হস্তগত হয়। প্লেগে আক্রান্ত হয়ে এ দুটি দুর্গের অধিকাংশ মহিলা মারা যায়। এজন্য দুর্গদ্বয়কে প্লেগের সমাধি নামে অভিহিত করা হয়। এ বছরের শাওয়াল মাসে আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান ইন্তেকাল করেন।
আহমাদ বিন আব্দুল্লাহ আল আজলী বলেন, “আব্দুল মালিকের মেধা পঁচনের অসুখ ছিল। ১৭ জন পুত্র সন্তান রেখে সে পরলােক গমন করেন।”
আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান সম্পর্কে ইবনে সা‘দ বলেন, মারওয়ান উম্মে দারদা সাহাবীর কাছে যাতায়াত করতাে। একদিন উম্মে দারদা বললেন, “হে আমিরুল মুমিনীন, আমি শুনেছি আপনি ইবাদত করার পরও মাদ পান করেন।” সে বললাে, “হ্যাঁ, আমি মদ পানের সঙ্গে সঙ্গে কাপালিকে পরিণত হয়েছি।”
নাফে বলেছেন, “আমি মদীনায় আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের চেয়ে অধিক কূটবুদ্ধিসম্পন্ন যুবক, চালাক, ইবাদতকারী, আইনবিদ, কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ ব্যক্তি আর দেখিনি।” আবু যানাদ বলেছেন, “মদীনার ফকীহগণ হলেন - সাঈদ বিন মুসায়্যাব, আব্দুল মালিক বিন মারওয়ান, উরওয়া বিন যুবায়ের আর ফাবিযা বিন ওযীব।” ইবনে উমর রা. বলেছেন, “সকলে ছেলের জন্ম দেয়। কিন্তু মারওয়ান দিয়েছেন পিতার জন্ম।”
উবাদা বিন লাবনী বলেছেন, এক ব্যক্তি ইবনে উমরকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কুরাইশদের মধ্যে বয়ঃবৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আপনার ইন্তেকালে পর আমরা মাসয়ালা মাসায়েল কাকে জিজ্ঞেস করবাে ?” তিনি। বললেন, “মারওয়ানের ছেলে ফকীহ, তাঁকে তােমরা জিজ্ঞেস করবে।”
আবু হুরায়রা রা. এর গােলাম সুহায়েম বলেছেন, “তরুণ আব্দুল মালিক আবু হুরায়রার কাছে এলে তিনি বললেন, এ যুবক একদিন আরবের বাদশাহ হবেন।”
আবু হুরায়রা রা. এর গােলাম সুহায়েম বলেছেন, “তরুণ আব্দুল মালিক আবু হুরায়রার কাছে এলে তিনি বললেন, এ যুবক একদিন আরবের বাদশাহ হবেন।”
উবায়দা বিন রাব্বাহ আল গাসসানী বলেছেন, আব্দুল মালিক খলীফা হওয়ার পর উম্মে দারদা তাঁকে বললেন, “আমি তােমাকে দেখেই বুঝেছিলাম তুমি একদিন বাদশাহ হবে।” তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কিভাবে বুঝেছিলেন ?” তিনি বললেন, “তােমার চেয়ে বাগ্মী আর চিন্তাশীল আর দেখিনি।”
শাবী রহ. বলেছেন, “যে আমার সাহচর্য লাভ করেছে, সে-ই আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার কাছে হার মেনেছে। আর আমি আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের পান্ডিত্য ও প্রখর মেধার কাছে লা জওয়াব হয়েছি। কারণ আমি তার সামনে কোনাে হাদীস পেশ করলে তিনি অবশ্যই সে হাদীসের ব্যাখ্যা করতেন। আর কোনাে বিষয়ে। কবিতা আবৃত্তি করলে একই বিষয়ে তিনি আরাে অধিক কবিতা পাঠ করতেন।”
নির্বাচন থেকে আমাদের সরিয়ে দিতে চায় সরকার: ফখরুল