শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


মালয়েশিয়ায় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে ইসলামি দলগুলো

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম

মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানাবিদ অভিযোগ তৈরি হওয়ায় সে দেশের রাজনীতিতে ইসলামি দলগুলোর উত্থান ঘটতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স।

২২ এপ্রিল রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো অনেক ভালো ফলাফল করতে পারে। এতে দেশের রাজনীতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিশেষত পার্টি ইসলাম সি-মালয়েশিয়া (পিএএস) নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ দলটি কয়েক দশক ধরে মালয়েশিয়ায় ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলনেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে দলটি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের নেতা কর্মীদের মাঝেও বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।

তাদের ধারণা, মানুষ দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাদের উপর আস্থা রাখবে এবার।

পিএএস আশা করছে, তারা এবারের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ২২২ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৪০টি আসন লাভ করবে। যা দেশ পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য যথেষ্ট।

ইন্টারনেটব্যাধিতে হেফজখানা; পরিত্রাণের উপায় কী?

যদি তারা ৪০টি আসন পায় তবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অথবা তার বিরোধী শিবির তাকে মূল্যায়ন করতে বাধ্য হবে।

২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলটি ২১টি আসন জয় করে।

যদি তাও অর্জন করতে না পারে এবং বর্তমান অবস্থায় থেকে যায় তবুও কিছু কর্তৃত্ব তাদের হাতে থেকে যাবে। যেমন বিরোধী শিবিরের ভোট বিভক্ত করা বা সরকারকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করা।

প্রতিবেদক আরও বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি থেকে যা বোঝা যাচ্ছে তা হলো পিএএস আগামী সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রাখবে। এতে সরকার ইসলামি শিক্ষা, ব্যবসায়িক নীতি ও ইসলামি কোর্টকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে চাপে থাকবে।

আর যদি তাই হয় তবে বহু সংস্কৃতির সম্মিলনে গড়ে ওঠা মালয় সমাজ প্রচণ্ড এক ঝাঁকুনির মুখোমুখি হবে।

মালয়েশিয়ার ৩২ মিলিয়ন মানুষের ৬০ ভাগ মুসলিম। অন্যরা জাতিগতভাবে চায়না ও ইন্ডিয়ান। ধর্মবিশ্বাসে বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও হিন্দু।

আপনি বা কোনো আত্মীয় কি ইন্টারনেট ও মাদকাসক্তিতে ভুগছে?

পিএএস-এর সভাপতি আবদুল হাদি বলেছেন, যদি আমরা সরকারের প্রভাব বিস্তার করার মতো অবস্থান তৈরি করতে পারি তবে সরকারকে উৎসাহিত করবো যেনো ইসলামকে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে।

আমরা চেষ্টা করবো, ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপরেখা মানুষের সামনে তুলে ধরতে।

তবে নির্বাচনে নাজিব রাজাক ও পিএএস-এর প্রধান প্রতিদ্বন্ধী ৯২ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ। যিনি বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

পিএএস-ও এ শিবিরের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। কিন্তু ৩ বছর তারা জোট ত্যাগ করে।

পার্টি ইসলামিক সি-মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১৯৮০ সালে।

সাম্প্রতিক সময়ে পিএএস দারিদ্র্য ও দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে করে জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করেছে। বিশেষত ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকে ইসলামি দলটি তার বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রেখেছে।

বর্তমানে মালয়েশিয়ায় মুসলিম নাগরিকদের জন্য শরিয়াহ আদালত রয়েছে। তবে তা পারিবারিক ও উত্তরাধিকার বিষয়ে সীমাবদ্ধ। ইসলাম ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট ফৌজদারি মামলাগুলো ইসলামিক আদালত দেখে। যেমন, মাদক ও যৌনাচার। সাধারণ ফৌজদারি মামলা কেন্দ্রীয় আদালতের অধীন।

পিএএস ইসলামি আদালতকে কেন্দ্রীয় আদালতের মর্যাদা দেয়ার দাবি জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো, পিএএসের রাজনৈতিক সাফল্য একটি সীমার বেশি অতিক্রম করতে পারবে না। কেননা মালয়েশিয়ার প্রায় অর্ধেক নাগরিক অমুসলিম। আবার মুসলিমদের একটি অংশ ইসলামি আইন বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভীতশ্রদ্ধ।

রয়টার্সে প্রকাশিত জোসেফ শিপলান ও জন কারমার্কস-এর প্রতিবেদন অবলম্বনে আতাউর রহমান খসরুর অনুবাদ

-আরআর


সম্পর্কিত খবর