মুজাহিদুল ইসলাম
আওয়ার ইসলাম
উন্নত ও গণতান্ত্রিক জীবনের নতুন ইরাকের স্বপ্নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন তারপর একই বছরের ৯ এপ্রিল বাগদাদ ও সাদ্দামের পতন।
ব্যাপক বিধধংসী রাসায়নিক এমনকি আনবিক অস্র ইরাকে রয়েছে, এমন অযুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ইরাকে সামরিক আগ্রাসনের পর দেখা যায় সেখানে এমন কিছু নেই।
উপর্যুপরি বিমান হামলার পর মার্কিন পদাতিক বাহিনী ইরাকের দক্ষিণে কারবালার কাছে ইরাকি গার্ড বাহিনীর সদস্যদের সাথে প্রথম লড়াইয়ে দেখা যায়। তারপর একে একে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হয়। একপর্যায়ে চার এপ্রিলে বাগদাদ বিমানবন্দরে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
অতিরিক্ত ইন্টারনেট-ফেসবুক কিংবা মাদকাসক্তিতে ভুগছেন? ক্লিক করুন
এ মাসের সাত তারিখ বাগদাদে ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করে সাদ্দামপ্রশাসনের ক্ষমতার অবসান হিসেবে তার বিশাল বোঞ্চের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়।
তারপরের দিনগুলোতে ব্যাপক আকারে লুণ্ঠন হতে দেখা যায়। এমনকি দখলদার আমেরিকান বাহিনীও এতে অংশ নেয়। যাতে ইরাক একাধারে কয়েক সপ্তাহ চরম বিশৃংখলার মধ্যে পড়ে যায়।
অন্যদিকে আমেরিকান বাহিনী উত্তরে অগ্রসর হয়ে কিরকুক, মসুল তারপর সাদ্দামের ঘাটি তিকরিতের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
সাদ্দাম একটি নাম, যিনি তার শাসনামলের ২৪ বছর তারপর ২০০৩ সালে গ্রেফতার সবশেষ ২০০৬ সালের ফাঁসি দেওয়া পর্যন্ত ইরাকের আবহতে তিনি ছিলেন সতত বিরাজমান। তো পনের বছর পর কেমন আছে স্বপ্ন দেখানো ইরাক। আসুন জেনে নেয়া যাক।
রাজনৈতিক অবস্থা
সাদ্দামপ্রশাসনে থাকা বাথপার্টির রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটানো হয়, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দলের পরিবর্তে ইরাকের শাসনভার আমেরিকার তত্ত্বাবধানে সাম্প্রদায়িক শিয়া শাসনের অধীনে চলে আসে।
এএফপির মতে যদিও ইরাকের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো প্রশাসন দেশের উল্লেখ্যযোগ্য সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠী তথা শিয়া,সুন্নি ও কুর্দিদের মাঝে বণ্টিত হয়ে থাকে কিন্তু এখন দেশের সব প্রতিষ্ঠান শিয়াদের নিয়ন্ত্রণে।
ইরাকে প্রায় সাত হাজার মার্কিন সৈন্য থাকা সত্ত্বেও ইরানের প্রভাব ইরাকের অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
উত্তরে কুর্দিরা সাদ্দামের পতনে উপকৃত হয়েছে বটে এবং তারা ইরাকযুদ্ধের পরবর্তী একসংবিধান তাদের স্বায়ত্তশাসন জোরদারও করেছে।
কিন্তু সংবিধান অনেক কিছুই অমিমাংসিত রেখে দেয়ার কারণে ২০১৭ সালে গণভোটের দুঃসাহস তারপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জিক বিভিন্ন চাপের পাশাপাশি বাগদাদের সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আপতত কুর্দিদের স্বাধীনতার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
এককেন্দ্রিক ধর্মীয় স্বাধীনতা
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষত ধর্মীয় নেতৃত্বে শিয়ারা ব্যাপক স্বাধীনতা পেয়েছে যেমন আয়াতুল্লাহ আলি সিসতানির বক্তব্যের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, যেন সাদ্দামের ডিক্টেটরশিপ ধর্মীয় ব্যক্তিদের মাঝে মুড়ে দেয়া হয়েছে।
এই সিসতানি আইএসের মোকাবেলায় দেশের সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য আত্মরক্ষামূলক জিহাদের ফতোয়ার মাধ্যমে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে।
অন্যদিকে এএফপির ভাষ্যমতে ইরাকে বর্তমানে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এক মিলিয়ন থেকে এর এক-তৃতীয়াংশে হ্রাস পেয়েছে।
অর্থনীতি
সাদ্দামের পতনের মাধ্যমে ইরাকের ওপর আরোপিত বার বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়, তেল রফতানির দুয়ারও খুলে যায় কিন্তু এটা সাধারণ ইরাকিদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি।
জাতিসংঘের একটি পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় আট মিলিয়ন ইরাকির দৈনিক আয় ২.২ ডলারের নিচে।
অন্যদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি অর্থনীতি-বিষয়ক একটি ইনস্টিটিউট হতে জানায়, ইরাক ২০০৩ সাল থেকে ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে কিন্তু দুর্নীতি প্রায় ৩১২ বিলিয়ন নষ্ট করে ফেলেছে।
আওয়ার ইসলাম টিভির নতুন ভিডিও
যুদ্ধের পরবর্তী সময়-সম্পর্কে কয়েকজন ইরাকি নাগরিকের বক্তব্য বার্তাসংস্থা এএফপি উল্লেখ করে, এক টেক্সি ড্রাইভার আবু আলি বলেন, বাগদাদের বিভিন্ন বিষ্ফোরণে তিনি তার দুই সন্তানকে হারান।
অন্যদিকে আরেকজন নাগরিক কায়েসুস শার বলেন, সাদ্দামের মূর্তি ভূপতিত হওয়ায় অন্য অনেক যুবকের মতো সেও খুশী হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তার আশা পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে কুর্দি রাজনীতিবিদ মাহমুদ উসমান- যিনি সাদ্দামপ্রশাসনের পতনের পর প্রথম ইরাকি রাজনীতিবিদ- বলেন, ‘সাদ্দামকে ক্ষমতাচূত করার জন্য আমেরিকানদের পরিকল্পনা ছিল কিন্তু এর পরবর্তী অবস্থা কীভাবে দেখভাল করতে হবে সে ব্যাপারে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’
আরেক কুর্দি রাজনীতিবিদ রাউফ উসমান বলেন, ‘সাদ্দামের পতনের পর সম্প্রদায়িকতামুক্ত পার্লামেন্ট ও প্রশাসন চেয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলো এখন সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের দেখা দিয়েছে।
আল জাজিরা আরবি থেকে মুজাহিদুল ইসলামের অনুবাদ
-রোরা