শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


জাবিতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য দূর হবে কবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সবচে দৃষ্টিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি। পাশাপাশি আয়তনে দেশের দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। সবচে বেশি যায়গা নিয়ে প্রথমে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

জাহাঙ্গীরনগরের আয়তন প্রায় ৬৯৭ একর। পুরোটাই সবুজে সবুজে ঢাকা। পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ফুল, ফল আর সচ্ছ পানির লেক। ১৯৭১ সনে প্রতিষ্ঠিত এবিশ্ববিদ্যালয়ে লেকে মাঝে ঝলমল করে নানারকমের শাপলা ফুল। শীতকালে অতিথি পাখিতে ভরে যায় পুরো এরিয়া।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় অবাঞ্চিত একজন

ঢাবির পর দেশের ছাত্রদের দ্বিতীয় স্বপ্ন থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে অনেকের কাছে প্রথম এবং একমাত্র স্বপ্নই থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এ কারণে প্রায় প্রতিবারেই ফর্ম বিক্রিতে শীর্ষে থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়। নানান জায়গা থেকে ছুটে আসে পরীক্ষার্থীরা। তবে খুব কম মানুষের ভাগ্য জুটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ।

কারণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছয় ধরনের কোটায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রতি বিভাগে চারটি আসন রয়েছে। পোষ্য কোটায় (শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান) কোনো সীমা নেই।

এ ছাড়া খেলোয়াড় কোটা, সংস্কৃতি কোটা, প্রতিবন্ধী কোটার প্রতিটিতে ১০টি করে আসন রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ব্যতিক্রমী একটি কোটা। আর তা হলো উপাচার্য কোটা।

প্রতিবছর উপাচার্য তার নিজ ক্ষমতাবলে ২০টি আসনে পছন্দের শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারেন।

জানা গেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি কোটায় ভর্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় নির্ধারিত পাস (৪০ শতাংশ) নম্বর পেতে হয়।

নানাম কোটা ফিলাপের পর এই অল্পসংখ্যক সিটের জন্য লড়াই করতে হয়ে সব শিক্ষার্থীর। এ নিয়ে চলে ভর্তিযুদ্ধ। তবে এই ভর্তিযুদ্ধে কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে সমান সুযোগ পান না আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। জাবির কাছে কেমন যেন অমূল্য আলিয়া মাদরাসার সার্টিফিকেট।

জাবি প্রশাসন আলিয়া মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষা ও ইত্যাদি বিষয়কে একত্রিত করে তাদের জন্য অল্পকিছু সিট রাখা হয়েছে। যা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কিছুটা ভালো সুযোগ পেলেও জাবি প্রশাসন এ বিষয়ে খুবই কার্পণ্য মনভাব পোষণ করে। যার ফলে হাজার হাজার মাদরাসা শিক্ষার্থীর একপ্রকার অধরাই রয়ে যায় ভর্তির সুযোগ। ভাগ্যক্রমে সোনার হরিণ দেখা মিলে কিছু শিক্ষার্থীদের কপালে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর ডা. আব্দুল লতিফ মাসুমের সাথে যোগাযোগ করে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, এর কারণ হচ্ছে কলা অনুষদের পক্ষ থেকে তারা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার্থীদের কাতারে ফেলছেন এবং তারা এমন কিছু বিধি নিষেধ ও কিছু নিয়ম কানুন করেছেন যাতে মাদরাসার ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ কম পায়।

ব্যক্তিগতভাবে এটাকে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন ব্যক্তিগতভাবে তো আর কিছু হয় না! তবে এটা মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সাথে চরম অন্যায় হচ্ছে বলে আমি মনে করি।

তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থীর জাহিদ ইস্কান্দার জাবিতে বৈষম্যের বিষয়ে কিছুটা আক্ষেপের সাথে বলেন, ছোটবেলা থেকে আশা ছিল জাবিতে পড়বো। কিন্তু আমার এই স্বপ্ন পূরণ হলো না। কারণ আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা না। আমি সাধারণ পরিবারের ছেলে। জাবি উপাচার্য আমার আত্মীয়ও না। তাই জাবিতে পড়ার সুযোগ হলো না।

তবে বিশ্বাসের সাথে একথা বলতে পারি, যদি এতোগুলো কোটা না থাকতো তাহলে চাঞ্চ পেতাম। বুদ্ধি দিয়ে লড়াই করা যায়। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা যায় না।

দেশে এই প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রতিবন্ধী প্রার্থী

যোগ্যতার বলে যে কয়জনের কপালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে তাদেরও পড়তে হয় বৈষম্যের মাঝে। এমনটাই বললেন জাবির আন্তর্জাতিক বিভাগের ছাত্র সুলতান মাহমুদ।

তিনি বলেন, আমি ভর্তি পরীক্ষায় ৪৭ তম হয়েছিলাম। চয়েজ দিয়েছিলাম, যথাক্রমে ইংলিশ, আন্তর্জাতিক রিলেশন ও বাংলা। আমার রেজাল্ট অনুযায়ী অনায়সেই আমি ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়ার সুযোগ পাই। কিন্তু একমাত্র মাদরাসা শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে আমার কপালে জুটে ‘বাংলা’।

তারপর আবেদন করে আন্তর্জাতিক বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাই। আমি ৪৭ হওয়ার পরেও একমাত্র মাদরাসার ছাত্র হওয়ার কারণে আমাকে এই বৈষম্যর শিকার হতে হয়।

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়। এখনো যদি বুঝে বা জানে আমি মাদরাসা থেকে এসেছি, তাহলে আমার দিকে বাঁকা দৃষ্টি দেয়।

অবশ্য কেউ কেউ ভিন্ন অভিমতও প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে বর্তমান চুয়েটের (চট্টগ্রাম প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র আহসানুল ইসলাম ইমন বলেন, আসলে জাবি শায়ত্ব শাসিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার কর্মকর্তারা এধরনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে। তবে কোটা যেন খুব বেশি না হয় এ ব্যপারেও খেয়াল রাখা জরুরি। কোটায় সংস্কার প্রয়োজন।

তবে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর মতামত, দেশে মেধাভিত্তিক সব কার্যক্রম পরিচালিত হোক। তাতেই দেশ ও জাতির উন্নতি হবে। কোটায় অমেধাবীদের উচ্চপদে তুলে দিয়ে জাতির ভবিষ্যত যেন নষ্ট করা না হয়।

আর মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বেলায় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি দূর হয়ে যাক আপাতত এমনটাই সবার চাওয়া।

এসে গেল মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ