মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ইসির নতুন নির্দেশনা ইরান সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম: চীন বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে কুকি-চিনের ৯ সদস্য গ্রেফতার আজমিরীগঞ্জে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কমিটি গঠন উদীচীর কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিব্রত: ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা শিগগিরই বাস্তবায়ন : তথ্য প্রতিমন্ত্রী ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সহায়তা করা নিয়ে যা বলছে সৌদি মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী পালিয়ে বাংলাদেশে শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে যোগদান করলেন মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী খুলনায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন নেতার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

ইসলামি দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব সমীপে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফয়সাল আহমাদ যাকারিয়া
আলেম ও খতিব

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। ইসলামি অঙ্গনে একটি পোড় খাওয়া রাজনৈতিক দল নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি খেলাফত মজলিসের দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে দলটি এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টির সাথে অানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ঐক্য বা রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দিয়েছে।

জানা গেছে, তারা দ্বিপাক্ষিক সমঝোতামূলক ছয়দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেই জাতীয় পার্টির সাথে ভোটের জোটে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে দেশের ইসলামি অঙ্গনসহ সাংবাদিক ও মিডিয়াপাড়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে অন্য অনেকের মত আমারও বেশ কৌতূহল নিয়ে জানতে মন চাইছে, এ জোটের ফলে কি লাভটা হবে? লাভের খাতায় ইতিবাচক ফলাফলটা কি বের হবে?

আমি বরং সোজাসাপ্টাই বলব- নো বেনিফিট। কোন লাভ নেই। যেই লাউ সেই কদু। ফলাফল তো সেই শূন্যই! কারণ ইতোপূর্বে আমরা বহুবার দেখেছি, তিন মোড়লের সাথে নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা করে অতীতে ইসলামি দলগুলোর নেতৃবৃন্দ বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

আসলে নির্বাচনের আগে মুখরোচক কথা সবাই শুনাতে পারে। কিন্তু ভোটযুদ্ধে জেতার পর পরই ঐসব বুলিপটুদের রং বদলাতে শুরু করে। দৃশ্যপট পাল্টে যেতে তখন বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না মোটেই। চোখের পলকের মাঝেই সবকিছু ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করে।

উপরন্তু নির্বাচনের আগে যারা ইসলামের কথা বলে বলে ইসলামিস্টদের মন ভুলাতে ব্যস্ত ছিলেন, তারাই আবার নির্বাচনের পর পল্টিবাজিতে নিজেদের আসল চেহারা উম্মোচনে অতি মরিয়া হয়ে পড়েন।

এই তারাই ডিগবাজিতে চ্যাম্পিয়নের মত পারফর্মেন্স করে নির্বাচনপূর্ব সমঝোতায় স্বাক্ষরিত সব শর্তাদি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে শুরু করেন।

২. ইতিপূর্বেও জাতীয় পার্টির সাথে চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সাহেবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বাহ্যত শক্তিশালী ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলেছিল।

পরবর্তীতে পল্লীবন্ধু (সমালোচকরা অবশ্য পল্টিবন্ধুও বলে থাকেন) এরশাদ সাহেব পল্টিবাজির মাধ্যমে সেই নির্বাচনী ঐক্যকে ভুল প্রমাণ করতে যথেষ্ট পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

এমনিভাবে বিএনপির সাথেও ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিস রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলেছিল কিছু ফাঁকা বুলির মারপ্যাঁচে আটকা পড়ে। কিন্তু সে জোটের ফলাফল জাতির আজ অজানা নয়। সবই ছিল শুভংকরের ফাঁকি।

মনে পড়ে-খেলাফত মজলিস একবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সাথে ২০০৭সালে নির্বাচনী জোট গঠনের চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেছিল। সেটা নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক মহল অনেকটা সরগরম ছিল। হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছিল বেশ। যদিও পরবর্তীতে সে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।

৩. আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টির প্রত্যেকেরই একটি দিক দিয়ে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেটা হল নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রীতিমত ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে ঘুরে গিয়ে নিজেদের পল্টিবাজির জম্পেশ মহড়া দেয়া!

নিকট অতীতেও তাদের সাময়িক ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি বা ধর্মপ্রীতির নিখুঁত অভিনয়টা গোটা জাতির সামনে অত্যন্ত কুৎসিতরূপে ধরা পড়েছে বারবার বহুবার। খুলে গিয়েছে তাদের চরিত্র বদলের ঘৃণ্য মুখোশটা।

এই যখন ইসলামি দলগুলোর সাথে তিন মোড়লের অতীতের নির্বাচনী ঐক্যের পোস্টমর্টেম, তখন নতুন করে উপরোক্ত তিন মোড়লের কারো সাথে নির্বাচনী ঐক্য বা সমঝোতা গড়ে তোলা জেনেশুনে বুঝে, স্বেচ্ছায়-স্বজ্ঞানে অনেকটা জ্বলন্ত চিতায় আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

কারণ অতীতের রেকর্ড বলছে-দিনশেষে সবই শুভংকরের ফাঁকি। কাজেই মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস করে গলায় মুলা ঝুলানোর মত বোকামী করা পোড় খাওয়া ইসলামি দলগুলোর জন্য মোটেই সমীচীন হতে পারেনা আদৌ।

অনেকে তো আরো কয়েক কাঠি সরেস। তারা এটাকে ‘সুস্পষ্ট লেজুড়বৃত্তি’ বলেই অভিহিত করতে চান। কেউ করেন উপহাস। কেউ করেন আফসোস।

আমি অবশ্য বরাবরের মতই দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভূক্ত। আফসোসে পুড়ে ছাই হই। অনুতাপে দগ্ধ হই যারপরনাই। আর রব্বে কারীমের কাছে কেঁদেকেটে নাকের পানি-চোখের পানি একাকার করি বারবার।

নীরব দুঃখীর মত আঁখিদুটি মোর লোনাজলে সিক্ত হয় অবিরত। কারণ আর কিছু নয়। কারণ একটাই। সেটা হল রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর স্বার্থে ইসলামি দলগুলোর অপূর্ব সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গঠন করার পরিবর্তে অনেকেই বাতিলের সাথে জোট গঠনের প্রতি মনোযোগটা বেশি দিয়েছেন ও এখনো কেউ কেউ দিয়ে চলেছেন।

বাংলায় দুটি প্রবাদ আছে, ‘কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না’ ও ‘কুত্তার লেজ সোজা হয় না।’ এ দুটি প্রবাদের সাথে কাকতালীয়ভাবে এ দেশের তিন রাজনৈতিক মোড়ল যথাক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

এরা যতই মুখে ইসলাম ইসলাম বলে ফেনা তুলুক না কেন, নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার ঘৃণ্য মানসে সেই ইসলামের বিরুদ্ধেই জাতীয় সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে বিন্দুমাত্র বুকটা কাঁপেনা তাদের।

কেনইবা কাঁপবে? তারা তো আর ইসলামের স্বার্থ চিন্তা করে রাজনীতি করেন না। ইসলামের স্বার্থ বিচার করেই যদি রাজনীতি করতেন, তাহলে ৯০ভাগ মুসলমানের এ দেশের জাতীয় সংসদে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন পাস হত না। মদখোর মদের লাইসেন্স পেত না।

ঘৃণ্য পতিতাবৃত্তির জন্য বৈধতার লাইসেন্স মিলত না। সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক অভিশপ্ত নারীনীতি ও শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করতে পারতেন না তারা। হাইকোর্টে ফতোয়া বিরোধী রায়প্রদান করতো না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে গ্রীক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করতে পারতেন না।

ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতা আর নয়, ক্লিক করুন

যদিও পরবর্তীতে জাতির মাথার মুকুট উলামায়ে কেরামের যোগ্য নেতৃত্বে কোটি মুমিনের দুর্বার আন্দোলনের কারণে তোপের মুখে পড়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার ফতোয়া বিরোধী রায় বাতিল করতে ও আওয়ামী সরকার মূর্তি অপসারণ করতে বাধ্য হয়।

আজ একথাগুলোর পুনরাবৃত্তি এজন্যই করতে হচ্ছে যে, এতসব ইসলামবিরোধী কর্মকান্ড করা স্বত্তেও ইসলামের স্বার্থে! তাদের স্বাথে জোট করে ফের এক্সপেরিমেন্ট করা বুমেরাং সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয় বলে সচেতন বোদ্ধামহলের অভিমত।

তাছাড়া এদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করে থাকেন। বিএনপি এদেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক গুরু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। আর জাতীয় পার্টির পল্টিবাজি আদর্শের জনক তো খোদ এরশাদ সাহেব নিজেই।

পক্ষান্তরে ইসলামী দলগুলো কায়মনোবাক্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আদর্শের রাষ্ট্রীয় প্রতিফলন ও সফল বাস্তবায়ন চায়।

অতএব ভিন্ন মেরুতে যারা বসবাস করেন তাদের সাথে নির্বাচনী ঐক্য গড়ার মানেই হচ্ছে- সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দুটি ভিন্ন চিন্তা ও ভিন্ন আদর্শের জোটগত কর্ম পলিসি নির্ধারণে দুপক্ষের অযাচিত মনস্তাত্ত্বিক লড়াই ও অনাকাঙ্খিত মুখোমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া। যা আদৌ কাম্য নয়।

৪. এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে একটা মাত্র পথই খোলা আছে। আর সেটা হল- ভিন্ন মেরুর সকলকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর স্বার্থে সকল ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তোলা।

সকল ইসলামপন্থীরা একজোট হয়ে এভাবে একটি কার্যকর তৃতীয় ব্লক বা ধারা সৃষ্টি করতে পারলে সাধারণ মানুষ এর প্রতি খুব সহজেই আগ্রহী হয়ে ওঠবে।

সব সাধুদের আচরণে ইতিমধ্যেই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা আমআদমি বেশ আশা-আকাঙ্খা ও আস্থার সাথেই এ ব্লকের প্রতি ঝুঁকে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। যেটা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও থেরাপির মত কার্যকর হবে বলে সকল বোদ্ধামহলের বদ্ধমূল ধারণা।

আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীন বিজয়ের ঝুঁকিপূর্ণ রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ভোটের আগে জোটের খেলায় ইসলামপন্থীরাও!

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ