বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

তেহরিকে ইনসাফের জয়; যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে ইমরান খান?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুজাহিদুল ইসলাম
আওয়ার ইসলাম

পাকিস্তানের প্রচলিত দলগুলো ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) কাছে চরম পরাজয়ের পর দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যেখানে ইমরান খানের জয় হয়েছে, সেখানে পিপলস পার্টির নেত বিলাওয়াল ভুট্টো, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসী এবং যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে থাকা ধর্মীয় দলগুলোর নেতৃবর্গ পরাজিত হয়েছেন।

যদিও তেহরিক ইনসাফ দুই দশক আগে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চে ইমরান খানের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বয়স মাত্র পাচঁ বছর। তিনি দুর্নীতি মোকাবেলা করার স্লোগান দিয়ে জনগণের মন জয় করতে পেরেছেন।

তেহরিক ই ইনসাফ ২০১৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে জারদারি সরকারের আমলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জীবন-যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথমবার নির্বাচনে ভোটারদের কাছে টানতে সক্ষম হন এবং তার দল পার্লামেন্টে তৃতীয় শক্তিহিসেবে আবির্ভূত হয়।

পিটিআই গত কয়েক বছরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির বিপরীতে নিজেদের শক্তিশালী বিরোধী দল-হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।

এমনকি ২০১৪ সালে নওয়াজ শরীফের পদত্যাগের দাবীতে তিন মাসব্যাপী অবস্থান ধর্মঘটের কারণে দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে।

দুর্নীতির ট্রাম্প কার্ড

লেখক সাংবাদিক মুহাম্মাদ আলি ওজিরি মনে করেন, তেহরিক ইনসাফ সিন্দে পিপলস পার্টির শক্তি সংকুচিত করতে এবং পাঞ্জাবে ভুট্টো পরিবারের বিভিন্ন ছিট দখল করতে সক্ষম হয়েছে। অনুরুপভাবে পিপলস পার্টির বড় বড় নেতাকে নিজেদের দলে বাগিয়ে নেয়, যারা এখন তেহরিকে ইনসাফের উচ্চপদে রয়েছেন।

২০১৬ সালে ফাস হওয়া পানামা পেপার্সে নওয়াজ পরিবারের এমন সম্পদ ও আয়ের উৎসের খোঁজ পাওয়া যায় যা নওয়াজ শরীফ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রকাশ করেননি। এটিই ইমরান খানের হাতে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে জমা হয়; এর সূত্র ধরেই নওয়াজের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা শুরু হয়।

২০১৭ সালে জুলাইয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে চলে যেতে হয়। তারপর জেলেও যেতে হয়েছে।

অনুরুপভাবে তেহরিকে ইনসাফ সাবেক প্ররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ, নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজের মতো তারকা প্রার্থীদের পরাভূত করতে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই নতুন করে উঠে আসা পিটিআই ‘নতুন পাকিস্তানের স্লোগান’ দিয়ে প্রচলিত দলগুলোর বুহ্য তুড়ে দিয়ে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে।

তবে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রীর পদ ফুলেল হবে না; পশতুন গোষ্ঠী থেকে আসা ইমরান খানের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষত প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী দলগুলো এখনো তাদের ঘাটিগুলো ধরে রেখেছে; নওয়াজ শরীফের অধীনে রয়েছে পাঞ্জাবের স্থানীয় সরকার এবং পিপলস পার্টির দখলে রয়েছে সিন্দের স্থানীয় সরকার।

কারেশম্যাটিক শক্তি

যদিও ইমরান খান একজন সফল ধারা ভাষ্যকার এবং পাকিস্তানে তার মা শওকত খানমের নামে বড় ধরনের দাতব্য ক্যান্সার হসপিটাল রয়েছে। কিন্তু বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইফুল্লাহ খালেদ বলেন, খানের আরো রাজনৈতিক পরিপক্কতা প্রয়োজন; তার দলের অধিকাংশ নেতা সেই সব দলের সাবেক নেতা যে দলগুলোকে ইমরান খান দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করে আসছেন।

খালিদ আরো বলেন, ইমরান খানের পারিবারিক জীবন বেশ সমালোচিত। বিশেষত তার একাধিক বিয়ে। বিশেষভাবে তার রয়েছে বৃটিশ ইহুদি স্ত্রী জেমিমা। আবার তার দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান, যিনি নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

যেখানে তিনি ইমরান খানের চরিত্র, দলের নারীদের সাথে ইমরান খানের সম্পর্ক নিয়ে বিশদভাবে লিখেছেন।

অনুরুপভাবে নেশাদ্রব্য গ্রহণ ছাড়াও অজ্ঞাত উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগও তিনি করেন। এ সকল অভিযোগকে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক খুবই স্পর্শকাতর হিসেবে উল্লেখ করেন।

বিশেষত পাকিস্তানের মতে রক্ষণশীল একটি দেশে। যাকে তার প্রতিপক্ষরা চিরদিনের জন্য তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিতে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবে।

ইমরান খানের পক্ষে এই ব্যাপক ম্যান্ডেটকে মিস্টার খালিদ সামরিক ভোট হিসেবে উল্লেখ করেন। কারণ, জনগণ মনে করে সেনাবাহিনী তেহরিকে ইনসাফকে সমর্থন করেছে।

পররাষ্ট্রনীতি

অন্যদিকে সাংবাদিক খাজা আনিক আহমাদ মনে করেন, ইনসাফ পার্টির জন্য পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করা বেশ কঠিন হবে। বিশেষত ভারত ও চিনের সাথে কৌশলগত বন্ধুত এবং আফগানিস্তানের সংঘাতের ভবিষ্যত নিয়ে।

তিনি আরো বলেন, চিন ইমরান খানের অনুসৃত রাজনৈতিক কর্মপন্থায় বেশ বিরক্ত। কারণ তার বিভিন্ন কর্মপন্থার কারণে গোয়েদার বন্দর ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রকল্প বাধাগ্রস্থ হয়েছে।

অনুরুপভাবে পাকিস্তানের উল্লেখ্যযোগ্য বন্ধু তুরস্কেরও এ দলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। কারণ, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান পাকিস্তান এলে ইমরান খান তার দলের নেতাদের তুর্কি প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাত বর্জন করার আহবান জানান।

খাজা আরো বলেন, মুসলিমবিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তির অধিকারী পাকিস্তানের মসনদে আগমনকারী ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে একমাত্র সেনাবাহিনী।

আলজাজিরা আরবি থেকে মুজাহিদুল ইসলামের অনুবাদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ