শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


এখন মানুষ বুঝতে পারে না রাজনীতির চাকাটা কোন দিকে ঘুরবে: জিএম কাদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বাংদেশের রাজনীতিতে যেসব দল বড়ধরনের প্রভাব ফেলেছে সেগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্যতম। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরে প্রবর্তিত এ দল আজ বাংলাদেশের প্রধান তিনটি দলের একটি।

তবে বিভিন্ন সময় তাদের রাজনৈতিক হিসেব নিকাশের গড়মিলের কারণে দলটি আজ শরিক দলে এসে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় পার্টির বর্তমান রাজনীতির অবস্থা। আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আওয়ার ইসলাম সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের [জিএম কাদের]।

পাশাপাশি তার সঙ্গে কথা হয়েছে ফেলে আসা সোনালি শৈশব, শিক্ষাজীবন ও রাজনীতির শুরুর জীবন নিয়ে।

সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন কবি রনজু রাইম। ক্যামেরায় ছিলেন প্রতিবেদক কাউসার লাবীব

স্মৃতির ডানায় ভর করে আমরা আপনার শৈশবে ফিরে যেতে চাই। জানতে চাই ঘাস ফড়িংয়ের পেছনে দৌড়ানো দিনগুলি সম্পর্কে

আমাদের শৈশব ছিল বর্তমান শিশুদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। আর আমার শৈশব যেহেতু কেটেছে রংপুরে তাই ভিন্নটা একটু বেশিই ছিল। স্কুলে প্রথম ভর্তি হওয়া, স্কুলে দল বেঁধে যাওয়া, ইত্যাদি স্মৃতিগুলো এখনো চোখে ভাসে।

শৈশবের এমন একটি ঘটনা জানতে চাই যা স্মৃতির পাতায় বারবার উঁকি দেয়

স্কুলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ছিল। তো আমি ছিলাম খুবই দুর্বল ও রোগা। একবার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। এটা দেখে সবাই হাসাহাসি করছিল। কিন্তু ঘটনাক্রমে সে প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হয়ে যাই। তখন আমার খুশি দেখে কে!

স্যার ! আপনার রাজনীতিতে আসার গল্পটি শুনতে চাই

ছাত্রজীবনে কলেজে ছাত্র নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে এটা কিন্তু আমার রাজনীতির জীবনের শুরু ছিল না। আমার রাজনীতির শুরু হয় একটু ভিন্নভাবে।

বিভিন্ন কারণে যখন আমার ভাই হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে হলো, জেলে যেতে হলো। আমি তখন সরকারি চাকরি করি। ভাইকে তখন কেউই ভালো চোখে দেখছিল না। সে কারণে শুধুমাত্র তার ভাই হওয়ায় আমাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হলো।

আমি তখন ভাবতে থাকলাম, কীভাবে ভাইয়ার উপকারে আসতে পারি। আমি এ চিন্তা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করি, সাক্ষাত করি। তারা আমাকে পরামর্শ দেন ‘যদি ভাইয়ের জন্য কিছু করতে চাও, তাহলে রাজনীতিতে আসো। তাদের পরামর্শেই আমি রাজনীতিতে আসি।

এরপর লালমনিরহাট সদর থেকে আমি সংসদ সদস্য হই। এছাড়া কয়েকবার মন্ত্রীত্বের দায়িত্বও আমার কাঁধে আসে। এমনকি আমি বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করি।

দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আপনি বর্তমানে দলের কী অবস্থা দেখছেন?

বর্তমানে রাজনীতিতে একটা অস্থিরতা কাজ করছে, কাজ করছে অনিশ্চয়তার। ইতোপূর্বে আমার দেখা বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবেশ কখনো এমন হয়নি।

সাধারণত রাজনীতির ধারা হলো অভিজ্ঞ রাজনীতিকরা বলতে পারেন রাজনীতির চাকাটা কোনো দিকে ঘুরবে। কিন্তু এখন কেউ কিছুই বুঝতে পারছেন না রাজনীতির চাকাটা কোন দিকে ঘুরবে। সাধারণ মানুষ এখন আর্থিকভাবেও চিন্তিত।

বাংলাদেশের জিডিপি তো দিনদিন বাড়ছে। আপনি কীভাবে বলছেন বাংলাদেশের অবস্থা , বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা অস্থির।

জিডিপি দিয়ে আপনি কখনো একটি দেশের জনগণের আর্থিক অবস্থা মাপতে পারবেন না।জিডিপি ভিন্ন একটা বিষয়। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আপনাদের আস্থা কেমন?

কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি এমনিতেই মানুষের আস্থা আসে না।তাদের কাজ দেখে আস্থা তৈরি হয়। তবে বর্তমান সরকারের ছায়ায় থেকে নির্বাচন কমিশন কতটা নির্ভেজাল কাজ করতে পারবে তা জনগণ দেখার অপেক্ষায়।

নির্বাচন যদি সদিচ্ছায় কাজ করতে চায় তাহলে তাদের পক্ষে তা সম্ভবও হতে পারে না।

আগামী নির্বাচন এককভাবে করবেন নাকি কারো সঙ্গে মিলে?

এটা সামনের অবস্থার কোন দিকে যায় তা দেখে বলতে হবে। বাংলাদেশের জনগণ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল চায় এ সরকারকে ক্ষমতা রাখতে। আরেকদল চায় নতুন কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসতে।

এখন যদি আমরা দেখি শুধু সরকারি দল নির্বাচন করছে। আর কেউ তাদের অনুষ্ঠিত নির্বাচন করতে আসছে না, তাহলে আলাদাভাবে নির্বাচন করবো।

আর যদি বিএনপিসহ অন্যান্যদল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে আমরা বড়দলের সঙ্গে মিলেই নির্বাচন করবো।

পুরো সাক্ষাৎকার দেখুন ভিডিওতে...

আমরা দেখি সবসময় হাজিগণ হজের ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হয়। আপনি তো বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ছিলেন। এ বিষয়ে জানা শোনা রয়েছে।আমাদের বলুন হাজিদের এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?

সবসময় মানুষ হেনস্তার শিকার হয়’ এ কথাটি ঠিক নয়। আমি মন্ত্রী থাকাকালীন কোনো হাজি হেনস্তার শিকার হয়নি। আমি নিজে সৌদি গিয়ে সবকিছু নিজ চোখে দেখে সুন্দর ব্যবস্থা করে এসেছিলাম।

যে হাজিগণ পরিস্থিতি না বোঝার কারণে ফ্লাইট মিস করেছে, তাদের হজের জন্যও আমি ব্যবস্থা করেছিলাম। আমার সময় সৌদি সরকার বাংলাদেশকে ভাল হজ ব্যবস্থার জন্য পুরষ্কৃতও করেছিল।

মোটকথা যদি হাজিদের অযাচিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে শুধু একটু ভাল পরিকল্পনাই যথেষ্ট। সামান্য বুদ্ধিমত্তার পরিকল্পনা হাজিদের বাঁচাতে পারে ভোগান্তি থেকে।

সঙ্গে যারা এ সিজনে হজকে ব্যবসা হিসেবে নিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের প্রতি নজরাদারি করা।

হাজিদের কাছ থেকে ফোর-ডাউন ভাড়া নেওয়া হয় যা ডাবল। যে কারণে হাজিদের অনেক কষ্ট হয় । এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ফোর-ডাউন ভাড়া নেওয়ার কারণ হলো, হজের সময় শুধু কাঙ্খিত কয়টি এয়ারলাইন্সকেই হাজি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু যদি এটিকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো তাহলে এমন হতো না।

তারা নিজের সেবাকে আরো সুন্দর করতো এবং চার্জ আরো কমিয়ে আনতো । এখন তো তাদের কোনো প্রতিযোগী নেই। তাই তারা যেভাবে যা খুশি করছে। তাদের যোগ্য প্রতিযোগীদের এখানে সুযোগ দিলে এমনটি হবে না। আর মানুষও তাদের মন মতো সার্ভিস বেঁছে নিতে পারতো।

স্যার! অবসর সময় কীভাবে কাটান?

লেখালেখি, বিনোদন আর বই পড়ে।

আওয়ার ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনাদেরও ধন্যবাদ। অনুলিখন: কাউসার লাবীব

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ