বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


হিন্দের সওগাত নাও হে সিরিয়া!!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মূল: সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী
অনুবাদ: মঈনুদ্দীন তাওহীদ

প্রিয় সিরিয়া!
আজ তুমি এমন সত্ত্বা থেকে অভিনন্দন গ্রহণ করো যে তোমায় আশৈশব ভালোবেসেছে। তোমার বন্দনায় সুদীর্ঘকাল যাপন করেছে। সে যখন ছোট্ট ছিলো, তখন ইসলামের যুদ্ধ কাহিনীগুলো উন্মুখ হয়ে শুনতো, শুনতো শামের অমর বিজয়গাঁথা।

তখনই সে আপন গ্রাম-শহরের মত তোমার নগর-বন্দরকে আপনার মত করে চিনে নিয়েছিলো। যৌবনে সে যখন ইসলামি ইতিহাসের সোনালি স্বর্ণলিপি অধ্যয়ন করতো। তখন সে দেখেছে ইতিহাসের প্রতিটি প্রদীপ্ত পাতায় তোমার প্রলম্বিত বিচরণ, আর মুসলমানদের ঈমানি নির্ভরতার অনন্য কীর্তিগাঁথা।

গোটা আরবকে যা সেই সময়ের দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন তারা ছিলো অর্ধ জাহানের কর্তা!

প্রিয় শাম! আমার আপন সত্ত্বা, বিশ্বাস আর উত্তপ্ত হৃদয় থেকে উৎসারিত শ্রদ্ধা কবুল করো! এরা প্রত্যেকেই তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আমার নফস তো তোমার জমিনে রক্তে সিঞ্চিত করা বীরদের নজরানায় আনিত ঈমান পেয়ে মহাখুশি।

আর আমার বিশ্বাস। জড়বস্তুর ওপর প্রাণের বিজয়, নিকৃষ্টের ওপর উৎকৃষ্টের শ্রেষ্ঠত্ব, তলোয়ারের ওপর ঈমানের জয়জয়কার দেখে আমার বিশ্বাস আজ উচ্চতায় আকাশচুম্বি আর দৃঢ়তায় পর্বতসম।

আমার ঘুমন্ত হৃদয় আজ জাগরুক। আকাশসম উঁচু আর শীতল সুপেয় এক উদ্দেশ্য অনুধাবনের লক্ষ্যে।

সেটা হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। তার পথে চলার দৃঢ় প্রত্যয়, মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ব বোধ, ন্যায় প্রতিষ্ঠা। এগুলো সেই লক্ষ যা তোমার ইতিহাসকে করেছে অবিস্মরণীয়। আর তোমার ভূখণ্ডকে চমকিয়ে দিয়েছে গোটা অবনীতে।

তোমার সামনে আজ আমি ওই সাগরের ওপারের কোটি কোটি বাসিন্দার নির্লোভ ভালোবাসা অর্পিত করছি। যারা তোমাকে দূর থেকেও অসম্ভব রকমের ভালোবাসে।

তুমি মনে হয় বিস্মিত হচ্ছো!! হে প্রিয় ভূমি!! তুমি অসংখ্য মানুষের অকুণ্ঠ মুহাব্বতে বিস্মিত হয়ো না!

বিশ্বাস করো! ভারত সাগরের তীরে, হীমালয় পর্বতের ছায়ানীড়ে এমন বিপুল জনতার বসবাস যারা সম্প্রীতির বন্ধনে চির অটুট, ভালোবাসায় চির অনঢ়।

তারা তোমাকে সত্তিই খুব ভালোবাসে। অনেক আগে থেকে। দিবানিশি তারা তোমার কথা স্মরে।
তুমি কি জানো! মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে যখন আজানের সুমধুর সুর ভেসে আসে। মহা সান্ত্বনা যখন এর ধ্বনিতে গুঞ্জরিত হয়, তখন তাদের চিত্তে ভেসে ওঠে তোমার ছবি।

দৃষ্টির সামনে চিত্রায়িত হয় বেলালে হাবশীর না দেখা অবয়ব যার প্রেমময় আজেনের ধ্বনিতে এখনো এই ভূমি প্রভাবিত। ইনশাআল্লাহ কেয়ামত তক থাকবে।

পড়ুন সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর বই প্রাচ্যের উপহার

যখনই তারা কোন বীর কেশরীর দুঃসাহসিক অভিযানের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী শোনে, তখনই তাদের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে আল্লাহর তরবারি খালিদ বিন ওয়ালিদের সেই ভয়হীন চেহারা।
মৃত্যুর মুখেও যা ছিলো চিরনির্ভীক, হাস্যোজ্জল।

তিনি তো সেই মহাবীর, যিনি প্রতিটি যুদ্ধে নিজেকে কুদরতের হাতে সপে দিয়ে বীর বিক্রমে লড়ে গেছেন। ফলে তিনি হয়েছেন বিজয়ী। তিনি তো সেই মহান সেনাপতি, যিনি খোদার রাহে জীবনকে বিপন্ন করেছেন। তিনিই তোমাকে ঈমানের স্বাদ দিয়েছেন হে সুরিয়া!

তোমার বুকে ন্যায় ইনসাফের নিশানা তো তিনিই উড়িয়েছেন। ইনশাআল্লাহ তা কেয়ামত পর্যন্ত উড্ডীন থাকবে। দেখো না! তিনি আজো তোমার বুকে শায়িত!

তারা যখনই অবিচার আর খেয়ানতের যাঁতাকলে নিস্পৃহ হয়ে যায় তখনি তারা তোমার ইনসাফ ও আমানতের কথা শুনে তোমায় স্মরণ করে।

যখন তারা বিচারকের থেকে অন্যায়ের সম্মুখিন হয়, কোন বিজেতার রুক্ষ-কঠিন আচরণে যখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে তখনই তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই দয়ালু বিজেতাকে, যিনি দামেস্কবাসীকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন, আর হিমসের থেকে নেওয়া কর এই ভেবে ফেরৎ দিয়েছিলেন যে এ কর নেওয়া হয়েছিলো তাদের নিরাপত্তার কারণে কিন্তু এখন তো ইয়ারমুক যুদ্ধের কারণে মুসলিম বাহিনি যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে।

প্রিয় সিরিয়া! যখনই তারা কোনো বিশ্বস্ত বন্ধুর প্রয়োজন অনুভব করে, যখনই কোনো দয়ালু বিজেতা যার উদার নেতৃত্বে বীরত্ব ও দয়া, নির্ভিকতা ও প্রজ্ঞা রাজনীতি ও ধর্ম এবং কঠোরতা এত উদারতার সমাহার ঘটে তখনই তারা আকুল হৃদয়ে তোমার স্মরণ করে।

জানো তো, সমুদ্রের ওপাড়ে হরদম হাদীসে নববির চর্চা হয়। ফিকহের সাধনা হয়। তারা যখনই সেই জ্ঞানসাধনায় আত্মনিয়োগ করে, যখনই কোন সাহাবি, কারি, রাবি কিংবা ফকিহর নাম তাদের কানে বেজে উঠে, তখনই তাদের মানসপটে ভেসে ওঠে তোমার ছবি।

যখনই মুয়াজ ইবনে জাবাল, আবু দারদা, সাদ ইবনে উবাদা, উবাই ইবনে কাব এর মধুময় নাম হাদিসের মসনদে উচ্চারিত হয়। যখনই তাদের সমাধি নিয়ে আলোকপাত হয় তখন তারা সেই তোমাকেই খুঁজে পায়। কারণ তোমার বুকেই তো হয়েছে এই মহামনীষীদের আখেরি সমাধি।

জেনে রাখো! যখনই তারা কোন বাদশাহ সালামাত, আমাত্য কিবা বিচারপতির মাঝে দেখার মত কোন খুবী খুঁজে পাবে। তা যে নামেই আসুকনা কেনো। তখনই তারা তোমাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। কারণ এই জাতি শুধু দেখেছে আমিত্ব, অহংকার, স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব আর গরিবের সম্পদভোগী বিলাসী ক্ষমতাধরদের!

তারা স্মরণ করে সেই মহান ব্যক্তিকে যিনি আকস্মিকভাবেই ইতিহাসে উদিত হয়েছিলেন! যার এই বজ্রউত্থানের সুবাদেই প্রথম শতাব্দির ক্রান্তিলগনে এসেও মানবতা খুঁজে পেয়েছিলো নতুন প্রাণ।

হে সিরিয়া! তার বদৌলতেই তো তোমার আকাশে এমন নির্মল আলো ফুটে উঠেছিলো, যার দীপ্ত আভায় আলোকিত হয়েছিলো গোটা বিশ্ব। ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সর্বব্যাপী। সমাজ ফিরে এসেছিলো ধর্ম ও কল্যাণের পথে। প্রতিটা মানুষ হয়েছিলো মাখলুক থেকে বেনিয়ায। শান্তির প্রখর স্রোতে অশান্তি হয়েছিলো বিদূরিত। যাকাত দেওয়ার জন্য লোক খুঁজে ফিরতো কিন্তু কাউকে পাওয়া যেতোনা অভাবী। অপরাধীরা ছিলো ভীত। অত্যাচারিরা হয়ে পড়েছিলো এককোণো।

তুমি কি জানো, কে সেই সত্ত্বা!!!
তিনি হলেন খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয!!

ব্যক্তিত্ব যার ছিলো বিদ্যুৎ এর মত দ্যুতিময়। মহাকালের মত মহা শক্তিধর!!
মনে রেখো হে সুরিয়া!!

প্রতিটি যুগেই ইতিহাস তার বন্দনা গাইবে।
মানবতা চাতকের ন্যায় তার আগমনের পথে তাকিয়ে থাকবে। তৃষিত বদনে তার প্রয়োজন অনুভব করবে প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটা দিন এমনকি অনন্তকাল!!!

আচ্ছা, ধরো। যদি এই একটি মাত্র সৌন্দর্য ছাড়া তোমার আর কোন হাসানাহ না থাকতো। ধরো তোমার উর্বর ভূমি যদি এই মহান সত্ত্বা বৈ আর কাউকেই জন্ম না দিতো।

বিশ্বাস করো! তোমার ফখরে বিন্দুমাত্র কমতি আসতো না। এই এটাই তোমার চিরগৌরবের জন্য কাফি হতো!

অনেক! হ্যাঁ, এমন অনেক কিছুই রয়েছে হে সিরিয়া যা তোমার স্মরণকে তাজা করবে। যুগে যুগে মানুষকে তোমার দিকে টেনে আনবে।

তুমি কি জানো, তোমার পবিত্র ভূমিতে কত সুমহান হাস্তি, মুহাদ্দিস, রিজালশাস্ত্রের মহাপন্ডীতের সমাধি রয়েছে!!

ইবনুস সালাহ, জাহাবি যাদের পথিকৃৎ।
কত বিশ্বখ্যাত ইতিহাস বেত্তার শেষ ইতিহাস খোদিত আছে তোমার বুকে।
ইবনুল আসাকির, ইবনে কাছির, আবুল ফিদা যাদের অনন্য!!

ইমাম নববি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কায়্যুম এর মত মহান ইমাম। ইব্রাহিম ইবনে আদহাম, আবু ইয়াজিদ বাসতামি, আর মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবির মত মহান তাপসদের শেষ সমাধিতো তোমার বুকেই!

তোমার কোলেই তো চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন সেই বীর কেশর!! যার হুংকারে প্রকম্পিত হতো মহাশূন্য। বীরত্বে যার ধুকধুক করতো পশ্চিমাদের বুক। রহম ও মানবদরদে যিনি ছিলেন অনুপম! যার অসীম সাহস আর অহর্নিশ উদ্দীপনায় থরথর করতো পশ্চিমারা!

যার পদভারে কম্পন সৃষ্টি হতো তাদের অনড় ভূমিতে। যার একক সাহসী ভূমিকায় সেদিন অপ্রতিরোধ্য হিত্তিল মুখোমুখি হয়েছিলো দুর্বার প্রতিরোধের। ভেঙ্গে খানখান হয়েছিলো যার প্রতিটা ইট!

তিনিতো আর কেউ নন! দ্যা গ্রেট সালাউদ্দিন আইয়ুবী!!

তিনি ইসলামের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। বরং ইসলামকে সমুন্নত করেছেন। লড়ে গেছেন আমরণ!!

বিশ্বাস করো, তিনি যদি না থাকতেন তবে ইসলামি সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়তো। চুরমার হয়ে যেতো সব। কিন্তু তিনি তা হতে দেননি। উল্টো তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তি ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন। তাদের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এই যে গোটা পূর্বাঞ্চলের ওপর আজ তোমার যে শ্রেষ্ঠত্ব তার কেবল সেই সালাউদ্দিনের কারণেই, যিনি তোমার কাছে এসেছিলেন। তোমার সন্তান নূরুদ্দিন যানকির হাতে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তার থেকেই লাভ করেছিলেন সেনাধ্যক্ষের মহান গুরুদায়িত্ব এবং তোমার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।

তোমার পরিচয় কি তুমি জানো!!
আমি তো আজ তোমার কাছে এসেছি যখন তোমার নাম সিরিয়া।

কিন্তু অতীতে একটা সময় তোমাকে শাম নামে ডাকা হতো। তুমি তামাম জাহানের বৃহৎ একটি সভ্য অংশে তোমার হুকুমত চালাতে। খুব দ্রুতগামী একটি উটনিতে টানা ৫ মাস বিরতিহীন সফর করলেও তোমার সুবিশাল সীমানা শেষ হতো না। প্রাচ্যের হিন্দ আর প্রতিচ্যের আন্দালুসিয়া থেকে তোমার রাজস্ব আসতো।

কিন্তু দিনদিন তোমার ক্ষমতা হাত গোটাতে থাকলো। তোমার অবারিত জানালা বন্ধ হতে লাগলো। একপর্যায়ে তুমি নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিলে। আখের, তুমি সিরিয়া নাম ধারণ করে আবদ্ধ হয়ে পড়লে একটি সংকীর্ণ ভূমিতে।

শুধু কি তাই, বিশ্ব নেতৃত্ব থেকেও হাত গোটালে।

আচ্ছা, কি সেই নিগুঢ় তত্ত্ব! কোন সেই পথ হে সুরিয়া!! যার মাধ্যমে তুমি আবার সেই সিংহাসনে আসীন হতে পারবে!

তুমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে হয়তো বলবে ইরাক তোমার থেকে এই নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে বাগদাদকে দামস্কের পরিবর্তে খেলাফতের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠিত করেছে এক বিশাল রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্য!!

কিন্তু আমি এই প্রশ্নটি রাখবো ইরাকের কাছে। তার এই অবস্থা হয়েছে ৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আর তোমার... ২য় শতাব্দিতে। তুমি আর ইরাক আজ যে অবনতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছো, মূলত এর পেছনে রয়েছে এক গভীর সুক্ষ্ম কারণ!

আমাকে একটু সুযোগ দাও! আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি!

দেখো, তোমার সম্মান, গোটা পৃথিবীর ওপর তোমার নেতৃত্ব ছিলো শতাব্দীকাল জুড়ে। তুমি অভিভাক ছিলে নতুন একটি জাতির। তামাম জাহানে রেসালাতের পয়গাম পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিলো তোমার। তুমি এ পথে নির্ভীকতার সাথে তোমার দামেস্কীয় খলিফাদের নিয়ে ভালোই অগ্রসর হচ্ছিলে। এই উম্মতের নেতৃত্ব দিচ্ছিলে।

তখন তোমার শাসনকর্তারা বিভিন্ন দেশ বিজয় করেছিল, ইসলাম প্রচার করেছিল, দ্বীন প্রচার করেছিল, ইলম প্রচার করেছিল, নৈতিক চরিত্র, মানবতা ও মর্যাদা শিক্ষা দিচ্ছিল। মুহাম্মদ বিন কাসেম হিন্দুস্থানে, তারেক বিন যিয়াদ স্পেনে এবং মুসা বিন নুসাইর পাশ্চাত্যে। তখন বিজয় ও নবুয়তের বাণী একে অপরের সঙ্গী ছিল।

আর তোমার শাসনকর্তারা কল্যাণ ও শ্রেষ্ঠত্বের শাসনকর্তা, ইলম ও সংশোধনের বাহক ছিল। তোমার বাহিনী ছিল মানবতার উদ্ধারকারী। যারা মানুষকে বান্দার দাসত্ব থেকে এক অাল্লাহর দাসত্বের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।

বিভিন্ন ধর্মের জুলুম থেকে ইসলামের ন্যায়পরায়নতার দিকে, দুনিয়ার সংকির্ণতা থেকে তার প্রশস্থতার পথ দেখিয়েছিলো। তাদের উপর যে বেড়ী ছিল তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো

জানো! অনুর্বর ভূমির জন্য যেমন বৃষ্টির প্রয়োজন, তখন মানুষের জন্য প্রয়োজন ছিল নববি বাণীর। তারা এমনভাবে একটি ন্যায়নিষ্ঠতা সম্পন্ন হুকুমতের কামনা করছিল যেমন একজন বন্দি স্বাধীনতার কামনা করে। একারণেই হয়তোবা তারা ন্যায় ইনসাফের বাহকদের অভিবাদন জানিয়েছিল বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে। এবং তাদের জন্য তাদের হৃদয় ও ভূখণ্ড উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো। নিষ্পেষিত, নিপিড়িত বিশ্ব তোমার কোলে ঝাপিয়ে পড়েছিল যেভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত শিশু তার বাবা মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।

তখন গোটা বিশ্বের ওপর তোমার মহা অাধিপত্ত কায়েম হলো। বিভিন্ন জাতি গোত্রের ওপর তোমারি অসিয়ত প্রতিষ্ঠিত হলো! কিন্তু অবশেষে!! তুমি খোদ তোমাকে ভর্ৎসনা করলে!!
বলো তো কেনো!!??

প্রিয় সিরিয়া! তুমি এই নবুয়তের শক্তি থেকে তোমার আপন শক্তি ও বিজয়ের ওপর বেশি ভরসা করতে লাগলে এবং মানুষের চরিত্র ও অবস্থার উন্নতির দিকে গুরুত্ব না দিয়ে সম্পদ সঞ্চয়ে আত্মনিবেশ করলে। তোমার শাসনকর্তা, শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও সম্পদশালীদের নীতি-চরিত্রে পরিবর্তন হতে লাগল।

একসময় তারা অন্যদের মত হয়ে গেলো। তোমার মহা সাম্রাজ্যের একটি যুগ অতিবাহিত হতে না হতেই সাম্রাজ্যের আনাচেকানাচে মানুুষ তার অবক্ষয় অনুভব করতে লাগল। ইতিহাস সাক্ষী, ইয়াযিদ ইবনে আ. মালিক এর দূতরা যখন রুখজ ও সিজিস্তান গেলো তাদের উপর আরোপিত জিযিয়া কর ও ভূমিকর আাদায়ের জন্য তখন এ সকল ভূখণ্ডের সম্রাট রাতবিল বলল, তাদের কি অবস্থা যারা এমন অবস্থায় নামাজে আসতো পেট ছিল খাদ্যশূন্য এবং চেহারা ছিল ক্লান্তিময় কৃষ্ণ।

তারা জবাব দিলো ‘তারা তো অতিবাহিত হয়ে গেছে।’ সম্রাট বলল, ‘তোমরা যদিও তাদের চেয়ে সুন্দর চেহারাধারী কিন্তু তারা তোমাদের চেয়ে অধিক ওয়াদা পালনকারী এবং শক্তিশালী ছিল।
তারপর সে বনু উমাইয়্যা ও আবু মুসলিমের কোনো শাসককেই সিজিস্তান এর ওপর আরোপিত কোনো কর প্রদান করেনি।

প্রথম যুগে বিশ্ব তোমার কাছে মাথা নত করেছিল। তার ওপর তোমার আধিপত্ত কায়েম হয়েছিল। কারণ তুমি এমন এক নতুন দ্বীনের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত করেছিলে যা ছিলো বিজয় ও আধিপত্তের ফয়সালা।

কিন্তু হে বিশাল সিরিয়া! তোমার আজকের অবস্থান তো তোমার আসল নয়। তোমার ভৌগোলিক অবস্থান, সামরিক দূরদর্শিতা, তোমার অতীত ইতিহাস ও তোমার পবিত্র জাতি এ সবই বলে যে অবদমিত কিবা অবনমিত হওয়ার জন্য তোমার জন্ম হয়নি।

তুমি নিজের প্রতি বড় অবিচার করছো, জুলুম করছো নিকৃষ্ট জিনিসে সন্তুষ্ট হয়ে এবং বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে বিমুখ হয়ে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব! নেতৃত্ব তো কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়। আরো তো বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য রয়েছে যারা সম্ভাব্য সকল বিষয়াবলিতে পরিপূর্ণ এবং জনসংখ্যায়ও বেশি।

তোমার শুধু একটাই পথ রয়েছে হে সিরিয়া! তা হল নবুয়তের বাণী বহন করা যা তুমি তোমার প্রথম যুগে করেছিলে। সেই আলোকিত ও সোনালি যুগে।

উপায় একটাই আর তা হলো এই দাওয়াতকে ভিত্তি বানানো যা তুমি তোমার প্রথম শতাব্দিতে করেছিলে।

তাহলে আবার পূর্বের মতো তোমার আধিপত্ব ফিরে পাবে এবং পূর্বের মতো একচ্ছত্রভাবে সে আধিপত্ব লাভ করবে মনে রেখো। সেই সাথে বিশ্বকে তোমার প্রয়োজন অনুভব করাতে হবে তীব্রভাবে।

তোমার একনিষ্টতা ও উপকারিতার ওপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি করতে হবে।

তুমি বিশ্বের প্রতি আসমানি দীনের পয়গাম তুলে ধরো, যা দিয়ে আল্লাহ তোমায় শতাব্দি যাবত সম্মানিত করেছেন, যখন তুমি রোমবাসীর জুলুম থেকে নাজাত পেয়েছিলে, যেভাবে আজ বিভিন্ন জাতি জুলুম, দাসত্ব ও জীবন জাপনের অকল্যাণ থেকে মুক্তি লাভ করছে।

সিরিয়া! জাতি কখনো ভাষা ও সভ্যতা দিয়ে নেতৃত্ব দেয় না। এমনকি শহরের বিশেষত্ব এবং জাতির গুণাবলিতে নেতৃত্ব দেয় না।

একটি জাতি কেবল নবুয়তের বাণী, দাওয়াত ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করেই নেতৃত্ব দেয়।

আর যখনই এই বাণী জাতি সমুহের জন্য ব্যাপক ছিল এবং মানবতার জন্য অধিক কল্যাণকর ও সৌভাগ্য জনক ছিল এবং যখনই এই উদ্দেশ্য লক্ষ ছিল সুমহান ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ থেকে। মুক্ত এবং মানবধিকারের ক্ষেত্রে দৃঢ়মূল, তখন এই জাতির নেতৃত্ব ছিল।

যে জাতি এই পয়গামকে গ্রহণ করেছিল এবং এসকল উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে ধর্মের বাণী গ্রহণ করেছিল। তারাই হয়েছে গভীর, দৃঢ়মূল, বিস্তৃত ও অধিক শক্তিশালী।

তুমি এই পয়গামের অধিকারী হলে। আরে এটা তো সেই পয়গাম যা বহন করেছে আরবের বীরযোদ্ধা ও মহান দায়িরা।

শংসয় ত্যাগ করো হে সিরিয়া!! কারণ জাতির জন্য সংশয় থেকে অধিক ক্ষতিকর আর কিছুই নেই! প্রত্যয় গ্রহণ করো! বদ্ধপরিকর হও! ঈমান ও দাওয়াতের পতাকা বহন করো!! হৃদয়ে সংশোধন ও আদর্শের চেতনা লালন করো। অসৎ চরিত্র, বিনোদনপ্রীতি, সম্পদের মোহ আর আড়ম্বড়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করো!!

কারণ চরিত্রের অধঃপতন আর বিলাসিতার দ্বারা কোনো জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে না। শত্রুর বিরুদ্ধে টিকে থাকার কোনো শক্তিই থাকে না।

স্মরণ করো। আরবদের যুদ্ধজয়ের উপলক্ষ ছিলো বিলাসিতা পরিহার আর ক্ষুদ পিপাসাকে নিজেদের বাতিক বানিয়ে নেয়া।

অন্যদিকে রোমকরা আড়ম্বরতায় ডুবে ছিলো। সাম্রাজ্য নিয়ে তারা ছিলো সেচ্ছাচারী!!

ভুলে যেওনা তুমি সর্বদা একটি সীমানার ওপর আছো। তোমরা অস্ত্র পরিহার করো না। আরাম আয়েশের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না। যারা তোমার যুবকদের ধ্বংস করতে, তাদের আকিদা নষ্ট করতে, আর তোমার শক্তি নস্যাৎ করতে পায়তারা করছে, তাদের আর সুযোগ দিও না!!

আপনার মাদকাসক্ত সজনকে সারিয়ে তুলতে হলি কেয়ারের সেবা নিন
বাড়ী # ১, প্যারাডাইস ভবন, চামেলীবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা (01777014346, 01916385382)

তুমি কি ভুলে গেছো, আমাদের একটি জাতিসত্তা ছিলো, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। তোমার ভূমিতে জন্ম নেয়া দায়ী আর রাসুলগণ যখন আমাদের এখানে আসলো, তখন সেই আমরাই তাদের ডাকে সাড়া দিলাম। যেই আমারা কিনা সাম্প্রদায়িকতার সংঘাতে উম্মত্ত ছিলাম। একটি ভাষা নিয়ে উজ্জীবিত ছিলাম।

আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সব ছেড়ে মহান ইসলামি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হলাম। তোমার সুমহান আরবি ভাষা শিক্ষার ময়দানে নিরলস, অবিরাম সাধনায় নিমগ্ন হলাম। সাম্প্রদায়িকতা ভুলে গিয়ে ঐক্যের মিছিলে শরীক হলাম।

সাবধান হে সিরিয়া!! যে জাহেলি আত্মকলহ আর বিভৎস সাম্প্রদায়িকতা থেকে তুমি আমাদের মুক্ত করেছিলে, তুমি আজ নিজে তাতে জড়িয়ে পড়ো না!!

তোমার সীমানা থেকেইতো কুরাইশদের বাজপাখি উড়ে গিয়ে পাশ্চাত্যে রাজধানী গড়ে তুলে দীর্ঘ আটশত বছর সেখানে ইলমের চর্চা করেছে। সভ্যতার ভীত গড়েছে।

প্রিয় সুরিয়া!! তুমি আবার তোমার পয়গাম নিয়ে পাশ্চাত্যের কাছে আসো। তুমি পারবে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে পাশ্চাত্যকে আবার তার হারানো সভ্যতায় ফিরিয়ে আনতে!

যে ঈমানের নুর তারা হারিয়ে ফেলেছে, সেই নুরে আবার তাদের আলোকিত করতে!
উচিত ছিলো পাশ্চাত্য আর তোমার মাঝে একটা সওদা হওয়া।

তুমি যেমন তার থেকে তার এগিয়ে যাওয়ার উপকরণ আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও নানা সরঞ্জাম ক্রয় করেছো। তেমনি তোমারও কর্তব্য ছিলো, তোমার মাঝে রক্ষিত সভ্যতা সংস্কৃতিকে তার কাছে উপস্থাপন করা। যাতে তুমি তার থেকেও এদিক দিয়ে এগিয়ে যেতে। তুমি তো ঐশী মহাবাণীর প্রত্যাদেশ ও পয়গাম একাই সম্পাদন করেছও!!. তাহলে কিসে তুমি পিছিয়ে!!!

সভ্যতা তো সেটাই যাতে মানবতার কল্যাণ রয়েছে। যাতে মানবের জন্য উত্তম আদর্শ ও নমুনা রয়েছে। এমন শক্তি রয়েছে যা দিয়ে মানুষ তার বাস্তবায়ন কর‍্যে পারে।

আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে এ সভ্যতা ততক্ষণ প্রতিষ্ঠা হবে না, যতক্ষন না প্রাচ্য প্রতিচ্য একে ওপরের 'হামি' হয়। পরস্পরে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় প্রাচ্য তার ঈমানের বলে, প্রতিচ্য তার আধুনিক কর্মপদ্ধতির শক্তিতে!

সুতরাং হে সিরিয়া, তুমি তোমার বিপুল কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হও!

চলো মূল কথায় আসি!
আমাদের হিন্দে তোমার শ্রেষ্ঠত্ব আছে, আর তা চিরকাল থাকবে। সে পথে, যে পথ অবলম্বন করেছিলো মুহাম্মদ বিন কাসিম আসসাকাফি। যিনি উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিকের যুগে হিন্দুস্তানে একদল দায়ি মুজাহিদ নিয়ে এসেছিলেন, আর আহলে হিন্দ তাদের ভালোবেসে বরণ করেছিলো।

তাদের উপদেশ গ্রহণ করেছিলো। তারা অধিকাংশই ঈমানে স্বাদ পেয়েছিলো। মূলত তার হিন্দুস্তানে প্রবেশ ছিলো এক নতুন যুগের সূচনা!

প্রিয় আমার!!
এতগুলো কথা তোমায় আজ কেন বললাম জানো!?

আমার শ্বেতহস্তের তাকদির আর দায়িত্ববোধই আমাকে বাধ্য করেছে এমনটা করতে! আশা করি হয়তো এর মাধ্যমে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব কিছুটা হলেও পূর্ণ হবে। পরিশেষে আমি সকল নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করছি!

আজকের মত এটুকুই! ভালো থেকো!!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু!!!

মা-বোনদের নামে আলী মিয়া নদভীর খোলা চিঠি

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ