আওয়ার ইসলাম: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ফররুখ আহমদ জন্মশতবার্ষিকী উৎসব। কবির জন্মদিন ৩০ জুন শনিবার সাহিত্যপাড়ায় দোলা লেগেছিলো সে উৎসবের।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শহীদ সুলেমান হলে রেঁনেসার কবির উৎসবে জড়ো হয়েছিলেন শত শত কবিতাপ্রেমী। শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে উৎসবটি ছিলো প্রাণবন্ত।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবি আল মুজাহিদী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফররুখপুত্র কবি আহমদ আখতার।
ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উৎসবে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন কবি কথাশিল্পী সোলায়মান আহসান।
এতে কবি গবেষক মুসা আল হাফিজসহ চারজন বরেণ্য সাহিত্যিককে ফররুখ জন্মশতবার্ষিকী সাহিত্যপদক প্রদান করা হয়। পদকপ্রাপ্ত অন্য লেখকরা হচ্ছেন, ষাটের দশকের প্রধান কবি আফজাল চৌধুরী (মরণোত্তর), মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাবেক সভাপতি, কবি রাগীব হোসেন চৌধুরী, ফররুখগবেষক কবি মুকুল চৌধুরী।
মাহবুব ফেরদৌসের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুক্তাবিস উন নূর।
শুভেচ্ছাবক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ কবি কালাম আযাদ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) যুবায়ের সিদ্দিকী, প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী, কবি, কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, এডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী, প্রফেসর ছয়ফুল কবির চৌধুরী, লেখক, গবেষক আবদুল হামিদ মানিক, ডাক্তার মাশুকুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কবি আল মুজাহিদী বলেন, ফররুখ বাংলা সাহিত্যে অমর, অনন্য।বিশ্বজনীন আদর্শবাদকে উপজীব্য করে কালজয়ী সাহিত্য তিনি রচনা করেছেন। তিনি দেশের প্রতিটি জেলায় ফররুখ একাডেমী স্থাপনের আহবান জানান।
ফররুখপুত্র আহমদ আখতার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগেই ফররুখ আহমদ তার কবিতায় এদেশের সাংস্কৃতিক সীমানা তৈরি করে দেন। তাকে মানবতাবাদ ও সাম্যবাদের প্রেরণা ছাড়া বিচার করা অন্যায়। তিনি সব মানুষের কবি ও ভাষ্যকার।
সভাপতির বক্তব্যে মাসউদ খান বলেন, ফররুখের প্রতি কেবল রাজনৈতিক কারণেই অবিচার করা হয়েছে। অথচ তার কবিতা দল মত ও রাজনীতির কবিতা নয়, তার কবিতা হচ্ছে জাতীয় জাগরণের কবিতা।
পদকপ্রাপ্ত কবিদের মধ্যে অনুভুতি প্রকাশ করেন কবি মুকুল চৌধুরী ও কবি মুসা আল হাফিজ।
মুকুল চৌধুরী বলেন, ফররুখ সাহিত্য পুরষ্কার প্রথম পেয়েছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। তিনি বলতেন, এটা তার বিশেষ অর্জন। ফররুখ জন্মশতবার্ষিকী সাহিত্য পদক অত্যন্ত মর্যাদাময় পুরষ্কার। এটা আমার জন্যও বিশেষপ্রাপ্তি। এ পুরষ্কার ফররুখ গবেষণায় আমাকে আরোও অনুপ্রাণিত করবে।
কবি মুসা আল হাফিজ বলেন, ফররুখের কবিতা এমন এক পৃথিবী, যা কেবলই তার। তার মতো এতো স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত কবি বাংলা সাহিত্য কেন, বিশ্বসাহিত্যেও গণ্ডায় গণ্ডায় নেই। ফররুখকে বিচার করা উচিত, তার কবিতার শিল্প, দর্শন,সৌন্দর্য ও প্রকরণ দিয়ে।
কিন্তু তাকে সেভাবে বিচার করা হয়নি। তাকে ঢালাওভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। ধর্মীয় অাদর্শের কারণে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ অথবা বুদ্ধদেব বসুও যার যার ধর্মাদর্শের স্তবগান করে গেছেন।
অনুষ্ঠানে ফররুখের জীবন ও সাহিত্যভিত্তিক ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়। কবির গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পীগণ। তার কবিতা অাবৃত্তিতে অংশ গ্রহণ করেন বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী ও বাচিকশিল্পীগণ।
-আরআর