খতিব তাজুল ইসলাম
লেখক ও গবেষক
তোরা আমার মা তোরা আমার বাবা। তোরা বিবেককে জাগিয়ে দিয়েছিস। যথেষ্ট হয়েছে মা বাবারা! এবার তোরা ব্যারাকে ফিরে যা। গোটা বিশ্ব হতবাক অবাক তোদের কর্মকাণ্ড দেখে। মাত্র কয়েক ঘন্টায় সারা শহরের চিত্র তোরা পাল্টে দিতে পারছিস।
সরকার প্রধান হয়তো সারকাস দেখছেন। সেনাবাহিনী ডিমে তা দিচ্ছে। পুলিশরা আছে আখের গোছাতে। মন্ত্রী এমপিরা ক্ষমতার দম্ভে মাতাল হয়ে আছে। ভেংগে পড়েছে দেশের গোটা প্রশাসন ব্যবস্থা। ডিজি এসপি মন্ত্রী এমপি প্রফেসর অফিসার কারো ড্রাইভারের কাগজ নেই।
সাধারণ মানুষের কথা কি বলি? ফিটনেস তো দূরের কথা। দেশে অর্ধেক ড্রাইভার লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছে। নুন্যতম কারিগরি ও মানবিক ট্রেনিং নেই তাদের। বড় বড় কোচ ও ট্রাকের ড্রাইভাররা মদ ও গাঁজায় টান না দিলে সে স্টিয়ারিংগে হাত রাখে না! তাহলে সে মানুষ মারবে না তো করবেটা কি?
ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে প্রশাসনকে এমন কলংকিত করেছে এখন বলতেই হয় গোটা জনপদ যেন একটি মৃত্যু উপত্যকা। এই অরাজকতার শেষ কোথায় কেউ জানে না। কথায় কথায় জামাত শিবির বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন বলে সকল সমস্যা আড়াল করতে করতে এখন এটা যেন মজ্জাগত অভ্যাস হয়েগেছে আপনাদের। আন্দোলন প্রতিবাদ দেখলেই বলে এসব রাজাকারের কাজ।
আপনাদের আর কিভাবে বাস্তবতা বোঝাবো বলেন? এই বিপর্যয় কি শুধু বিরোধীদের জন্য? সরকারি দলের কেউ গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মরছে না? সিলেটের ইফতেখার হোসেন শামিম কি আপনাদের দলের বড় একজন লিডার ছিলেন না?
না এভাবে এক চোখা হয়ে অন্ধ হয়ে আপনারা আর কতদিন জাতিকে অন্ধকারে রাখবেন?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! দয়া করে শাহজাহান খানকে সরিয়ে ভাল যোগ্য একজন লোক নৌ ও পরিবহনে বসান। তিনি শুধু লোট আর চাঁদাবাজি করেই যাচ্ছেন। পরিবহন সেক্টরে নুন্যতম শৃংখলা আর বাকি নেই।
কোমলমতি শিশু কিশোর আর কিশোরীরা যা আমাদের দেখিয়ে দিলো লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করতেন আপনারা। না পদত্যাগ শোনলে আপনারা কেমন হয়ে উঠেন। তাই পদত্যাগ না বলে রদবদলের কথা বলছি।
দয়া করে রি-সেটাপ করেন। যোগ্য কাজের লোক বসান। প্রধানমন্ত্রী আপনি সড়কের এই নিঃস্পাপ শিশু কিশোরদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারলেন না? আপনি খোদ এসে তাদের সান্ত্বনা দিলে ভাল হতো না? বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে আপনার ইজ্জত বহুগুন বেড়ে যেতো।
আপনাকে কে কু পরামর্শ দিচ্ছে জানি না। তবে নীতি বেআইনিতে দেশ ভরে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে গণরোষের কিন্তু শিকার হবে আপনার সরকার। ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করলে কিছু ফিরিস্তা এসে দেশ চালাবে এমন বিশ্বাস আমার নেই।
আমরা সবার যুগ দেখেছি। সবাই একই পথের পথিক। কিন্তু আপনার সরকার এখন সবচেয়ে খারাপ নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে। কোনো জবাবদিহিতা নেই সরকারের ভেতর। সবাই লাঠির মত কথা বলে। মানুষের প্রতি সামান্যতম মমতা থাকলে এভাবে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
একটু ফিরে দেখুন! এই শিশুদের কে নামিয়েছে রাস্তায়? তারা কি কোন রাজনৈতিক দলের উস্কানিতে রাস্তায় নেমেছে? না কখনো না। তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই দেয়ালে পিঠ ঠেকলে যা হয় তাই হয়েছে।
হ্যাঁ আমি বলি যথেষ্ট হযেছে। এখন তারা ব্যারাকে ফিরে যাক। ওরা আমাদের ভবিষ্যত। ওদের অপমাণ আমরা মেনে নিতে পারি না। এখন তাদের ব্যবহার করার জন্য হয়তো কেউ কেউ সুযোগ খুঁজবে।
অথবা আপনারা মান সম্মান রক্ষার জন্য কোন অন্তর্ঘাতমূলক কিছু করে তাদের ক্ষতিও করতে পারেন। আর প্রকৃত কথা হলো দিনের পর দিনতো ওরা রাস্তায় থেকে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারবেনা। তারা করেছে যা দেখিয়ে দিয়েছে তা যথেষ্ট বলে মনেকরি।
অভিভাকদের কাছে অনুরোধ আপনাদের সোনামনীদের ঘরে ফিরিয়ে নিন। ওরা নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করুক। ওরাই আমাদের ভবিষ্যত সৈনিক। তাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিন।
ক্ষমতাসীনদের অযোগ্যতা অদক্ষতা ভাল করে তারা উলঙ্গ করে ফেলেছে। এখন তারা পাগল হয়ে গেছে। তাই ক্ষমাতাসীন বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের বলির পাঠা তারা হোক সেটা আমার চাই না। দয়া করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের ঘরে ফিরিয়ে নিন।
এভাবে কিন্তু তারা ৪৭ বছরের ঝঞ্জাল কয়েক দিনে সাফ করতে পারবে না। তবে বিশ্বাস করি গোটা জাতিকে তারা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। আমার ভেবেছিলাম আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে! না, আমরা আশাহত নই। আমরা আশাবাদী।
সকল মিডিয়া, রাজনৈতিক দল ও বিবেকবানদের প্রতি অনুরোধ আপনারা তাদের নিরাপদে ঘরে ফিরার ব্যবস্থা করুন। আর সরকারের প্রতি দাবী হলো আপনারা যা বলেছেন তা তড়িৎ বাস্তবায়ন করা শুরু করেন। এদেশে মেধাবী আছে। যোগ্য লোক আছে তাদের কাজে লাগান।
শেখ হাসিনা! মাননীয়া! আপনি তো খুব সাহসী তাই না? তাহলে ভয় পাবেন কেন? ওরা তো আপনারই সন্তান। তারা আপনাকে অধিনস্থদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিছে।
তাই কারো কানমন্ত্রে প্রভান্বিত হয়ে এইসব ছেলে মেয়েদের ওপর কোন প্রকার আঘাত আসতে দিবেন না। তারা ভুল কিছু করেনি। বরং আপনাকে সাহায্য করছে সে কথা আমি বিশ্বাস করি।
আন্দোলন করলেই খুন ও গুমের যে প্রচলন শুরু হয়েছে দয়া করে জাতিকে সেই অন্ধকার কানাগলি থেকে বেরিয়ে নিয়ে আসুন, এটাই আমাদের বিনীত নিবেদন।
সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই!
-আরআর