আব্দুল্লাহ আফফান: সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি। যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
১০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল বনের বাঘ খোঁজা আর খড়ের গাদায় সূই খোঁজা একই কথা। তাছাড়া বাঘের ডেরায় গিয়ে বাঘ গণনা, বিড়ালের গলায় ঘন্টা লাগানোর চেয়েও কঠিন।
কিন্তু এ কাজটিই জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (United Nations Development Programme) বা ইউএনডিপি (UNDP) এর সহায়তায় বাংলাদেশ বন বিভাগ বাঘ গণনা করে থাকে।
প্রতি বছরই বাঘ গণনা হয়ে থাকে। বাঘ গণনার কথা শুনলে প্রথমে মাথায় আসে বাঘ গণনা আবার কিভাবে সম্ভব।
এক সময় পৃথিবীতে অনেক বাঘ থাকলেও এখন বিভিন্ন কারণে কমছে। আর দিন দিন তা কমেই চলছে। তাই বাঘ রক্ষা, বাঘ প্রজনন বৃদ্ধিসহ চলে বাঘ নিয়ে বহু কর্মসূচি। এ নিয়ে আছে কাজ করছে বেশ কিছু সংগঠন। যারা সবসময় বাঘ নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে।
বাঘ, সিংহ এক জাতের হলেও তাদের স্বভাব কিন্তু এক নয়। সিংহ বড় দলে থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু বাঘ একাই নিদির্ষ্ট এলাকাজুড়ে থাকে। যাকে বলা হয় তার টেরিটরি। সেটি ২৫ থেকে ১০০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাঘ ওই এলাকা থেকে শিকার ধরে।
বহু আগ থেকে যেসব পদ্ধতিতে বাঘ গণনা হয়ে আসছে, তার মধ্যে প্রাচীন পদ্ধতি হলো, পাগমার্ক।
১৯৭০ সালে ভারতের এক বনরক্ষক ধারণা করলেন, প্রতিটি বাঘের পায়ের ছাপ বা ‘পাগমার্ক’- ই আলাদা। বাঘ সাধারণত নিদির্ষ্ট ট্রেইল ধরে চলাচল করে। সেসব অঞ্চলে পায়ের ছাপ গণনা করা হয়। এ পদ্ধতিকে বলা হয় পাগমার্ক সেনসাস।
খাল সার্ভে পদ্ধতি: ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ড ট্রাস্ট মিলে খাল সার্ভে নামে আরেকটি পদ্ধতি চালু হয়েছে। সুন্দরবনের ঘন গাছপালা, চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ধারালো শ্বাসমূল মিলে এ বনকে এতই দুর্গম করেছে যে বনের মধ্যে ঢুকে পায়ের ছাপ সংগ্রহ অথবা সবখানে ক্যামেরা লাগিয়ে আসা, কোনোটিই আসলে পুরো বনে সম্ভব নয়।
সুন্দরবনের জন্য তাই একটা নতুন নিয়ম তৈরি করা হলো, যাকে বলা হয় ‘খাল সার্ভে’। ছোট ছোট নৌকায় করে বাঘ গোনা বাহিনী ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনে জালের মতো বিছিয়ে রাখা অসংখ্য খালে, আর খালের ধারের বাঘের পায়ের ছাপ গুণে ফেলে তারা।
ক্যামেরা ট্র্যাপ পদ্ধতি: বাঘ সাধারণত নিদির্ষ্ট ট্রেইল ধরে চলাচল করে। যেসব জায়গায় বাঘ পানি খেতে যায় সেসব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়া হয় বিশেষ ধরনের ক্যামেরা।
ক্যামেরার সামনে যা কিছুই নড়াচড়া করবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারই ছবি ধারণ করবে। বাঘের ডোরা কাটা দাগের ধরণ আঙ্গুলের ছাপের মতোই স্বতন্ত্র। তাই বাঘের ডোরা কাটা দেখে প্রতিটা বাঘকে আলাদা করা যায়।
এভাবেই সারা বিশ্বে প্রতি বছর গণনা করা হয় বাঘ। সুন্দরবনে সাম্প্রতিক সময়ের গণনা অনুযায়ী বাঘ আছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টি।
যে কারণে জার্সিতে বাঘের ছবি ঢেকে রাখেন মাহমুদুল্লাহে
আরআর