ইসলামের উত্তরাধিকার আইন উপেক্ষা করে জাতীয় নারী নীতিমালা প্রণয়ন, ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগারদের সীমাহীন ঔদ্ধত্য ও জাতীয় সঙ্কটের মুহূর্তে আকস্মিকভাবে হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব।
যদিও হেফাজত শুরু থেকে নিজেকে একটি ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ হিসেবে দাবি করে আসছে তবুও হেফাজতের আগমন অপ্রস্তুত করে দেয় ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশী উভয় শিবিরকে। পাল্টে দেয় জাতীয় রাজনীতির অনেক হিসেব।
এবারও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে নতুন হিসেব। হেফাজতের প্রভাব প্রতিপত্তি কাজে লাগাতে, হেফাজতের সঙ্গে সখ্য তৈরি করতে উদগ্রীব অনেকেই। কিন্তু হেফাজত কি পারবে হিসেবটা রক্ষা করতে?
সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশিষ্ট আলেম সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ। উত্তর সংগ্রহ করেছেন আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম : হেফাজত ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা আছে কি?
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ : হেফাজতে ইসলামের কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই। হেফাজতের মূল দর্শন হলো দীনি, ঈমানি ও বিশ্বাসগত; প্রতিরোধমূলক দর্শন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে দেশের এক শ্রেণির মানুষের নৈরাজ্যমূলক মন্তব্য, আঘাত, ইসলামবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রের উগ্র প্রকাশের মুহূর্তে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে হেফাজতে ইসলামের আত্মপ্রকাশ।
এজন্য বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতির আলোকে হেফাজতের কোনো রাজনৈতিক দর্শন আছে বলে আমার মনে হয় না।
আওয়ার ইসলাম : তাহলে হেফাজতের আন্দোলন ও দাবি আদায়ের চেষ্টাটা কোন অবস্থান থেকে করা হচ্ছে?
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ : এটাকে একটি তাত্ত্বিত বা আত্মিক দর্শন বলা যেতে পারে।
ইসলামের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের প্রতিরোধ করা এবং ময়দান থেকে সেই আগ্রাসন মোকাবেলায় রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করা। হেফাজত তার অবস্থান শুরু থেকেই পরিষ্কার করে আসছে।
আওয়ার ইসলাম : তাহলে বারবার কেনো নির্বাচন, রাজনীতি ও ক্ষমতার হিসেব নিকেশের সাথে হেফাজতের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে?
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ : আমার মনে হয়, সেটা দু’কারণে হচ্ছে। আমাদের দেশে যারা মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে তারা ইসলামি সংগঠনের নানামাত্রিক রূপ ও ভেতরের বিভাজন সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন না। তারা বিষয়গুলো বোঝে না।
আমি বিষয়টি এভাবে বলতে চাই, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিতে যুক্ত আছে এমন অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত। বিশেষত বাম দলগুলোর সাথে।
কিন্তু কখনো বলা হয় না অমুক সিটি নির্বাচনে ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির অমুক নেতা এতো ভোট পেয়েছেন। বরং তার রাজনৈতিক দলের নামই বলা হয়। এটা করা হয়, কারণ তারা সেখানের বিভাজনগুলো সম্পর্কে সচেতন।
একজন লোক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে একটি সংগঠনের সাথে জড়িত, জাতীয় আন্দোলনের অংশ হিসেবে একটি সংগঠনের সাথে জড়িত, আবার রাজনৈতিকভাবে আরেকটি সংগঠনের সাথে যুক্ত- তাদের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে তারা যেমন সচেতনতার প্রকাশ ঘটান, ইসলামি ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রে তারা এমন সচেতনতা লালনও করেন না, আবার প্রকাশও করেন না। ফলে তালগোল পাঁকিয়ে যায়।
দ্বিতীয় কারণ হলো, হেফাজতে ইসলামের সব নেতা অরাজনৈতিক নয়। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন ইসলামি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। মিডিয়াকর্মীরা অজ্ঞতাবশত অথবা জ্ঞাতসারে কখনো কখনো তাদের ভালো-মন্দ, রাজনীতি ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের সাথে হেফাজতের নাম জড়িয়ে ফেলে।
আওয়ার ইসলাম : আমার মনে হয়, হেফাজত রাজনীতির মাঠে না থাকলেও তাদের রাজনৈতিক প্রভাবকে তারা ভয় পায়।
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ : যে কোনো জাগরণমূলক আন্দোলনের একটি প্রভাব রাজনীতিতে থাকে। যেমন এখনকার কোটা আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। কিন্তু তার একটা প্রভাব স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। সেটা প্রচলিত অর্থে রাজনৈতিক প্রভাব বলা যায় না।
সেই অর্থে আমি হেফাজতের ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ এ কথার সাথে পুরোপুরি একমত হতে পারছি না।
তবে এ কথা ঠিক যে কোনো জাগরণমূলক আন্দোলনের প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে পড়েই। যারা রাজনীতি করেন– সেটা নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি হোক বা ক্ষমতায় যাওয়ার- এ প্রভাবগুলোর উৎসের সঙ্গে, প্রভাবগুলোর নানা গতির সঙ্গে তাদের হিসেবে-নিকেশের মিল খোঁজার চেষ্টা করে। এটা খুব স্বাভাবিক।
আওয়ার ইসলাম : আপনিও বললেন, হেফাজতের অনেক নেতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। হেফাজত কি তাদের প্রভাব এড়াতে পারবে?
মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ : এ প্রশ্নটা আমার সামর্থ্যের বাইরে। আমার কাছে মনে হয় পারবে। যদি হেফাজতের সব নেতা বা ৯০ ভাগ নেতা যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাদের রাজনৈতিক কর্ম-তৎপরতা বজায় রাখেন।
আর হেফাজত তার সাইনবোর্ড সেখানে ব্যবহার করতে না দেয় তাহলেই তো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে পারি এটা হেফাজতের রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়।
অন্যসব কিছু হলেও হেফাজত তার নাম-সাইনবোর্ড-শিরোনামসহ কখনো রাজনৈতিক কোনো পদক্ষেপে যাবে না এবং তার দরকারও হবে না। কারণ তাদের সবার দল ও পরিচয় আছে।
হজের বিধানে ‘কুরবানী’ বলে কোন শব্দ নেই
-আরআর