বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন: মুফতী ফয়জুল করীম আজারবাইজান থেকে দেশে ফিরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস মারকাযুল ফুরকান শিক্ষা পরিবার পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পাসের ভর্তি কার্যক্রম শুরু ৪৯ দিনে কোরআন হিফজ করা বিস্ময় শিশু হাবিবুরকে ছাত্র মজলিসের সংবর্ধনা কাল বাংলাদেশে আসছেন সাইয়েদ আরশাদ মাদানী, জেনে নিন সফরসূচি আলেমদের রাজনীতি আল্লাহর নবীদের রাষ্ট্রীয় উত্তরাধিকার: মাওলানা ফজলুর রহমান হেফাজতে ইসলাম পিরোজপুর জেলা শাখা কমিটি গঠিত বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আশ্বাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত: ড. ইউনূস সাতকাছেমিয়া মাদরাসায় তিন দিনব্যাপী সম্মেলন আগামীকাল থেকে শুরু

‘ইসলামে একসঙ্গে তিন তালাক নেই; সমাজ ভুল ধারণায় বসে আছে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ভারতের উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামিক আইন কনফারেন্সে তিন তালাক ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ আইন বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (২১জুন) আলোচনা করেন দেওবন্দের প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল কাসেম নুমানি।

তিনি সর্বপ্রথম তিন তালাক সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, বর্তমানে মানুষ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নিয়ে এসেছে তিন তালাক। তিন তালাকের বিষয়ে উলামায়ে কেরাম ও উকিল সবারই স্পষ্ট ও স্বচ্ছ জ্ঞান থাকা চাই।

তিনি বলেন, মানুষ মনে করে তালাক বলতে তিন তালাকই। কিন্তু  এটা মানুষের একটি ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছু্ই নয়। মানুষ রাগের মাথায় এ ভুল কাজটি করে থাকে।

ভারতের দীর্ঘদিন ধরে তিন তালাক নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ও আন্দোলনের পর দেশটির আদালত তিন তালাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যদিও এর বিরুদ্ধে লাখও মুসলিম নারী আপত্তি করেছেন কিন্তু আদালাত তা মানেনি।

মুফতি আবুল কাসেম নুমানি মনে করেন, সমাজে ভুল ধারণার প্রেক্ষিতেই আদালত এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা করেছি। কিন্তু ইসলামের তালাক প্রথা ও তালাক প্রদানের বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এ ভুল ধারণা ও নেতিবাচক মানসিকতা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

মুফতি আবুল কাসেম নুমানি তার বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, কেউ যদি তালাক দিতেই চায় তাহলে শরিয়ত তাকে এক তালাকে রাজয়ি দেয়ার অনুমতি দেয়। তাকে তিন তালাক এক সঙ্গে দেয়ার অনুমতি দেয় না শরিয়ত।

শরিয়ত বলে এক সঙ্গে তিন তালাক নয় বরং একান্তই যদি তালাক দিতেই হয় তাহলে এক তালাক দিতে হবে। ইদ্দত বা সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যদি বনিবনা হয়ে যায় শুকরিয়া, না হলে আরেক তালাক দিবে।

ইদ্দত বা সময় সীমা শেষ হলে তালাকে বায়েন হয়ে যাবে। শরিয়তে তাকে আবারো বিয়ে করা যাবে হালালা (অন্যের কাছে বিবাহ বসা ছাড়া)  আবারো বিবাহ করার অনুমতি থাকবে।

শরিয়ত তালাকের বিধান এমন করেই নির্ধারণ করেছে। এক সঙ্গে তিন তালাকের কোনো স্থান নেই শরিয়তে।

কুরআনে আল্লাহ বলেন, হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দিতে চাও, তখন তাদের তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোনো সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন। (সুরা নিসা-১)

আপনার মোবাইলে ইনস্টল করুন ইসলামি যিন্দেগী

হাদিসে এসেছে, হযরত মাকিল ইবনে ইয়াসার রা. এর বোনজামাই তার বোনকে এক তালাক দিয়ে দিলো। তিনি তার বোনকে ফিরিয়ে না নেয়ায় তালাকে বায়েন (যে তালাকের জন্য বিয়ে ছাড়া সংসার করা যায় না) হয়ে গেলো।

জামাতা এসে বললেন, আমি তোমার বোনকে আবার বিয়ে করতে চাই। ইয়াসার রা. রাগান্বিত হয়ে বললেন, আমি তোমার কাছে আমার বোনকে বিয়ে দিলাম আর তুমি তাকে তালাক দিয়ে দিলে, আমি তোমার কাছে দ্বিতীয় বার আমার বোনকে বিয়ে দেবো না।

তখন আল্লাহ তায়ালা এ হুকুম করলেন,  তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদের যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। (সুরা নিসা-২)

রাসুল সা. এ আয়াত শুনানোর সঙ্গে সঙ্গে সাহাবা ইয়াসার রা. আবার তার বোনকে বিয়ে দিয়ে দিলেন পূর্বের স্বামীর সঙ্গে।

সাউদা বিনতে জামআহ রা. বালিকা মাদরাসায় খোলা হলো কিতাব বিভাগ

ইসলামি শরিয়ত বিবাহ বিচ্ছেদ কামনা করে না। আর তালাক বা বিচ্ছেদ যদি দিতেই হয় তাহলে তিন তালাক নয় বরং আবারো বিবাহের সুযোগ রেখে তালাকে বায়েন পর্যন্ত ইসলামি শরিয়ত পছন্দ করে।

আলেম উলামা আর উকিলগণ সাধারণ মানুষকে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দিলেই মানুষ সচেতন হবে। মানুষ খুব বেশি বেশি বিভিন্ন কোর্স ও কনফারেন্সের মাধ্যমে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে।

ভাই তালাক হলো দাম্পত্য জীবনের একেবারে শেষ সিদ্ধান্ত। কুরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত। (সুরা নিসা-৩৫)

আমরা যারা এ বিষয়ে জানলাম তারা তোদের কাছে পৌঁছে দিবে। তাহলেই সমাজে এ বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে যাবে। মানুষের মাঝে এ বিষয়ে  ভুল ধারণা দূর হবে।

উলামায়ে কেরাম ও উকিলগণের কাছে কেউ যদি তালাক নিয়ে আসে তাকে সঙ্গে সঙ্গে তালাকনামা লিখে দিবেন না। বরং কুরআনে বিয়ে সম্পর্কে যে আলোচনা এসেছে সেগুলো শুনাবে। বুঝানোর চেষ্টা করবে।

যে বিবাহ আল্লাহর বড় নেয়ামতগুলোর মধ্যে এক অনন্য নেয়ামত আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সুরা রুম-২১)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আল্লাহর কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করেন।

ইউটিউব ভিডিও থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ তামিম, ভিডিও লিংক

আওয়ার ইসলামকে দারুল উলুম দেওবন্দের চিঠি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ