আওয়ার ইসলাম : বছর ঘুরে পালাক্রমে আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতির সুযোগ নিয়ে পবিত্র রমজান আগমন করে আমাদের মাঝে। আমাদের সংযম ও সহনশীলতার অনুশীলনের জন্যেই এই সময় আল্লাহ আমাদের উপর মাসব্যাপী রোজার বিধান দান করেছেন।
রমজানে রোজা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। এছাড়া আমরা রোজা অবস্থায় এমন কিছু ত্রুটিপূর্ণ কাজ করি যার ফলে আমরা আমাদের রোজা থেকে কোন প্রকার উপকারিতা গ্রহণ করতে অক্ষম হই। নিচে এরূপ ১০টি ভুল ধারণা ও ত্রুটিপূর্ণ কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১. খাওয়া দাওয়ার উপর অধিক মনোযোগ
রমজানে দেখা যায় মানুষ রোজার থেকে খাওয়া দাওয়া নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে যায়। যদিও একজন মানুষের জন্য এত অধিক খাবারের প্রয়োজন নেই তারপরও ইফতার আয়োজনে অযথা টাকা খরচ করে।
২. ফজরের অনেক আগেই সেহরি খাওয়া
তারাবি কিংবা এশার নামাজের কয়েক ঘন্টা পরই সেহরি খাওয়া ঠিক নয়। ফজরের কাছাকাছি সময়ে সেহরি খাওয়া উচিত।
৩. ভুলক্রমে পানাহার
অনেকেই মনে করেন, কেউ যদি ভুলক্রমে কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে ফেলে, তবে তার রোজা ভেঙে যাবে। প্রকৃতপক্ষে এটি অমূলক একটি ধারণা। আপনি রোজা রাখা অবস্থায় ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তবে আপনার রোজা ভঙ্গও হবেনা বা আপনাকে পরবর্তীতে তা পূরণও করতে হবেনা।
৪. মিসওয়াক বা টুথব্রাশ ব্যবহার
অনেকেই ধারণা করেন, রমজানে রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত পরিস্কার করার জন্য মিসওয়াক বা টুথব্রাশ ব্যবহার করা যাবেনা। এটিও একটি ভুল ধারণা। রাসূল সা. এর হাদীস থেকেই প্রমাণিত আছে যে, তিনি রমজানে রোজা রাখা অবস্থায় মিসওয়াক করতেন।
এরূপ আপনি টুথব্রাশও ব্যবহার করতে পারেন। টুথপেস্টের বিশেষ ফ্লেভার থাকায় বিশেষজ্ঞগণ রোজা রাখা অবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার করতে অনুৎসাহিত করেন। তবে আপনি যদি সতর্ক থাকতে পারেন (টুথপেস্ট গিলে ফেলা থেকে), তবে আপনি তা ব্যবহার করতে পারেন।
৫. সহবাস
অনেকেই চিন্তা করেন, রমজানের পুরো মাসব্যাপী সহবাস করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটি একটি অমূলক চিন্তা। রোজা রাখা অবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ হলেও রোজার সময় শেষ হওয়ার পর ইফতারি পরবর্তী সময় থেকে সাহরীর সময় শেষ হওয়ার পূ্র্ব পর্যন্ত সহবাস করার অনুমতি রয়েছে।
৬. একত্রে যোহর-আসর আদায়
অনেকেই রয়েছেন রমজানে যোহর এবং আসর নামাজ একত্রে একই সময়ে আদায় করেন। এরূপ অনুশীলনের কোন প্রমাণ নেই এবং এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কাজ। রমজানে যোহর-আসর একত্রে আদায়ের এ ধরণের অনুশীলন সম্পূর্ণরূপে পরিহার করাই উত্তম।
৭. ইফতার গ্রহণ
কেউ কেউ মনে করেন, মুয়াজ্জিন মাগরিবের আজান না দেওয়া পর্যন্ত ইফতার গ্রহণ করা যাবেনা। এটিও একটি ভুল ধারণা। ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথে একজন ব্যক্তি ইফতার গ্রহণ করে তার রোজা ভঙ্গ করতে পারে।
৮. থুথু গিলে ফেলা
অনেকেই মনে করেন, রোজা রাখা অবস্থায় মুখের থুথু কেউ গিলে ফেলতে পারেনা। এটিও একটি ভুল ধারণা। তবে মুখে থুথু জমে গেলে বা মুখে কফে আসলে তা ফেলে দেওয়াই উত্তম।
৯. সুগন্ধী ব্যবহার
কেউ কেউ বলেন, রমজানে রোজা অবস্থায় সুগন্ধী বা তেল ব্যবহার করা যায়না। এটিও সম্পূর্ণরূপে ভুল ধারণা।
১০. ওযু করা
ওযুর সময়ে মুখের বা নাকের ভেতর পানি দেওয়াকে কেউ কেউ রোজার ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে এটিও ভুল ধারণা।
আল্লাহ আমাদের রমজানের রোজা পালনের ত্রুটি সমূহ থেকে রক্ষা করে আমাদের রোজাসমূহকে কবুল করুন।
উৎস : এবাউট ইসলাম।
আরও পড়ুন : রমজানে কেমন আছে রোহিঙ্গারা?