শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘আমার মনের আশা; এমন একটি দেশ জাতিকে উপহার দেবো’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত এলাকা ইটনা। যেখানকার তরুণরা শহরে এসে পড়ালেখা করা দুঃস্বপ্ন বলে মনে করে। সেই দুর্গম হাওরাঞ্চল থেকে উঠে আসা এক তরুণের নাম মাওলানা নাসিরুদ্দীন

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে পাশে বয়লায় অবস্থিত জামিয়া নূরানিয়া তারাপশা মাদরাসা থেকে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে অনুষ্ঠিত দাওরায়ে হাদীসে পরীক্ষা দিয়ে ১৪৭৪৭ জন ছাত্রের মাঝে মেধা তালিকায় অর্জন করেছে দ্বিতীয় স্থান।

তার এমন ঈর্ষণীয় ফলাফল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পুরো কিশোরগঞ্জ জেলায়। হাওরের কাঁদামাটি থেকে উঠে আসা তরুণ, মফস্বলের একটি মাদরাসায় পড়ে এমন ঈর্ষণীয় ফলাফল করার পেছনের কারণ এবং তাঁর বর্তামান অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মুখোমুখি হয়েছিল আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকমের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসান

আওয়ার ইসলাম: আপনি সারা বাংলাদেশে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করছেন, অনুভূতি কেমন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন : আমি দ্বিতীয় হইনি। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে আমাকে এ নেয়ামত দান করেছেন সুতরাং অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তির মতই আমার অনুভূতি। শুধু বলব এটা আল্লাহর অনুগ্রহ।

আওয়ার ইসলাম: নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তবু এর পেছনে আপনার শ্রম রয়েছে। তো আমরা জানতে চাচ্ছি পড়ালেখায় বিশেষ কী পদ্ধতি আপনি অবলম্ব করেছেন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: আমার উস্তাদদের পক্ষ থেকে যে দিক নির্দেশনা পেয়েছি। অর্থাৎ মুতালা, তাকরার, দরসে উপস্থিত থেকে রুটিন অনুপাতে চলা, আমি মনে করি এটাই সফলতার মূলমন্ত্র।

এর চেয়ে বিশেষ কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করিনি। উস্তদের দেয়া নিয়ম কানুন মেনেছি। সম্পূর্ণ পারিনি তবে মানতে চেষ্টা করেছি।

আওয়ার ইসলাম: পরীক্ষায় প্রস্তুতির রুটিন কী ছিল?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: প্রস্তুতি বলতে ছিল বিষয়ভিত্তিক মাসায়েল আত্মস্ত করা। শাব্দিক তাহকীক ও হাদীসের জটিল স্থানের সমস্যা নিরসণ- সাথে ছিল সালাতুল হাজত ও দুআ।

আওয়ার ইসলাম: আপনার পরিবার বা বন্ধুরা এ সাফল্যের পর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন : আমার পরিবার বন্ধু বিশষ করে উস্তাদদের মাঝে যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি তাতে আমি অভিভূত। তাদের আন্তরিক দুআর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের মতো মহব্বতকারী পেয়ে আমি গর্বিত। তাদের আন্তরিকতা আমাকে প্রেরণা দেবে চিরদিন।

আওয়ার ইসলাম: আপনার সফলতার পেছনে কার অবদান?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: আমার সফলতার পেছনে সব চেয়ে বেশি যাদের অবদান। তারা আমার শ্রদ্ধাভাজন উস্তাদ। যারা আমাকে দিয়েছে সর্বোত্তম পরামর্শ। যুগিয়েছেন প্রেরণা। তাদের সান্নিধ্যে ফিরে পেতাম হারানো চেতনা।

মনে হত আমাকে নিয়ে তারা আমার থেকেও চিন্তিত। আমার জন্য তাঁরা কায়মনোবাক্যে দুআ করেছেন, অশ্রু ঝরিয়েছেন কত রাত! তার সীমা নেই। তাদের সেই দুআ সেই মেহমত আর পরামর্শের নগদ ফলাফল আমাদের চোখের সামনে।

আশা করি আখেরাতেও আমরা দেখতে পাব, যা থাকবে সীমাহীন। সফলতা আমর নয় সকল সফলতা তাদের। আমি শুধু বাহন যার মালিক তারা। পিতা মাতার বরকতময় দুআও অনেক ক্ষেত্রে বহু অবদান রেখেছে। সবার জন্য হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও দুআ।

আওয়ার ইসলাম: গ্রামে নাকি পড়াশোনা কম হয়, আপনি কিভাবে এ সফলতা অর্জন করলেন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন : গ্রামে পড়াশোনা কম হয় এটা আগে ছিল এখন আর নেই। যেকোন ছাত্র যদি উস্তাদের তত্ত্বাবধানে থেকে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলে তাহলে তাদের সফলতা নিশ্চিত। ইনশাআল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম: এখন কী করছেন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: বর্তমানে আমি যে মাদরাসা থেকে দাওয়ারে হাদীস পরীক্ষা দিয়েছি সেই কিশোরগঞ্জে পরিচিত মাদরাসা জামিয়া নূরানিয়া তারাপাশায় ‘কিসমুত তাদবীর ফি উলুমিল হাদিস’ অধ্যায়নরত আছি।

আওয়ার ইসলাম: ভবিষ্যতে মাদরাসায় চাকরি করবেন না ভিন্ন কিছু?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: আমি দ্বীনের খেদমতের আশায় পড়াশোনা করেছি। তাই দ্বীনের খেদমত করব। ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করুন আমীন।

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা কেমন মনে হয় আপনার কাছে?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশের কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা আমার কাছে অনেক সুপরিকল্পিত এবং সুবিন্যস্ত মনে হয়। যা একজন মুসলিম শিশুকে ধীরে ধীরে বিজ্ঞ আলেম হিসেবে গড়ে তুলতে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে।

আওয়ার ইসলাম: শিক্ষাপদ্ধতি ও সিলেবাস সংস্কার প্রয়োজন কিনা, যেমনটি অনেকেই মনে করছেন আজকাল?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাস নিয়ে দুটি মত দেখা যায়। একদল বলেন, এই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই আমাদের আকাবিররা বড় হয়েছেন। আরেকদল বলেন, যুগের চাহিদা অনুযায়ী এ শিক্ষা পদ্ধতি এবং সংস্কার প্রয়োজন।

আমি বলব, এখনো আমাদের মাঝে ভিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম বিদ্যমান আছেন তারা যুগ ও চাহিদ অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত দেবেন এটাই আমার অভিমত। কারণ যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতায় তাঁরা আমার থেকে বহুগুণ এগিয়ে।

আওয়ার ইসলাম: মাদরাসা সরকারি স্বীকৃতি হলে ভালো হয় নাকি স্বীকৃতি ছাড়া?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: কওমী মাদরাসা সরকারি স্বীকৃতি নিয়েও দুটি অভিমত দেখা যায়।
এক পক্ষের যুক্তি হলো এতে খেদমতের ময়দান অনেক বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকারও কওমী শিক্ষার্থীদের দ্বারা উপকৃত হবেন।

আরেক পক্ষের যুক্তি হলো। স্বীকৃতি হয়ে গেলে আজ না হয় কাল কওমী মাদরাসাগুলো হারাবে তার স্বকীয়তা। নাকে রশি লেগে যাবে উলামায়ে কেরামের। খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা হবে। আমার ক্ষুদ্র অভিমত।

এ ক্ষেত্রে আমরা নবীনরা কিছু না বলে মুরুব্বীদের উপর রেখে দিই বিষয়টা। তাদের চিন্তা চেতনার অনুসরণ করি। আমি মনে করি এতেই আমাদের কল্যাণ।

আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশকে নিয়ে কেমন স্বপ্ন দেখেন?

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: এখন আমার মনে চায় বলতে গেলে এটা আমার মনের বড় আশা- সোনার বাংলাদেশেক পূর্বের মতো দেখবো। অর্থাৎ যেখানে থাকবে ইমাম মালেক রহ. মতো শানদার হাদীসের দরস।

থাকবে ইমাম আজম রহ. এর মতো ৪০ সদস্যের ফিকাহ বোর্ড। থাকবে সব বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ। যেখানে থাকবে সোনালি যুগের মতো মায়া, মমত, বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব। বিদায় নেয়ে হিংসা, বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি।

যেখানে থাকবে ইসলামি বিশাল বিশাল গবেষণাগার। আবারো তৈরি হবে নানুতুবী, গাঙ্গুহী, রুমী ও গাযানী। থাকবে ইসলামি শাসন। চিরতরে উঠে যাবে সর্বপ্রকার দূর্নীতি। ফিরে পাবো ১৪ শ বছর পূর্বের যুগ।

কিন্ত বর্তমানে তা কতটুক সম্ভব আল্লাহ ভালো জানেন। তবে এমন একটি দেশ জাতিকে উপহার দেয়ার স্বপ্ন দেখি প্রতিনিয়ত।

আওয়ার ইসলাম : আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মাওলানা নাসিরুদ্দীন: আমার পক্ষ থেকেও আওয়ার ইসলাম পরিবারের প্রতি এবং পাঠক মহলের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।

আরও পড়ুন: দুই পীরের প্রথম বায়তুল্লাহ দেখার অনুভূতি

হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা : কোন মাদরাসায় কয়টি মেধাস্থান?

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ