শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় ইসলামের ফায়দা হবে কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম

সম্প্রতি সরকার বিরোধী নবগঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকার পাতা ভারি হয়ে আছে। সে ঐক্যে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের আগ্রহে আরো বড় করে দেখছে বাঙলার জনগণ।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসাতেও বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন আলোচনায়।

খেলাফত ও রাজনীতি ইসলামী দৃষ্টিকোণ

কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে দলটি জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে আগ্রহী থাকলেও ধীরে ধীরে এই ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বিএনপি।

আবার কয়েকটি ইসলামি দলও জাতীয় এ ঐক্যের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের ২২তারিখ সম্মেলনে যোগ দিয়েছে।

এদিকে জাতীয় ঐক্যের মূলে বাম দলের প্রভাব থাকায় ইসলামি দলগুলো তাদের সঙ্গে ঐক্য করায় আলোচনা সমালোচনো দেখা দিয়েছে জনসাধারণে। ছড়িয়ে পড়েছে নানা গুঞ্জন।

জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের এ মুসলিম দেশে আসলেই কী ইসলামের কোনো লাভ হবে। জাতীয় ঐক্য ইসলামের পক্ষের শক্তি হবে না বিপক্ষের? এসব নিয়ে অাওয়ার ইসলাম কথা বলেছে কয়েকজন বিশিষ্ট আলেমের সঙ্গে।

বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার প্রধান ও শোলাকিয়া ঈদগা’র ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে জাতীয় ঐক্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, আমাদের দেশে আমরা ইসলামের জন্য কিছুই করতে পারছি না। জনগণের ইসলামের প্রতি আগ্রহ আছে অনেক। কিন্তু আমরা তাদের আগ্রহ কাজে লাগাতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা।

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমি মনি করি ইসলামের কোনো লাভই হবে না। আজ আমরা এককভাবে সংসদ নির্বাচন করছি। ভাবছি যে এর মাধ্যমে আমরা ইসলামের অনেক কাজে আসবো। কিন্তু মনে রাখতে হবে ইতোপূর্বেও যারা সাংসদ হয়েছিলো আলেমদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেনি।

নিজেদের পরিচিতি ও ব্যক্তিগত কিছু ফায়দা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেননি তারা। এখন আবার জাতীয় ঐক্য আসলো। তাদের তো গোড়াতেই কোনো ইসলাম নেই।

বরং ড. কামাল ও তার মেয়ে কাদিয়ানি আন্দোলনের সময় তাদের পক্ষের শক্তি হয়ে কাজ করেছে। তাদের মত মানুষ থেকে কী আশা করা যায় ইসলামের।

আমি অবাক হই মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমির মত মানুষ এমন কাদিয়ানিদের সহযোগিতা ভাবাপন্ন মানুষের সঙ্গে গিয়ে জোট করে কিভাবে।

মাওলানা মাসউদ ক্ষোভ নিয়ে আরও বলেন, আমি শাহাবাগে যাওয়ায় নাস্তিক বলা হয়েছে। এখন যারা কাদিয়ানিদের সঙ্গে গিয়ে ঐক্য করেছেন তাদের তো কাদিয়ানি বলতে হবে।

যাই হোক এমন কাদিয়ানিদের থেকে ইসলামের কোনো খেদমত বা ইসলামের কোনো লাভ আমি আশা করতে পারি না।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহকারী মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিনকও কাছাকাছি মন্তব্য করলেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বিষয়ে।

তিনি বলেন, বর্তমানের জাতীয় ঐক্য ইসলামের পক্ষে দেখছি না। আর ভবিষ্যতেও যে তারা ইসলামের জন্য কিছু করবে এমন লক্ষণও নেই।

বিএনপির মত দল এখন  ঐক্যের সঙ্গে থাকলেও কতদিন থাকবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। বিএনপি ছাড়া জোটটিতে বাকি যে দলগুলো রয়েছে তারা মূলত বামপন্থী, ইসলাম নিয়ে তাদের চিন্তা নেই।

চালু হয়েছে কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

তবে বিএনপির সঙ্গে থাকার কারণে যে ইসলামি দলগুলো তাদের সঙ্গে রয়েছে তাদের ব্যাপারে ড. কামাল যে বক্তব্য দিয়েছেন এতে বুঝা যায় তারা কোনো ইসলামি দলকে তাদের সঙ্গে যাওয়াকে পছন্দ করেন না।

ড. কামালকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো ইসলামি দল আপনার সঙ্গে আসছে তাদের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামি কয়েকটি দল আসছিলো ঐক্য করতে, বাকি আমি তাদের ব্যাপারে কিছু জানি না।

এর থেকেই বুঝা যায় জাতীয় ঐক্যে ইসলামি দলগুলোর কতটা অবস্থান আর সম্মান আছে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সেক্যুলারপন্থীরা থাকায় ইসলামের উপকার আশা করা বোকামি মনে করেন ইসলাম আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

নিজেদের কথা উল্লেখ করে প্রথমেই বলেন, আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করি, দল প্রতিষ্ঠার রাজনীতি নয়।

আমরা কোনো জাতীয় ঐক্যে নাই। আমরা ইসলামের জন্য কাজ করি। জাতীয় ঐক্যে ইসলামের কোনো লাভ আছে কী নাই এ বিষয়ে আসলে যারা জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদেরই জিজ্ঞেস করা উচিত।

জাতীয় ঐক্যের যারা মূলে আছে তারা ইসলামের পক্ষে কোনো দিন কাজ করেনি। আর জাতীয় ঐক্যের পরে যে তারা ইসলামের কাজে আসবে এমন তো ভাবাই যায় না।

তিনি বলেন, বিএনপি ইসলামি দল নয়। তারা তাদের দলের স্বার্থে ঐক্য করতে পারে কিন্তু ইসলামের উপকার হবে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এমনটা অসম্ভব বললেই চলে।

আকেরকটা বিষয় হলো জাতীয় ঐক্যে সমাজতন্ত্রীরাও আছে আবার আছে সেক্যুলাররা। তাহলে তাদের থেকে ইসলামের উপকার আশা করা তো বোকামি।

আমরা মনে করি তাদের মাধ্যমে ইসলামের উপকার থেকে ক্ষতিটাই বেশি হবে।

জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি রাজনীতি বা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে এমন প্রশ্ন করলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ কিছু বলতে রাজি হননি।

এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়া বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মাত্রই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠন হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও ভেবে চিন্তে মতামত দেয়া লাগবে।

তবে একই বিষয়ে ভিন্ন মতামত দিয়েছেন সেদিন ঐক্যের মঞ্চে থাকা খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের

বলেন, ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জোট কোনো ইসলামের বিষয় নয়। আমরা সেখানে তাদের পাঁচ দফা দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করার জন্য গিয়েছিলাম। কারণ, তারা যে দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে আমাদের রাজনৈতিক সংগঠনেরও একই দাবি।

তাছাড়া এটা ইস্যুভিত্তিক একটি আন্দোলন, কোনো আদর্শিক সমঝোতা নয়। আমরা তাদের অদর্শের সাথে আপস বা সহমত পোষণ করে আসনি। তাই এটা নিয়ে সমালোচনার কিছু দেখি না।

এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় ইসলামি দলগুলো নিয়ে অনেকেই তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি হিসেবেই ইসলামি দলগুলো সেখানে গেছে। এককভাবে কোনো ইসলামি দলকে তাদের মঞ্চে দেখা যায়নি। তাই বিষয়টিকে ভিন্ন এজেন্ডা হিসেবে দেখার আহ্বান করেছেন তারা।

তবে অনেকের প্রতিক্রিয়া, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেখানে ইসলামপন্থীদের বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন ছিল, সেটা না হয়ে একেকটি দল একেক গোষ্ঠীর পেছনে ছুটছেন যা ভবিষ্যতে অকল্যাণই বয়ে আনতে পারে বলে তাদের মত।

আগামী সংসদে দেখা যেতে পারে ডজনখানেক আলেম সাংসদ

-আরআর

আপনার ব্যবসার হিসাব এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ