শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘আমরা সব সময় চেয়েছি শেখ হাসিনাকে ইসলামের কাজে লাগাতে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। একে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে সব দল। এলাকায় জনসভা ও মতবিনিময়সহ নানা কাজে সক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জোটগঠন ও দলবদলের খেলাও। কেউ বা রাজনীতির মাঠে না থাকলেও অংশ নেয়ার কথা ভাবছেন নির্বাচনে।

রাজনীতি ও নির্বাচনের এ হাওয়া বইছে ইসলামি দল ও আলেম উলামাদের মধ্যেও। এমন অনেক খবর উঠে আসছে যা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে প্রতিমুহূর্তে।

তেমনই একটি খবর দেশের বিশিষ্ট আলেমে দীন, গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমীন নৌকা প্রতীকে নড়াইল ১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এ নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা শামসুল হক ফরিদীরপুরী রহ. এর ছেলে তিনি। ফরিদপুরী রহ. জ্ঞান ও হিকমা দিয়ে হাজারও মানুষের পথ নির্দেশক বনেছিলেন। তার পথ ধরে মুফতি রুহুল আমিনও কাজ করছেন দীন ও ইসলামের জন্য।

আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচনসহ রাজনীতির অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের চিফ রিপোর্টার আতাউর রহমান খসরু।

আওয়ার ইসলাম : স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিচ্ছেন। সংবাদের বাস্তবতা কতোটুকু?

মুফতি রুহুল আমীন : মানুষ আমাকে এবার নির্বাচনে নামিয়েই দিলো। জনগণের প্রত্যাশা আমি উপেক্ষা করতে পারছি না। তাদের ভাষায় আমরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও নিপড়ীত। আমাদের পাশে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে। তাদের অনুরোধে আমি রাজিই হয়ে গেলাম।

আওয়ার ইসলাম : আপনার প্রকাশ্য কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা আমরা জানি না। হঠাৎ নির্বাচনে করে কতো সাফল্য আশা করেন?

মুফতি রুহুল আমীন : আমি নির্বাচন করছি না, জনগণ আমাকে করাচ্ছে। তাদের অনুরোধে আমি করছি। সুতরাং তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে এটাই আশা করছি। এবং সেটা করছেও।

সেখানে যা হচ্ছে জনগণের পক্ষ থেকেই হচ্ছে। ইতোমধ্যে সেখানে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে।

আমি যে আসনে (নড়াইল-১) নির্বাচন করবো সেখানে আমাদের যাতায়াত ও যোগাযোগ আছে। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালো। আল্লাহ চাইলে ভালো কিছু হবে।

আওয়ার ইসলাম : নির্বাচনের ইচ্ছে যখন করলেন। প্রস্তুতি কেমন?

মুফতি রুহুল আমীন : তাকবিরে তাহরিমা বললে নামাজের অন্যান্য বিধানগুলো সম্পন্ন করতে হয়। নির্বাচনের তাহরিমা যখন বেঁধেছি প্রস্তুতি তো নিতেই হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

গণসংযোগ ও এলাকার মানুষের ভালো-মন্দের খোঁজ নেয়ার বিষয়গুলো আগ থেকেও ছিলো। এখন তা আরও গোছালো ও জোরদার হবে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি যে আসনে নির্বাচন করবেন। সেখানে সংখ্যালঘুদের বড় একটা ভোট ব্যাংক আছে। তাদের ব্যাপারেও কি আপনি আশাবাদী?

মুফতি রুহুল আমীন : তারাও স্বতঃস্ফূর্ত। আশাঙ্কার কিছু নেই। তাদের কেউ কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করছে।

আওয়ার ইসলাম : অনেকেই আপনার নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করাকে ভালো চোখে দেখছে না।

মুফতি রুহুল আমীন : এটা সত্য প্রতীক হবে নৌকা। কিন্তু নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের দুটি অর্থ। দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া অথবা জোটের অংশিদার হিসেবে প্রতীক পাওয়া। এখানে কোনটা হবে তা স্পষ্ট করা হয় নি। স্পষ্ট হওয়ার পর যেসব কথা হবে তার উত্তর আমি দিবো। এখন এর চেয়ে বেশি কিছু বলবো না।

আওয়ার ইসলাম : নৌকা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলে কি তাদের ব্যবস্থাপনায় করবেন? নাকি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়?

মুফতি রুহুল আমীন : সমন্বিতভাবে করলেই তো ভালো হবে। সবাই মিলে ঝুলে করলে সুফল বেশি পাওয়া যাবে। আমি সবাইকে সাথে নিয়েই এগুতে চাই।

আওয়ার ইসলাম : নৌকার অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আপনার জন্য বাধা হবে না তো? আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া কী?

মুফতি রুহুল আমীন : তাদের অনেকেই আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। মনে হয় না নৌকার আর কোনো প্রার্থী থাকবে। তবে একটি দলীয় কাঠামোয় অনেক ধরনের লোক থাকতে পারে। তাদের মতামত স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন হতে পারে। জনগণের কথা হলো যে নৌকা প্রতীক পাবে তারা তাকে ভোট দেবে।

আওয়ার ইসলাম : তার মানে কী আপনি হাই কমান্ডের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন?

মুফতি রুহুল আমীন : এটা বলার বিষয় না। এটা বলা যাবে না।

আওয়ার ইসলাম : আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনপ্রণালী বা সংবিধানে দলটিকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। যাকে উলামায়ে কেরাম ধর্মহীনতা বলেন …!

মুফতি রুহুল আমীন : এটা ভুল। ভুল ব্যাখ্যা দিলে তো হবে না। আপনি তো গোড়ায় চলে গেলেন। যারা ধর্মনিপেক্ষতার কথা বলেন তাদের বলবো, ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলটি কেনো হেফাজতে ইসলামের ঈমানি দাবিগুলো মানলো না। তারা স্পষ্ট বলেছে, আমরা এসব দাবি বাস্তবায়ন করবো না।

আমাদের মনে রাখতে হবে এটা ইসলামি রাষ্ট্র না। আমরা সবাই মুমিন কিন্তু ইসলামের কতোটুকু মানতে পারছি? শতকরা হারে তা শূন্যের কোঠায়। ছাড় তো দিতেই হচ্ছে। একটি দল যদি বলে আমরা ইসলাম বিরোধী কোনো আইন করবো না সেটা কম কথা নয়। অনেক বড় বিষয়।

যারা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষা ধর্মহীনতা তারা এর ব্যাখ্যা জানেন না, ভাষাও জানেন না। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো লুগাতে (অভিধানে) ধর্মনিরপেক্ষার অর্থ ধর্মহীনতা লেখা নেই।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কোনটা ইসলামি। যে যার সাথে যাচ্ছে তাকেই মন্দের ভালো বলছে। ব্যাপারটা এমনই। বরং আমরা তাদের সাথে থাকলে তারা আমাদের কথা শুনবে এবং কথা বুঝবে।

আওয়ার ইসলাম : আমি বলতে চাচ্ছিলাম, অনেকেই একটি ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসী দলের প্রতীকে নির্বাচন করলে আপনার ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মুফতি রুহুল আমীন : আমার এমন কি ইমেজ আছে যা নষ্ট হবে। থাকলেই না নষ্ট হবে। আমার এমন কোনো অবস্থান নেই যা নষ্ট হতে পারে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি বলছিলেন, আমরা তাদের সাথে থাকলে তারা আমাদের কথা শুনবে এবং কথা বুঝবে। এ ব্যাপারে আপনি কতোটা আশাবাদী?

মুফতি রুহুল আমীন : দেখেন! নামাজের বাইরে থেকে লোকমা দিলে (ভুল ধরিয়ে দিলে) সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। নামাজে থেকে নামাজের ভুল সংশোধন করতে হয়। তাদের থেকে দূরে থেকে বা তাদের সাথে না মিশে ভালো কথা বললেও তারা গ্রাহ্য করবে না।

আলেম হিসেবে আমাদের কাজ ভালো কথা বলে যাওয়া। ভালো-মন্দের পার্থক্য স্পষ্ট করা। জোর করে চাপিয়ে দেয়া নয়। কানে ভালো কথা পড়তে থাকলে এক সময় ভালো ফল আসবেই ইনশাআল্লাহ!

ব্যবসার নিয়ে জটিলতার দিন শেষ – বিস্তারিত জানুন

আওয়ার ইসলাম : আমরা যতো দূর জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার একটা ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে আপনাদের পরিবারের একটা শ্রদ্ধা-ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। আপনি কি সেটার ইতিবাচক ব্যবহারের কথা বলছেন?

মুফতি রুহুল আমীন : সম্পর্ক বলেন আর সংশ্লিষ্টতা বলেন আমরা সব সময় চেয়েছি তাকে দীনের কাজে ও ইসলামের কাজে ব্যবহার করতে। আল হামদুলিল্লাহ! কখনো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করি নি।

আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন, আমি আমার মাদরাসার ব্যাপারেও কখনও কোনো কিছু চাই নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন, রুহুল আমিন কখনও চায় না, মাদরাসার কথা বলে না।

আওয়ার ইসলাম : আপনি জোটের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। সেটা কি খালেমুল ইসলাম জামাতের …

মুফতি রুহুল আমীন : যখন হবে তখন বোঝা যাবে। জন্মের আগে কিছুই বলা যায় না। সময় মতো সব বলবো।

আওয়ার ইসলাম : আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের কাজে নামছেন কবে?

মুফতি রুহুল আমীন : তফসিল ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তার আগে সবকিছুই ভূমিকা। ভূমিকা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ছোট আকারে হলেও শুরু হয়েছে।

আরও  দুটি প্রয়োজনীয় সাক্ষাৎকার

‘বর্তমানে ইসলামিক স্কুল নির্মাণ মসজিদ নির্মাণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ’
তালাকের মহামারি; সমাজের দুই বাহুর ভাবনা!

-আরআর


সম্পর্কিত খবর