শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

লাইভে নাস্তিকদের জঘন্য তৎপরতা রুখবেন কী করে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও ‍কুরআন গবেষক

লন্ডন ও জার্মানি তথা ইউরোপে বসে বেশ কয়েকজন নাস্তিক প্রতিনিয়ত ভিডিও লাইভে এসে অত্যন্ত জঘন্য, নোংরা এবং অকথ্য ভাষায় আল্লাহপাক ও মহানবী সা. কে গালাগালি করছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। তাদের বিষয়ে লিখতে গিয়ে আজকের এ লেখায় অনেক শব্দ/বাক্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও ব্যবহার করতে হবে, এ জন্য আমার মালিক মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

নাস্তিকদের লাইভে দেখা যায় তাদের হাজার হাজার ভিউয়ার। কেউ কেউ সংযুক্ত হয়ে তর্ক করছে, কিন্তু জ্ঞান কম থাকায় মনে হয় যেন পেরে উঠছে না, তবে তারাও জবাব দেয়ার মত যোগ্য লোকদের সংযুক্ত করছে না, হয়তো জিতে থাকার জন্য।

সংযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি আমার রাগ হয়, এ জন্য যে, তর্কে টিকতে না পারলে আপনারা সংযুক্ত হন কেন? আস্তিক হওয়া সহজ, বংশানুক্রমে হওয়া যায়, নাস্তিক হওয়া সহজ নয়, লেখাপড়া করা লাগে। যদিও তারা বিভ্রান্ত, কপালপোড়া, ভাগ্যে হেদায়েত নাই, অবশ্য সে কথার কোন মূল্য তাদের কাছে নাই।

লাইভে এসে নাস্তিকদের বকাঝকা করেন কেন? হুমকি দেন কেন? এটা তো ভাল কাজ নয়।ফেইসবুকেই বা গালাগাল করছেন কেন? এতে ইসলাম সম্পর্কে কম জ্ঞান সম্পন্ন নিউ জেনারেশনের সন্তানেরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক আলেম ও বিভ্রান্ত হচ্ছে।

যেমন, হাফেজ মুফতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। সে ১০ বছর একটি মসজিদের খতিব ছিল, একটি মাদরাসার মুহতামিম ছিল। ঢাকার মানিকদি এলাকায়। এখন সে নোংরা ভাষায় রাসুলকে গালি দিচ্ছে।

তার কথা, মুহাম্মদকে নবী তো দূরের কথা একজন সভ্য মানুষ বলার ও সুযোগ নাই, নবী নাকি অত্যন্ত চতুর-চালাক ও সাম্রাজ্যবাদী ছিল। নারী ধর্ষণকারী ছিল। নিষ্ঠুর ছিল (নাউজুবিল্লাহ)।

কোরানের আয়াত পাঠ করে, হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে সে কথা বলছে। সে বলছে ইসলাম ধর্ম খুন শেখায়। নেপাল বসে সে লন্ডনের আরেক নাস্তিক আরিফুর রহমানের সাথে এক ঘন্টা ছয় মিনিটের একটি ইন্টারভিউ করে এসব কথা বলেছে।

সে পরিষ্কার করে বলেছে ব্লগার হত্যা, নাস্তিকদের গালাগালি তার পছন্দ নয়, থাবা বাবা পড়ে সে উৎসাহিত হয়েছে, তার অনেক প্রশ্নের জবাব আলেমগণ দিতে পারেনি। এ জন্য সে ক্ষুব্ধ হয়েছে। সব কিছুই স্পষ্ট করে বলেছে।

তার কথার জবাব দেয়ার জন্য আলেমদের তো এগিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে একজন আলেম তার কিছু জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত নয়। অনেকে তাকে হুমকি দিচ্ছেন, গালিগালাজ করছেন, যা আমার কাছে সঠিক রাস্তা মনে হয় না।

মুফতি মাসুদকে গালাগাল করে কি লাভ হচ্ছে। তাদের প্রতিটি যুক্তি যে সহজে খন্ডানো যায় তা দেখিয়ে দিন।

আরেক নাস্তিক মুফাস্সিল ইসলাম, তিনিও মহানবীকে ধর্ষক বলে গালি দিচ্ছেন, প্রশ্ন তুলেছেন ছয় বছরের শিশু আয়শাকে বিয়ে করা যায় কিনা, নয় বছরে ঘরে তোলা যায় কিনা? তার প্রশ্ন তোদের আল্লাহ বার্মা মুসলমানদের রক্ষা করল না কেন, ইরাক সিরিয়ায় তোদের আল্লাহ কই?

আল্লাহ যদি তাদের সাহায্য করবেন তাহলে ১৫০ কোটি মুসলমানের ঈমানের পরীক্ষা কিভাবে হবে? এমনিতেই জান্নাতে যাওয়া যাবে? এ বুঝ তাদের নাই।

মুফাস্সিল দাবি করেছে ইসলাম থেকে আমি হাজার হাজার মানুষকে বের করে এনেছি, আরও আসবে, তোরা ঠেকাতে পারবি না। তোদের ধর্ম টিকবে না। নিজ দেশকে, দেশের মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বকা-ঝকা করছে।

আমি তাকে আহবান করেছিলাম, ইসলাম ধর্ম যেহেতু ত্যাগ করেছেন, ইসলামি নামটাও ত্যাগ করুন, শরীরে মুসলমানের রক্ত, রক্তটাও বদলান, কারণ আপনি বলেছেন আপনার বাবা-মা ধর্ষক উপাষক৷ তাদের রক্ত শরীরে রাখবেন কেন?

আরও অনেক প্রশ্ন করেছি, এড়িয়ে গেছে। জবাব দিতে পারেনি। মোফাস্সিল দাবি করেছে তার শতশত ভিডিও দেখে তরুণরা ইসলাম থেকে বেরিয়ে আসছে। তার দাবির সত্যতা যাচাই জরুরি নয়। জরুরি হচ্ছে, সেসহ অন্যান্য নাস্তিকদের কিছু কঠিন প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য পড়াশুনা জানা বিজ্ঞ আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে। নাস্তিকরা হেদায়েত হয়ে যাবে সেজন্য নয়, নতুনদের বিভ্রান্তি ঠেকাবার জন্য।

লোপা রহমান নামের আরেক নাস্তিক জঘন্য ভাষায় ইবরাহীম আ. ও মহানবীর সমালোচনা করছে, ৫ বার নামাজের অসারতা ও আল্লাহ’র নাম ব্যাঙ্গ করতে গিয়ে সে তার মাকে নাকি বলেছে, মা দৈনিক ৫ বার আমি তোমাকে ডাকব, ‘আম্মাহু আম্মাহু তুমি জাল্লে জালালুহু...’ ‘তুমি কি খুশি হবে? মা নাকি বলেছে না খুশি হব না। তোমার কাজটা কর তাহলেই খুশি।

সুতরাং মাকে বলেছি আল্লাহকে ডাকারও দরকার নেই। হজরত আয়শাকে নিয়েও তার অনেক বাজে মন্তব্য রয়েছে। ৪০ বছর বয়সী এই নাস্তিক লন্ডনে বসে মোফাস্সিল এর সাথে খোলা রাস্তায় মদ পানের মাধ্যমে এবার তার জন্মদিন পালন করেছে লাইভ প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে।হাজারো ভিউয়ার তা দেখেছে।

আসিফ মহিউদ্দীন নামে আরেক নাস্তিক জার্মানিতে বসে এক/দুই ঘন্টার লাইভ নিয়মিত করে যেখানে ৫/৭ জনকে সংযুক্ত করে যারা ইসলাম সম্পর্কে অল্প জ্ঞান সম্পন্ন। সে ডারউইন থিউরি (যা বস্তাপচা এবং অসার প্রমাণিত) প্রচার করে যাচ্ছে।

লাইভে সে বলছে, মানুষ এসেছে বানর থেকে। আদি প্রাণী ছিল এমিনু এসিড থেকে এমিবা। যা এক কোষের প্রাণী। এখানে সৃষ্টিকর্তার কোনো বিষয় নাই।

লাইভে থাকা এক ভদ্রলোক তার কাছে জানতে চাইল তাহলে এত সুন্দর দুনিয়ার সবকিছু এমনি এমনি হয়ে গেল? আপনার যে জ্ঞান তা কে সরবরাহ করল? কেউ তো একজন আছেন, তিনি আল্লাহ।

সে বলল নাহ, জ্ঞান আমার আরেকজন থেকে বিনিময় হয়েছে। আর আল্লাহ যদি থাকে তাহলে তাকে কে বানাল? ভদ্রলোক জবাব দিতে পারেনি। সেখানে আমি ঢুকে বল্লাম, ঠিক আছে ধরে নিলাম আল্লাহকে বানিয়েছে- ১, এবার প্রশ্ন-১কে বানিয়েছে কে?

ধরুন ১কে বানিয়েছ- ‘২’ , ২কে বানিয়েছে-৩, ৩কে বানিয়েছে-৪, এভাবে কোটি, কোটি ও কোটিতে গেলেও শেষ করা যাবে কি? না যাবে না। তাহলে এখানেই থামুন। তিনিই আল্লাহ। আর যদি এগিয়ে গিয়ে শেষ করতে পারেন তাহলে যে অংকটিতে শেষ হবে তিনিই আল্লাহ।

আমার কমেন্টের কোন জবাব আসিফ দিতে পারেনি। তার জবাবের অপেক্ষায় আছি। তাছাড়া সরকারের ভাল কাজগুলোরও সে কঠিন ভাষায় সমালোচনা করছে।

আসাদ নূর নামের আরেক নাস্তিক বলেছে, প্রতিদিন সে কোরানের ওপর প্রস্রাবের ভিডিও লোড করে ছাড়বে। তাকে কিছু করার ক্ষমতা আল্লাহরও নাই। সেও মুফতি মাসুদ ও আরিফ এর সাথে লাইভ প্রোগ্রামে নিয়মিত আসছে।

সে তার এক ইন্টারভিউতে বলেছে, আরেক নাস্তিক সামিউর রহমান (যদিও এখন হিন্দু ধর্মের অনুসারী) প্রতি লেকচারে দশ হাজার টাকা করে পায়। তাকে জুনিয়র বলে পাঁচ হাজার টাকার অফার দেয়া হয়।

তার বিবেক সায় দেয়নি, তাই অফার গ্রহণ করেনি। বুঝাই যায় ঐসব বক্তৃতায় শুধু ইসলামের গালাগাল করা হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলেও নামটা কেউ ত্যাগ করে না। কারণ মুসলিম নাম বাদ দিয়ে ইসলামের সমালোচনা হয়ত অমুসলিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কেউ বলেন, তাহলে ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ কেউ মুসলমান হলে প্রথমেই নাম রাখা হয়। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য্য।

মুফতি মাসুদ হচ্ছে এখন নাস্তিকদের গলার মালা। কারণ সে হাফেজে কোরান। বিভিন্ন আয়াত/সুরা তেলাওয়াত করে, হাদিস পাঠ করে জঘন্য ভাষায় তার সমালোচনা করে ও ভুল ধরে। তার একটি ভয়ানক মিথ্যাচার হচ্ছে, মুনাফিকরা নাকি রাসুলের অনেক দোষ দেখে কষ্ট পেত, মেরে ফেলার ভয়ে মুখ খুলত না। এ জন্যই মুনাফিক বলা হয়।

সুরা আত-তাহরিমের ১ম আয়াত নাকি রাসুলের ধর্ষণকে জায়েজ করার জন্য তিনি আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ)।

বুঝুন- হাফেজ মাসুদ কোথায় নেমেছে! তাকে নিয়ে চিন্তা নয়, চিন্তা হচ্ছে তার কথায় হাজারো মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আল্লাহপাক তাকে সঠিক পথে আনুন। আপনি তাকে হুমকি দিয়ে বা গালি দিয়ে কোন ফায়দা পাবেন না। তার কথাগুলোর অসারতা প্রমাণ করে-উচিত জবাব দেয়াই এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য। এ জন্য প্রচুর পড়াশুনা জানা আলেমদের এগিয়ে আসা উচিত।

ব্যবসা এখন হাতের মুঠোই


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ