শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রকাশ্যে তাবলিগের বিভক্তি; নিরসনের পথ কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হামিম আরিফ: ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও সহনশীলতার ধর্ম। নবী করিম সা. সাহাবাদের জীবন ইতিহাসে হাজারো সম্প্রীতির উদাহরণ আছে। বর্তমান বিশ্বে ইসলাম-মুসলমান ও মহানবীর আদর্শের পতাকাবাহী হজরত উলামায়ে কেরাম। সারা বিশ্বে তাবলিগও একটি শান্তিপ্রিয় দল।

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাবলিগের বিষয়ে চরম অস্থিরতা চলছে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিতর্কিত মতামতকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে তাবলিগ জামাতের চলমান দ্বন্দ্ব। আসছে হাতাহাতি ও রক্তারক্তির খবরও। শত বছর ধরে চলমান এ দীনি দাওয়াতে এমন সমস্যা হতবাক করছে সবাইকেই। তারা এর থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছেন।

তবে দীর্ঘ দিন ধরে উলামায়ে কেরামের আন্তরিক প্রচেষ্টাতেও সম্ভব হয়নি সুষ্টু সমাধান। আসলেই কি এ সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই? এভাবেই কি দীনি এ প্লাটফরম বিভক্ত হয়ে পড়বে? এ নিয়ে কথা হয় দেশের শীর্ষ তিন আলেমের সঙ্গে।

কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম আল্লামা আশরাফ আলী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‍কুরআন হাদিসের খেলাফ যিনি বলছেন তাকে তো মানা যায় না। উলামায়ে কেরাম এ কারণেই সাধারণ মানুষকে সাবধান করেছেন। সতর্ক করছেন। তাদের কথা মেনে চললে সবার জন্যই ফায়দা।

তিনি বলেন, দীনের কাজের রাহবারি উলামায়ে কেরামেরই হাতে। তারাই নবীর ওয়ারিস। এ জন্য আমি সবাইকে বলবো, উলামায়ে কেরামের পরামর্শে কাজ করুন। তাদের অনুসরণ করুন। তারা যেটি বলছে তাতেই কল্যাণ। এটিই সমস্যা নিরসনের পথ।

তাবলিগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসবের উপায় হিসেবে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার যাত্রাবাড়ীর মুহতামিম, গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমার মতে দারুল উলুম দেওবন্দের মাসলাক মেনে তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা হওয়া উচিত কৌশলগত অবস্থান থেকে।

চলমান যে দ্বন্দ্ব শক্তিপ্রদর্শনে রূপ নিয়েছে এটি কিভাবে নিরসন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তো আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। দীনি কাজের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামের জন্য ক্ষতিকর। এর মাধ্যমে ইসলামের শত্রুরা ফায়দা নেবে। এ জন্য যে কোনো মূল্যে এটি বন্ধ করা জরুরি।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের ভূমিকা বেশি প্রয়োজন। তারা যেন সহনীয়তার সঙ্গে এ বিরোধ নিরসনে ভূমিকা রাখেন।

এখন তো দুটি গ্রুপ দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে, দুই পক্ষের প্রতি আপনার বিশেষ বার্তা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো চাই পক্ষ একটিই থাকুক, দুটি না হোক। আমি সবাইকে বলতে চাই, দীনের কাজ সবাই করুন মিলে মিশে করুন। কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে সেটি সুরাহা করে তারপর কাজ করুন।

তিনি বলেন, তাবলিগ একটি পরিপূর্ণ দীনি জামাত। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে অনেক কাজ হয়েছে। এতে কোনো ফাটল হোক, দ্বিমত তৈরি হোক আমি চাই না। কারও চাওয়া উচিত নয়। এ জন্য দুই পক্ষকেই বসে বিষয়টির সুরাহা করতে হবে।

তাবলিগে চলমান পরিস্থিতি নিরসন করে শান্তি বজায় রাখতে কী করণীয় জানতে চাইলে জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ আওয়ার ইসলামকে বলেন, শান্তি বজায় রাখা তো মানুষের নিজের কাছে। কেউ যেন কারও কাজে বাধা না দেয়। সবাইকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে এটা যেন সামনে থাকে। একে অন্যের প্রতি যেন সহনশীল হয়। এটিই শান্তির উপায়, সহনশীল না হলে শান্তির পথ নেই।

বিভিন্ন জায়গায় হাতাহাতি ও উত্তপ্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এ থেকে ফিরে আসার উপায় কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীনের কাজ যারা করি তারা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। মতপার্থক্য আমাদের ভেতর থাকতেই পারে কিন্তু তাই বলে অন্যের প্রতি হাত তুলব সেটা তো কাম্য নয়।

তিনি বলেন, দীনের কাজে বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও শক্তি প্রয়োগের অনুমতি শরিয়ত দেয় না। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়াও যদি দেখি সেখানেও স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে। অবস্থা জানান দেয়া হয়েছে। সে ফতোয়াতেও কাউকে তার কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখতে বলা হয়নি। আমার মনে হয়, বাড়াবাড়ি ছেড়ে দিলেই এ সমস্যা সমাধান হবে।

বাংলাদেশে জমহুর উলামায়ে কেরাম এক হয়ে বলেছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে এ মুহূর্তে অনুসরণ করা যাবে না, এরপরও তার অনুসরণ তো সঠিক নয়- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদি মানুষ মানে ভালো না মানলে তো কিছু করার নেই। উলামায়ে কেরাম দারোগা নন। মানুষ যদি ভালোটা মানে তাহলে ভালো না মানলে সে বিচার আল্লাহ করবেন।

এখন মসজিদে কোথাও কোথাও উলামায়ে কেরামকে মারপিট করা হচ্ছে, তাদের নিয়ে ঠাট্টাও করা হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে দিনদিন হিংসা বাড়বে, লৌকিকতা বাড়বে। পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ঘৃণা করবে।

এ অবস্থায় উভয়ের প্রতি আপনার বার্তা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই নিজ নিজ জায়গায় নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে কাজ করুক। যেভাবে ইন্ডিয়া, পাকিস্তানে হচ্ছে। কেউ কারও ওপর রেষারেষিতে যাচ্ছে না। এখানেও এভাবে চলতে পারে।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ