বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


রাজধানীর জলাবদ্ধতা: ভরা বর্ষায় পরিণতি কী হবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে সামান্য বৃষ্টিতেই জলজটে অচল হয়ে পড়ছে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা। কোথাও কোথাও তা স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। গত সপ্তাহের রবিবার ও সোমবার ঢাকায় দিনব্যাপী থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নগরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। একই সাথে ছিল যানজট।

দুদিনের বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ঢাকার অলি-গলি থেকে শুরু করে মূল সড়কের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি জমে যায়। গত বছর বর্ষায় এর মাত্রা ভয়াবহ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা এ বছর জলাবদ্ধতা সমস্যার নিরসন হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর বর্ষা শুরু হওয়ার বেশ আগেই সামান্য বৃষ্টির ফলে যে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বর্ষা শুরু হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।

বাস্তবতা পর্যালোচনায় বলা যায়, ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে।আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অদক্ষতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। বলা যায়, বছরে প্রায় ১২ মাসই বিভিন্ন ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজ চলে। এমনকি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বর্ষাকালেও ড্রেন পরিষ্কার ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করতে দেখা যায়। এতে একদিকে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে রাস্তা খুঁড়ে রাখায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা মিলে ড্রেন, নর্দমা নির্মাণ ও খাল পরিষ্কার করার কাজে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে, সেই পরিমাণ সুফল মেলেনি বলে মনে করেন নগরবিদরা। ১০ মিনিটে ১২০ মিটার ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জেড এন্ড সাকার মেশিন কিনলেও তাতে তেমন একটা লাভ হয়নি।

আসলে ঢাকায় পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক কোনো পদ্ধতি নেই। ফলে পানি যেতে পারে না। বলা যায়, ঢাকার রাস্তাগুলোই এখন ড্রেন হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে সারফেস ও আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন ঠিকমতো কাজ করে না। প্রতিদিন যে বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগ রাস্তায় পড়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে পানির ধাক্কায় সেগুলো ড্রেনে গিয়ে পড়ে। ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়।

মাঝেমাঝে দেখা যায়, সেগুলো পরিষ্কার করতে। আর বাকি দিনগুলোতে পরিষ্কার করা হয় না। কাজেই সংশ্লিষ্টদের উচিত প্রতিদিন বিশেষ করে বর্ষায় প্রতিদিন ড্রেন পরিষ্কার করা। ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার না করতে পারলে, বড় বড় পাইপ বসিয়ে ও ড্রেনের কাজ করে কোনো লাভ হবে না।

এদিকে গত কয়েক বছর না ডুবলেও এ বছর বর্ষায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। রাজধানীর খিলগাঁও, বাংলামোটর, মগবাজার, মানিক মিয়া এভিনিউ, সিদ্বেশ্বরী, ফার্মগেট, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়কেও রাস্তায় দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এসব এলাকা এর আগে কখনো প্লাবিত হতে দেখা যায়নি।

বিশেষ করে বৃষ্টি বা ভয়াবহ বর্ষায় ঢাকার অন্যান্য এলাকা প্লাবিত হলেও মানিক মিয়া এভিনিউ ও ফার্মগেট এলাকায় কখনো রাস্তায় পানি জমতে দেখা যায়নি। এবারই প্রথম দেখা গেল রাস্তায় পানি জমে থাকতে। কারণ হিসেবে বলা যায়, মিরপুর, কাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে।

এতে অনেক ড্রেনেজের সঙ্গে সড়কের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব হয়ত এসব এলাকায় পড়ছে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বর্ষার আগেই যখন এই পরিস্থিতি তখন ভরা বর্ষায় পরিণতি কী হবে?

soyedfaizul@gmail.com
৫ মে ২০১৮


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ