রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

কেন এরদোগানের বিজয়ে আমরা আনন্দিত হয়েছি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রেজাউল কারীম আবরার
লেখক ও মুহাদ্দিস

তুরস্ক বললেই একটি নাম ভেসে উঠে। ইস্তাম্বুল! পূর্বের কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টান্টিনোপল! বায়জান্টাইন সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমানের ইস্তাম্বুল। তৎকালিন পৃথিবীর সবচেয়ে অজেয় দুর্গ ছিল সেটি। সর্বদিক বিবেচনা করে কেউ অবরোধ করে সফল হতে পারত না।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান করে গেছেন তার জীবদ্দশায়। এরপরের ইতিহাস দীর্ঘ। সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যত বাণী সত্য প্রমাণিত হয়। বায়জান্টাইনরা মুসলমানদের কাছে পরাজয়বরণ করে। সে সময় থেকে কনস্টান্টিনোপল মুসলমানদের দখলে আসে।

উসমানি খেলাফত পুরোটাই ছিল তুরস্ক কেন্দ্রিক। দীর্ঘ ৮০০ বছর উসমানি খেলাফত পরিচালিত হয়েছে এখান থেকে। মুসলমানদের সর্বশেষ খেলাফত ছিল উসমানি খেলাফত। ১৯২৩ সালে কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে উসমানি খেলাফতের কবর রচিত হয়। মুসলমানরা ইসলামের শুরু যুগ থেকে চলে আসা খেলাফত থেকে দীর্ঘদিন পর বঞ্চিত হয়।

আতাতুর্ক তুরস্ক থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আজান, নামাজ নিষিদ্ধ করেন। মহিলাদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেন। কুরআন পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আয়া সুফিয়াকে যাদুঘরে পরিণত করেন। আরবি ভাষা নিষিদ্ধ করেন। তুরস্ক থেকে ইসলামের নাম-নিশানা চিরতরে মুছে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। মনে হচ্ছিল তুরস্কও স্পেনের পরিণতির দিকে এগুচ্ছে!

শায়খ মুনদারিস রহ. সহ কেউ কেউ গোপনে জীবনের ঝুকি নিয়ে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে গেছেন। কিছুদিনের মাঝেই তুরস্ক তার শেকড় ভুলতে শুরু করে। পুরোপুরি ইউরোপীয় কালচারে বেড়ে উঠতে থাকে তুরস্কের নতুন প্রজন্ম। মদ, ব্যভিচার এগুলো ব্যাপক হয়ে যায় সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহের তুরস্কে।

আতাতুর্কের তুরস্ক আর আজকের তুরস্কে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তুরস্ক চাচ্ছে আবারো শিকড়ে ফিরে যেতে। বর্তমানে তুরস্কে ধর্ম পালন করতে কোনো বাধা নেই। শায়খ আলি তানতাবি রহ. ব্যথাভরা হৃদয়ে আয়া সুফিয়াকে নিয়ে লিখেছিলেন।

তিনি আফসোস করেছিলেন, হায়! এমন কোনো মুসলমান আসবে না যে পূণরায় আয়া সুাফিয়াতে নামাজ শুরু করবে? শায়খ আলি তানতাবি রহ. বেঁচে থাকলে হয়ত খুশি হতেন। কারণ আয়া সুফিয়ার আকাশচুম্বি মিনার থেকে আবারো পাঁচ ওয়াক্ত মুয়াজ্জিনের সুরলহরি ছড়িয়ে পড়ে বসফরাসের কোল বেয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের ইথারে ইথারে। আল্লাহর বান্দারা নামাজ আদায়ের জন্য আবারও পাঁচবার উপস্তিত হন আয়া সুফিয়ায়।

এরদোগানকে আমরা খলিফা মনে করি না। তার সকল কাজ ইসলাম সম্মত এমনটাও বলি না। কিন্তু তাকে ভালবাসার অনেক কারণ রয়েছে। কারণ আতাতুর্কের তুরস্কে তিনি আবারো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বিশ্ব মোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঠিকই তিনি তুরস্কে আরবি ভাষা চালু করেছেন। ইসলামি শিক্ষা চালু করেছেন। মসজিদগুলো মুক্ত করেছেন। তুরস্কের মহিলারা হিজাব পরিধান করতে শুরু করেছে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে তুরস্কে হিজাব পরা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ!

কামাল আতাতুর্কের দলকে পরাজিত করে এরদোগান নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করেছেন। স্বাভাবিকভাবে কোনো মুসলমান আতাতুর্কের দলকে সাপোর্ট করতে পারে না। করা সম্ভবও না। স্বাভাবিকভাবেই সকল মুসলমান এরদোগানকে সমর্থন করেছেন। কারণ কোনো মুসলমানই চায় না আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাক তুরস্ক।

এরদোগান ইতিমধ্যে ভীষণ ২০২৩ ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশে এসেও তিনি মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের কথা বলে যান। যদিও মিডিয়া সেগুলো প্রচার করেনি। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেন। যদি দাদার দেশ এত টাকা আমাদের ঋণ দিত, তাহলে মিডিয়া হয়ত কয়েক মাস তাদের গুণগান বর্ণনা করতে থাকত। কিন্তু এরদোগানের অনুগ্রহ নিয়ে আমাদের মিডিয়ার কোনো আগ্রহ নেই! কারণ, তিনি তাদের মাথা ব্যথা। সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের পক্ষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।

মুসলমানদের পক্ষে কথা বলার মত যখন কেউ নেই, খাদিমুল হারামাইনরা যখন তৈলমর্দনে ব্যস্ত, তখনর বারবার বিশ্ব মোড়লদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের কথা বলেছেন। নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

আপনাকে বুঝতে হবে এরদোগান ইচ্ছেমত কাজ করতে পারবেন না। চাইলেই তিনি তুরস্কে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। মুরসির কথা ভাবুন। কী পরিণতি তাকে এবং তার দলকে বহন করতে হচ্ছে?

এরদোগানকে আমিরুল মুমিনিন ভাবা যেমন ঠিক নয়, এমনভাবে তার বিরোধিতা করাও অনুচিত। তার বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করলেও সমস্যার কিছু দেখি না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবারা রোমানদের বিজয়ে আনন্দিত হয়েছেন!

কারণ তারা ছিল আহলে কিতাব! এরদোগান তো মুসলমান। বর্তমান তুরস্ক নির্মাণের মহানায়ক। সুতরাং তার বিজয়ে বিশ্বের মুসলমানরা আনন্দিত হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এরদোগানের বিজয়ে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের শিক্ষণীয় কী?

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ