শামীম মজুমদার: সম্প্রতি ঢাকার যাত্রাবাড়িতে ইয়াবাসহ আটক হন টেকনাফের কথিত হাফেজ শহিদুল্লাহ। পুলিশের দাবী ২৮ হাজার পিছ ইয়াবার চালান নিয়ে তিনি টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। যাত্রাবাড়ির একটি সিএনজি ফিলিংস্টেশন সংলগ্ন মসজিদ থেকে নাটকীয় কায়দায় তাঁকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি দল।
গ্রেফতারের পর শহিদুল্লাহ পটিয়া মাদরাসা ও ভারতের দেওবন্দে পড়েছেন বলে জানানো হয়। তবে পটিয়া ও দেওবন্দের ঠিক কোন মাদরাসায় পড়েছেন তার কথায় সেটি অস্পষ্ট।
বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে কওমী মাদরাসা বিদ্বেষী একটিচক্র কওমী আলেমদের বিরুদ্ধে নানাভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে লিপ্ত হন। তাদের অনেকে দেশের অন্যতম শীর্ষ ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদরাসা ও কওমীজনগোষ্ঠীকে নিয়ে জঘন্যভাবে মিথ্যাচার শুরু করেন। বিষয়টি বোদ্ধামহলকে ভাবিয়ে তোলে।
বিষয়টি পটিয়া মাদরাসার সাবেক- বর্তমান শিক্ষার্থীদের নজরে আনা হলে তাদের অনেকেই কথিত হাফেজ শহিদুল্লাহর পটিয়া মাদরাসায় পড়ালেখার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে পটিয়ার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা আমিনুল হকের সাথে কথা বললে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন-
'ইয়াবা নিয়ে আটককৃত শহিদুল্লাহ নামের লোকটি কখনও পটিয়ায় পড়েছেন বলে আমার জানা নেই। আমাদের মুহতামিম সাহেব আল্লামা আব্দুল হালিম বোখারী এ মূহুর্তে বিদেশ সফরে রয়েছেন। আপনি চাইলে বিষয়টি নিয়ে জামিয়া পটিয়ার সহকারী মুহতামিম সাহেবের সাথে আলাপ করতে পারেন।
জামিয়া পটিয়ার সহকারী মুহতামিম আল্লামা আবু তাহের নদভীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি আটককৃত ব্যক্তি পটিয়া ও দেওবন্দ মাদরাসায় পড়ালেখার কথা জানিয়েছেন। পটিয়াতে অনেক মাদরাসাইতো রয়েছে। তিনি পটিয়ার ঠিক কোন মাদরাসায় পড়েছেন তাতো উল্লেখ করেননি।
তবে আমাদের জামিয়া পটিয়া ও দারুল উলুম দেওবন্দের কোন ছাত্র ইয়াবা অথবা মাদক ব্যবসা করবে! সেবন করবে ! এটা ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল ঘটনা। আমি মনে করি এটা শুধু পটিয়া নয়, বরং পুরো কওমী মাদরাসা শিক্ষার সাথে একশ্রেণীর অসাধুচক্রের অত্যন্ত পরিকল্পিত ও সুগভীর এক চক্রান্ত ।
তারা আগে বলতো কওমী মাদরাসায় জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা হয়। এতে হাজারো চেষ্টা- তদবীরকরেও জঙ্গিবাদের সামান্যতম সম্পর্ক তারা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই কওমী মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে নতুনভাবে তারা এখন মাদকসম্পৃক্ততা প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’
এসময় আল্লামা নদভী ইয়াবাসহ আটককৃত কথিত হাফেজ শহিদুল্লাহ নামক ব্যক্তিটির জামিয়া পটিয়ায় পড়ালেখার দাবীকে নাকচকরে দিয়ে বলেন-
'পটিয়ায় প্রতিবছর একদিকে বহুসংখ্যক নবাগত ছাত্র ভর্তি হন, অন্যদিকে অনেক ছাত্র অধ্যয়ন শেষে বিদায় নেন। এসব ছাত্রদের একটা রেকর্ড ফাইল আমাদের দপ্তরে জমা থাকে।
গতকাল বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র উস্তাদদের উপস্থিতিতে একটা মিটিং আয়োজন করি। অতপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরনামে ভর্তি ফাইল তল্লাশি করি। কিন্তু তল্লাশিতে ইয়াবাসহ আটককৃত টেকনাফের শহিদুল্লাহ নামক কোন ব্যক্তি কখনো আমাদের ছাত্র ছিলো বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুতরাং তিনি আমাদের জামিয়া পটিয়ার ছাত্র নন।'
এ বিষয়ে জামিয়া পটিয়ার পক্ষথেকে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি জানানো হবে কিনা জানতে চাইলে আল্লামা নদভী বলেন-
'জামিয়া পটিয়া কওমী মাদরাসারই একটি অংশ। শুনেছি বিষয়টি নিয়ে সবাই প্রতিবাদ করছেন। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় আমি তাদের প্রতি শুকরিয়া জানাই।
শহিদুল্লাহ আলেম নয়, সন্দেহ ভিডিও ফুটেজ নিয়েও
-আরআর