উবায়দুল্লাহ সাআদ: ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলূম মাসকান্দা মাদরাসার মসজিদে গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় হাইয়াতুল উলয়ার [দাওরা] পরীক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার বিকাল সাড়ে চারটায় হামলার শিকার শিক্ষার্থীসহ ৩২ পরীক্ষার্থীকে এক ঘন্টার মাঝে মাদরাসার ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে মাদরাসা মসজিদের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন মাওলানা সাইফুল ইসলাম। তবে বেশ কিছুদিন যাবত একটি পক্ষ চচ্ছেন না তিনি আর ইমাম থাকুক। গত শুক্রবার তাদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তিনি মসজিদে নামাজ পড়াতে গেলে সেই পক্ষ বাধা দেয়। এতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়। এ সময় কমিটির লোকজন মাদরাসা ছাত্রদের উপর চড়াও হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, পরদিন এ হামলার বিচার মাদরাসার মুহাতামিমের কাছে যান শিক্ষার্থীরা। প্রথমে তিনি বিচারের আশ্বাস দিলেও মাদরাসা কমিটির সাথে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। ওই মিটিংয়ে হামলাকারীদের অনেকে উপস্থিত ছিল বলেও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিনা বিচারে এবং বিনা তদন্তে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এক ঘন্টার মাঝে ছাত্রদের ছাত্রাবাস ত্যাগে বাধ্য করা কতৃপক্ষের উচিত হয়নি।
অভিযুক্ত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ার ইসলামকে জানান, পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল উস্তাদের আশ্রয়। আমরা আমাদের মা-বাবা সবাই কে ছেড়ে প্রিয় উস্তাদদের আশ্রয়ে ছিলাম, জীবনের দীর্ঘ একটি সময় তাদের তত্বাবধানে থেকে পড়ালেখা করেছি কিন্তু শিক্ষা জীবনের সর্বোচ্চ স্তরের পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের প্রিয় মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়াকে কোনভাবেই মেনে নিকে পারছি না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তারা আওয়ার ইসলামকে বলেন, একজন উস্তাদের উপর হামলা হতে দেখেও একজন ছাত্র হিসাবে আমরা কী করে চুপ থাকবো?
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এখন নিরাপদে নেই। যে কোনো সময় আমাদের যে কারো ওপর হামলা হতে পারে। আমরা এর সঠিক পদক্ষেপ চাই। ইত্তেফাকুল উলামা, হেফাজতে ইসলাম, হাইয়াতুল উলয়া ও বেফাকের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য ওলামাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, অনতিবিলম্বে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
এ ব্যাপারে মাদরাসার সেক্রেটারি ও মুহতামিম মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন আওয়ার ইসলামকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক সাথে সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত।
আমরা এর সুষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনবো।
ছাত্রদের অন্যায়ভাবে মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা দেলোয়ার অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সন্তানদের মাদরাসা থেকে কেন বের করে দেব? মাদরাসার শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যদের নিয়ে যৌথ মিটিং করে ছাত্রদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ পরিস্থিতিতে ছাত্ররা এখন মাদরাসায় থাকলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। যে কোনো সময় আপত্তিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসা আগেই বন্ধ ঘোষণা হয়েছে। এখন যারা হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষা দিচ্ছে এটা অতিরিক্ত অবস্থান।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এভাবে বের করা কতটুকু যৌক্তিক এমন প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা দেলোয়ার বলেন, শুক্রবারে যে ঘটনাটি ঘটেছে সে ব্যাপারে আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ছাত্ররা তা মানছে না। তারা বার বার এক দিনের, দুই দিনের আলটিমেটাম দিচ্ছে। তারা ইতিমধ্যেই মানববন্ধন ও অন্যান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এতে ছাত্র জমিয়তের নেতৃবৃন্দও সম্পৃক্ত রয়েছে। তাদের প্রকাশ্যে এমন আল্টিমেটাম ওই পক্ষের কাছেও পৌঁছে যাওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যে কারণে এসব কিছু সামনে রেখে ছাত্রদের ভালোর জন্যই আমরা মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করেছি।
[আওয়ার ইসলামের সাংবাদিকতা কোর্সে ভর্তি চলছে, ভর্তি হতে যোগাযোগ করুন ০১৯১৭০০৯৯৬৯]
এ দিকে হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন। পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশ ঠিক নয় বলেই সবার মতামত।
বিশিষ্ট লেখক, গবেষক মাওলানা লাবীব আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘হাইআতুল উলইয়ার পরীক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে মাদরাসার ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেয়া হলো এটি কওমী তালেবে ইলমদের কারণে সম্ভব হয়েছে। যারা এই ফায়সালা করেছেন তাদের সন্তান হলে কি পরীক্ষার সময় এই সিদ্ধান্ত নিতেন? কোথায় হাইআতুল উলইয়া?
আমি একজন শিক্ষক হিসেবে এই তালেবে ইলমদের হয়রানি বন্ধ করে মাদরাসায় ফিরিয়ে আনার আনুরোধ করছি।
ময়মনসিংহ জেলা যুব আন্দোলন সভাপতি মাওলানা সাইফুল্লাহ মানছুর লিখেছেন, যতকিছুই হোক তাই বলে পরীক্ষা চলাকালীন মাদরাসা থেকে বের করে দিতে হবে তাদের? ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।
মুহতামিম সাহেব যদি কমিটির চাপে এমন গর্হিত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে তা ঠিক করেন নি। ধিক্কার জানাই এমন কমিটিকে!!
কাকরাইল মারকাজকে মাওলানা সাদের চিঠি
-আরআর