বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


কেউ একজন ‘High Intelligence Designer’ আছেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক

স্টিফেন হকিংস। বর্তমান বিশ্বের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও কসমোলজিতে বিশেষজ্ঞ। এই বছরের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে মারা যান। ২১ বছর বয়সেই ALS নামের দ্রুত বর্ধমান একটি রোগে আক্রান্ত হন। প্যারালাইজড হন। হুইল চেয়ারেই জীবন কাটান। ডান গালে সেন্সর ও মাথার বাম পাশে বিশেষ আইফোনের মাধ্যমে কম্পিউটারে ভাব/কথা প্রকাশ করতেন।

১৯৯৫ সালে তার স্ত্রী জেনি হকিং তাকে তার স্রষ্টা অবিশ্বাসের কারনে তাকে ছেড়ে চলে যান।
১৯৮৮ সালে তার ‘A brief histoty of time’ নামের লেখা বই টি এ পর্যন্ত ১ কোটি ৩০ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে।

ইসলামি কোনো স্কলারের লেখা কোনো বই কি তার কাছে যেতে পেরেছে? আমার জানা নেই। হলে তো ভাল, তবে ভাবা উচিত।

তার শেষ বই (God এর অস্তিত্ব নিয়ে ও যেখানে কথা রয়েছে), ‘In Brief Answers to the Big Questions’ বইটি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে আলোচনা চলছে।

তিনি মৃত্যুর আগে বইটিতে অনেক বড় কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছেন। তার বক্তব্য নিয়ে আমার কিছু মত প্রকাশের জন্যই আজকের লেখা।

বইটিতে গড এর অস্তিত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে যা বলেছেন, প্রশ্ন সহকারে উল্লেখ করলাম।

Hawking examined the question: What of our humanity do we owe to God, and what do we owe to scientific process? The answer, he bluntly wrote, is that "there is no God. No one directs the universe."

Hawking believed the Big Bang gave us our universe, not a god toying with the idea of creation. He believed that quantum mechanics ignited a spark that caused our universe to blossom from a subatomic particle into an infinite expanse whose corners we'll never find. It could have "popped into existence without violating the known laws of nature,"

Hawking's work on quantum mechanics also gave him an explanation for what came before the universe. It wasn't a lonely god who snapped his fingers and created life. Quantum theory explains that the Big Bang was born from a singularity, like a black hole, where time and space were so warped they didn't even exist. Nothing happened before the Big Bang, because time didn't happen.

মোদ্দা কথা হল, সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই। বিশ্ব পরিচালনা করতে কেউ নির্দেশ প্রদান করছে না। বিশ্ব সৃষ্টির পেছনে রয়েছে ‘বিগ ব্যাঙ’ সৃষ্টিকর্তার কোনো খেলা নয় এটি। প্রকৃতির নিয়ম না ভেঙে একটি বিস্ফোরণের ফল আমাদের এই বিশ্বভ্রমান্ড।

বিগ ব্যাঙ ও ব্ল্যাকহোল এর চলমান প্রক্রিয়ার ফল সবকিছু। কোয়ান্টাম মেকানিজম এর ভূমিকা সবকিছুর পেছনে। সময় ও দূরত্ব সমানে ধাবমান। বিগব্যাঙ এর পূর্বে কিছুই ছিল না, সময়ও নয়।

আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন, "I prefer to think that,everything can be explained another way, by the laws of Natur. " অর্থাৎ-

‘আমি এভাবে চিন্তা করতে চাই, সবকিছুর একটা ব্যাখ্যা আলাদাভাবে করা যায় যে, প্রকৃতির আইনে সব চলছে। ’

স্টিফেন হকিংস এর কিছু কথা সবাই গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা/গবেষণা করছে। তিনি টাইম ট্র্যাভেলের কথা বলেছেন।অর্থাৎ আপনি যদি আলোর গতির সাথে চলতে পারেন আপনি যখন দেখবেন আপনার ৭ দিন কেটে গেছে সে সময়ে পৃথিবীতে আপনার অপর ভাইয়ের কয়েক ডজন বছর কেটে গেছে। চমৎকারভাবে তিনি টাইম ট্র্যাভেল থিউরি প্রকাশ করে সময়ের পার্থক্য দেখিয়েছেন।

আফসোস তাকে যদি কেউ কোরানের সময়ের পার্থক্যের কথা জানাত!রাসুলের মেরাজের কথা জানাত, কিভাবে ১ রাতের সমান ২৭ বছর হল। তখন যেটি বিশ্বাস করা কঠিন ছিল, এমনকি এখনও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তারা স্টিফেন হকিংস এর টাইম ট্র্যাভেল থিওরি দেখতে পারেন।

তিনি বলেছেন, দুনিয়াটা ১০০০ বছর পরে ধ্বংস হয়ে যাবে। এর জন্য পারমানবিক বোমা, গ্রহের পরিবর্তন/ধ্বংস, আবহাওয়াসহ নানা কারণ উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে খুব বিতর্কের কিছু নেই। আমরা মুসলমানরা আল কুরানের সুরায় সুরায় কিয়ামতের কথা তো অহরহ পড়ছি।

কিন্তু তার স্রষ্ঠা অবিশ্বাস নিয়ে তো কিছু কথা বলতেই হয়। আমার মত একটা ক্ষুদ্র মানুষ, স্টিফেন হকিংস এর কোটি ভাগের এক ভাগ যোগ্যতাও নাই, তার লেখার, মন্তব্যের বা আবিষ্কার এর ওপর কোনো মন্তব্যের যোগ্যতা রাখি না।

কিন্তু ১৬০ তলা ভবন যে ডিজাইনার বানালেন, আমি বানাবার যোগ্যতা না রাখলেও ভবন টির কোন নির্মান ত্রুটি থাকলে তা তো দৃশ্যমান, তা বলতে তো অসুবিধা নাই। হকিংস এর নির্মাণ ত্রুটি অনেক, তাই কিছু বলা।

তার কথায়, সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নাই । বিগব্যাঙ থেকে শুরু।বিগব্যাঙ কি এমনি ঘটল? ব্ল্যাকহোল কি এমনিই ধাবমান? প্রকৃতির নিয়ম না ভেঙে সব চলছে, কিন্তু কেন বললেন না প্রকৃতির নিয়ম কে দিল? আপনি বলেছেন সময়ের অস্তিত্ব বিগব্যাঙ এর আগে ছিল না। কি ছিল তাহলে?

পরিষ্কারভাবে গ্রহণযোগ্য কিছু বলতে পারেন নি। প্রকৃতির নিয়মে আপনার শরীরটা ঠিক থাকল না কেন? কেন ২১ বছর বয়সে অনিয়ন্ত্রিত রোগে আক্রান্ত হলেন? প্রকৃতিও কি কার ও হুকুমের গোলাম? আপনি তো নাই, প্রশ্নগুলো আপনার অনুসারীদের। কারণ তারাও আপনার থিওরি প্রচারে পাগলপারা।

একটি কথা মনে রেখে আপনারা থিওরি প্রচার করবেন, গোটা দুনিয়ার ৭৫০ কোটি মানুষের মধ্যে ইসলাম,খৃষ্টান, ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্ম সহ প্রায় ৪০০০ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যার তুলনায় অবিশ্বাসীর সংখ্যা কয়েক লাখ। যদিও কেউ কেউ দাবী করেন নাস্তিক ১ কোটি হবে।

মানুষ যখন দেখে, সে মৃত্যু ঠেকাতে পারেনা, দূর্যোগ ঠেকাতে পারেনা, ভূমিকম্প ঠেকাতে পারেনা, নিঃসন্তান পিতামাতা কোটি টাকা খরচ করেও সন্তান জন্ম দিতে পারে না, সন্তানের অন্ধত্ব পঙ্গুত্ব ঠেকাতে পারেনা, শুধুই মেয়ে হয়,ছেলে জন্ম দিতে পারেনা,ছেলে হয়,মেয়ে জন্ম দিতে পারেনা, বন্ধা হয়ে থাকে, আকাশের মেঘ, তার থেকে বন্যা আটকাতে পারে না, সুনামি-অগ্নোৎপাত নিয়ন্ত্রণেে নাই, ধনি দরিদ্র হওয়া ও তার নিয়ন্ত্রণে নাই, ইজ্জত-বেইজ্জতিও তার নিয়ন্ত্রণে নাই, মশা-মাছিকে যেমন না খেয়ে থাকতে হয় না, ৫০০ টন ওজনের তিমি ৭ টন ওজনের হাতি কেও না খেয়ে থাকতে হয় না।

মানুষের তখন ধর্ম না খোঁজেই একজন মালিক কে বিশ্বাস করেন। তারা মানেন, একজন কেউ আছেন, এমনি এমনি সব হওয়ার কথা নয়।তারপর তারা যখন দেখে একজন নবী এসেছে, সৃষ্টিকর্তার সংবাদ দিচ্ছেন, বলছেন সবকিছুর মালিক তিনি,তখন তাদের আটকাবেন কি করে? উদাহরণ দেই।

ইসলামের নবী মুহাম্মদ সা. এর কথাই ধরা যাক, তিনি বললেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমিই তোমাদের হাসাই,আমি কাদাই, আমি বাঁচাই আমি মৃত্যূ দেই’ সুরা কামার- ।

‘আমি তোমাদের ছেলে সন্তান দেই, আমি কন্যা সন্তান দেই, আমি উভয়সন্তান দেই,আমি বন্ধা করি...’ সুরা শুরা। মানুষ তখন বলে, তাইতো খুঁজছিলাম। তারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে, ধর্ম গ্রহণ করে।নাস্তিক্যবাদ এখানে টেকে না।

হকিংয়ের কথা বাদ দেই, অন্যান্য বিজ্ঞানীরা কি বলে দেখুন, ওয়াশিংটন এর ‘ডিসকভারি ইন্সটিটিউট ’ এর বিজ্ঞানীদের মূল্যায়ন দেখুন, তারা বললেন,

Intelligent design refers to a scientific research program as well as a community of scientists, philosophers and other scholars who seek evidence of design in nature. The theory of intelligent design holds that certain features of the universe and of living things are best explained by an intelligent cause, not an undirected process such as natural selection. Through the study and analysis of a system’s components, a design theorist is able to determine whether various natural structures are the product of chance,

natural law, intelligent design, or some combination thereof. Such research is conducted by observing the types of information produced when intelligent agents act. Scientists then seek to find objects which have those same types of informational properties which we commonly know come from intelligence.

Intelligent design has applied these scientific methods to detect design in irreducibly complex biological structures, the complex and specified information content in DNA, the life-sustaining physical architecture of the universe, and the geologically rapid origin of biological diversity in the fossil record during the Cambrian explosion approximately"

কথাগুলোর সারমর্ম হল, ‘বিশাল বিশ্ব ভ্রমান্ডের এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা এত বিজ্ঞানভিত্তিক ডিজাইন, অনন্ত- অসীম কারো সুক্ষ হাতের সুনিপুন কারোকার্য ছাড়া কিছুই নয়। তারা বলছেন, একজন উচ্চ বুদ্ধিমান ডিজাইনার এর কাজ হয়ত বিশ্ব ভ্রমান্ডের সবকিছু।’

তাহলে তারা স্বীকার করলেন একজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজাইনার আছেন। আল্লাহ নামটি নাইবা বললেন।

ডিজাইন নিয়ে একটু বলেই শেষ করব। বিমান আকাশে উড়বে- তাই তার পাখা, বডি, চাকার একরকম ডিজাইন হয় যাতে বাতাসের মধ্যে কমপ্রেশন তেরি করে পাখায় ভর দিয়ে আকাশে উড়তে পারে ।

জাহাজ পানিতে চলবে, তাই তার তলদেশ, ইমপলার, বডির ডিজাইন একরকম করা হয়েছে।গাড়ি রাস্তায় চলার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়,পাকা রাস্তার ও রেল লাইন এর ও ডিজাইন আছে, ঘর বাড়ি,মেশিনপত্র, কাপড়চোপড় অর্থাৎ মানুষের ব্যবহার্য সবকিছুই ডিজাইন ছাড়া করা হয় না। এ সবই জড় পদার্থের ডিজাইন।

মানুষের পক্ষে কোন জীবের ডিজাইন করা সম্ভব হয় নাই। এক কোষের প্রাণী এমিবা থেকে ৫০০ টনের তিমি পর্যন্ত কোন প্রানীর ডিজাইন কোন বিজ্ঞানীী করতে পারেনি, পারবেও না।

একমাত্র সৃষ্ঠিকর্তার পক্ষেই সম্ভব। তিনিই মানুষে, পশু পাখি সহ সকল প্রানী এবং এই বিশ্ব ভ্রমান্ডের একমাত্র একক ডিজাইনার।

আল কুরানের সুরা ইনফিতরে বলেছেন, ‘আল্লাজি খালাক্বাকা,ফাসাওয়াকা ফাআদালাক’ অর্থাাাৎ- ‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর যিনি তোমাকে সোজা সুঠাম করেছেন,এবং তোমাকে সুসামঞ্জস্য করেছেন।’

ডিজাইনের বিষয়ে এর চেয়ে বড় কথা আর কিছুই হতে পারে না। সেরা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, লুইস প্রাস্তর, থমাস এডিসন, মাইকেল ফেরাডে, আরকিমিডিস, আলেকজন্ডার গ্রাহাম, ফ্রান্সিস, জেমস, পল ডিরাক, জুহান কেপলার, এনটনি, নিউটন প্রভৃতি বিজ্ঞানীগণ বহু মাথা ঘামিয়েছেন।

স্বীকার করেছেন কেউ একজন আছেন ‘High level intelligence Designer’ বলতে দ্বিধা নেই তিনিই আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়লা।

দাড়ি-টুপিতে ভ্রূ কুঁচকান, স্যুট-টাইয়ে সালাম জানান, এ মানসিকতা বদলান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ