বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
শনিবার মতিঝিলের জামিয়া দ্বীনিয়া শামসুল উলুমে বয়ান করবেন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন: টিএসসিতে শহীদ পরিবারের আর্তনাদ দ্বীনিয়াতের প্রধান মাওলানা সালমানের জন্য দোয়া চাইলো পরিবার রংপুরে জুম্মাপাড়া মাদরাসার ২ দিন ব্যাপী তাফসির মাহফিল আগামীকাল ন্যায়পরায়ণ-আল্লাহভীরু শাসক ছাড়া শান্তির আশা করা যায় না: চরমোনাই পীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শরীআহ চেয়ারম্যান হলেন মাওলানা মাহফজুল হক সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চাই: অ্যাটর্নি জেনারেল আসছেন না মাওলানা সাদ; আগের নিয়মেই চলবে কাকরাইল ও ইজতেমার মাঠ কাল বাদ ফজর বসুন্ধরা মারকাজে বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান

এরদোগানের বিজয়ে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের শিক্ষণীয় কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ত্বরিকুল ইসলাম
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এরদোগান কি কখনো নিজেকে মুসলিম বিশ্বের সুলতান বা ‘খলিফাতুল মুসলিমীন’ দাবি করে বক্তব্য দিয়েছেন? আমার জানামতে, দেননি।

যদি দিয়ে না থাকেন, তাহলে আমাদের দেশে একদল তাকে ‘খলিফাতুল মুসলিমীন’ বানিয়ে দিচ্ছেন, আবার আরেকদল এটা খণ্ডানোর জন্য এরদোগানকে নিয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীনভাবে ট্রল করছেন। পুরাই ডিজগাস্টিং!

যারা এরদোগানকে এখনই ‘খলিফাতুল মুসলিমীন’ বানিয়ে ছাড়ছেন, তারা আসলে পশ্চিমা মিডিয়ার প্রপাগান্ডায় তাল মেলাচ্ছেন।

এরদোগানকে ‘সুলতান’ কিংবা ‘খেলাফতপন্থী’ আখ্যা দিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে মূলত পাশ্চাত্য মিডিয়া ও ইহুদি-খ্রিস্টান বিশ্ব মিলে। পাশ্চাত্যের আশঙ্কা, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সেকুলার ভিত্তি ভেঙে দিয়ে দেশটিকে খেলাফতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এরদোয়ান। এই ধারণা আপাতত অমূলক।

বরং এরদোগান যা করছেন, তা হলো: খেলাফত-পরবর্তী তুরস্কে প্রায় শত বছর ধরে সেকুলারিজম কায়েমের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে এবং নাগরিকদের ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যে-জুলুম ও নিপীড়ন জারি ছিল, সেই রাষ্ট্রীয় জুলুম ও নিপীড়নের খোলস পরিবর্তন করে সেকুলার অপশক্তির বিরুদ্ধে বেশ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তিনি এবং তার দল।

ইউরোপীয় ধাচে সেকুলার স্টেট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামের সাথে আধুনিক রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সংঘাতের সূত্রপাত এই তুরস্কেই।

তুরস্কে রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিকদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করে, আজান নিষিদ্ধ করে, হিজাব ও বোরকা নিষিদ্ধ করে, মসজিদ ভেঙে দিয়ে, মাদ্রাসা ও দ্বীনি শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক চলমান সেকুলার ক্রুসেডের মোকাবেলায় এরদোগানের রাজনৈতিক কৌশল সাফল্য পেয়েছে। নানা প্রতিকূলতা, চ্যালেঞ্জ ও আশঙ্কার বিপরীতে এবারের আশানুরূপ বিজয় নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক।

এরদোগান মডারেট ইসলামিস্ট। আমার কাছে মডারেট ইসলামিস্ট মানে হলো: প্রথমত গণতান্ত্রিক, দ্বিতীয়ত- ব্যক্তিগত ও আদর্শগতভাবে সেকুলার না হলেও রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেকুলারদের সাথে কৌশলগত আপসকামী।

এরদোগান মডারেট পন্থা অনুসরণ করে প্রথমেই জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক রাজনৈতিক কমর্সূচি দিয়ে নির্বাচনী সাফল্য অর্জন করে তুরস্কে ক্ষমতার দৌড়ে এগিয়ে গিয়েছেন। জনগণের মৌলিক চাহিদা ও অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণের ভিত্তিতে তার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। অর্থনৈতিক সংস্কারকাজে সফল হয়েছেন। বেকারত্ব দূরীকরণে তার বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছেন। তারপর তিনি ইসলামের ওপর সেকুলার জুলুমের বিরুদ্ধে কৌশলী লড়াইয়ে নেমেছেন। নাগরিকদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করেছেন।

এভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি জনগণের স্বার্থবান্ধব নেতায় পরিণত হয়েছেন। ফলে জনগণ তার ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে ট্যাঙ্কের নিচে বুক পেতে দিয়ে সেনা-ক্যু ব্যর্থ করে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের জানিয়ে দিয়েছিল যে, এরদোগানের সাথে জনগণ রয়েছে।

এরদোগান গণতান্ত্রিক, মডারেট ইসলামিস্ট যা-ই হোন, কিন্তু রাজনীতিতে এরদোগানের কৌশল, রূপকল্প, দূরদর্শিতা, জনসমর্থন ও বিপুল ভোট আদায় এবং ধারাবাহিক নির্বাচনী সাফল্য থেকে আমাদের ইসলামপন্থীদের জন্য কি-কি শিক্ষণীয় আছে- ভাবা জরুরি।

বিশেষত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেকুলারদের আধিপত্য খর্বকরণে এরদোগানের কৌশলগুলো ইসলামপন্থীদের জন্য বিশেষ প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে জরুরিও হতে পারে।

আমাদের দেশে ইসলামপন্থীদের মধ্যে যারা মডারেট তথা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে সেকুলারদের মোকাবেলা করতে চান, তাদের উচিত এরদোগানের রাজনৈতিক কৌশল ও কর্মসূচি অনুসরণ করা।

প্রাথমিকভাবে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণের জন্য রাজনৈতিক ইশতেহার জাতির কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এবং ক্ষমতায় গিয়ে ন্যায়-ইনসাফের সাথে সেসব বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারলে তখনই আপনার সক্ষমতার ব্যাপারে জনগণের আস্থা তৈরি হবে। তখন আপনারা ইসলাম কায়েম করতে চাইলে বিপুল জনসমর্থন এমনিই পাবেন।

জনগণের ইহজাগতিক ইস্যু ও সমস্যাগুলোর সুরাহা না করে ইসলাম কায়েম কিংবা প্রকৃতার্থেই আল্লাহর খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। যারা নেতা হিসেবে জনগণের ইহজাগতিক চাহিদা ও অধিকারগুলোই পূরণ করতে পারবে না, তাদের দিয়ে আল্লাহর হুকুমতও কায়েম করা সম্ভব না।

অন্যদিকে, যারা গণতান্ত্রিক বা মডারেট পন্থায় ইসলামের বিজয় সম্ভব নয় মনে করেন, তাদের উচিত প্রচলিত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং এই আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামোর মূলোৎপাটন ঘটিয়ে বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মপন্থার মাধ্যমে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করা। এছাড়া তাদের কোনো গতি নাই।

তবে এক্ষেত্রে একদিকে মুখে বলবো- গণতন্ত্র কুফরি, কিন্তু রাজনৈতিক ভূমিকায় দেখা যাবে- এই আধুনিক রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন-আদালত, বিচারব্যবস্থা এবং জাতীয়তাবাদের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাশীল, তাহলে এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি হয়ে যায়। এমনটা কাম্য নয়। আপনাদের রাজনৈতিক বয়ান ও কর্মসূচি পরিষ্কার করতে না পারলে রাজনৈতিক জনসমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এরদোগান! ফাতিহের কনস্টান্টিনোপল ভালো থাকুক আপনার হাতে

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ