বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


‘র‌্যাপ হওয়া একটা মেয়ে ৩ দিন পাহাড়ে পড়ে ছিল’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রায় ছয় মাস ধরে মিয়ানমার থেকে লক্ষ লক্ষ নির্যাতিত রোহিঙ্গা  নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। তাদের সময়টা কাটছে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে। আতঙ্ক আর হতাশা তাদের নিত্য সঙ্গি।

রোহিঙ্গা শিবিরে আলো ছড়াতে, রোহিঙ্গাদের মানবিক-মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সরকারের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা ও এনজিও সংস্থা।

বাংলাদেশের বেসরকারি প্রাচীন এনজিও সংস্থা ‘মারকাযুল ইসলামী’ শুরু থেকেই কাজ করছে এই সংকট মোকাবিলায়। রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছে মারকাযুল ইসলামী।

বিশুদ্ধ পানি, নবজাতকের পুষ্টিকর খাদ্য ও প্রসুতি মায়েদের ডেলিভারি এবং সেনিটেশন, ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ যাবতীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই সেবা সংস্থাটি।

রোহিঙ্গা শিবিরে সেবা কার্যক্রমের বিস্তারিত জানার জন্য মারকাযুল ইসলামী’র মুখোমুখি হয়েছিলেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব। কথা বলেছেন মারকাযুল ইসলামীর সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হাসান খান ফয়সাল’র সঙ্গে।

রোহিঙ্গা শিবিরে মারকাযুল ইসলামীর কার্যক্রম, লক্ষ্য উদ্দেশ্য, সরকারের করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসছে আলাপচারিতায়।

আওয়ার ইসলাম: মারকাযুল ইসলামী কবে থেকে কাজ শুরু করে? শুচনালগ্নে কোন ধরনের স্ট্রাগল করতে হয়েছে আপনাদের?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: কুরবানীর ঈদের ঠিক পর থেকেই আমাদের কার্যক্রমের শুরু। আমি তখন হজ্বে ছিলাম। মারকাযুল ইসলামের চেয়ারম্যান তলহা শুরু থেকেই টিম নিয়ে এসেছেন।

শুরুতে আমাদের একটা গ্রুপ শাহপরী দ্বীপে যায়। সেখান থেকে আগতদের রিসিভ করে প্রথমে নৌকা ভাড়া মিটিয়ে সিএনজি করে নিয়ে আসা হয় শাহপরী মাদরাসায়। তারপর সেখান থেকে ট্রাক ভাড়া করে আর্মি ক্যাম্পে।

এরপর আর্মি ক্যাম্প থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাদের থাকার ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্পে পৌঁছানো, তারপর সেখানে থাকার জন্য ঘর বানানো এসবই করতে হয়েছে আমাদের।

অসুস্থদের জন্য শুরু থেকেই একটা মেডিকেল টিম কাজ করেছে সার্বক্ষণিক। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, মেডিসিন দিয়েছি।

তারা খুব পেরেশোন ছিলো। কারণ অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। কেউ দু’তিনদিন পাহাড় টপকে এসেছে। নদী সাতরে এসেছে। অধিকাংশই প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিলো। অনেকেই ভয়ের কারণে ডিসেন্ট্রিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা প্রথমে বালু খালি ক্যাম্পে মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেই। তারপর তাদের থাকার জন্য ত্রিপল দিয়ে ঘর করে দেই।

আওয়ার ইসলাম: এ পর্য ন্ত মৌলিক কোন কোন কাজ করেছেন আপনারা?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল:  মোটামুটি সবগুলোই মৗলিক বিষয়ে কাজ করেছি। অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা। আমরা প্রথমেই তাদের খাবারের ব্যাবস্থা করেছি। মায়েদের বুকের দুধ ছিলো না সেজন্য শিশুদের খাবারের বিভিন্ন উপকরণ কিনে দিয়েছি, বায়োমিল্ক দুধ দিয়েছি। বস্ত্র দিয়েছি। ঘর তৈরি করে দিয়েছি।

প্রথমে ঘর তৈরি করতে ত্রিপল দিয়েছি তারা নিজেরাই তৈরি করেছে। আমরা সহযোগিতা করেছি। পরবর্তীতে আমাদের লোকবল যোগ দেয়ার পর আমরাই পুরো দায়িত্ব নিয়ে ঘর করে দিয়েছি। চিকিৎসার জন্য শুরুতেই সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম করেছি। যারা শুরু থেকেই কাজ করেছে।

অসুস্থদরে মধ্যে যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিলো তাদের আমার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এজন্য আমাদের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এখনো করছে।

আওয়ার ইসলাম: এমন একটা দৃশ্যের কথা বলুন যা আপনাকে সবচে বেশি মর্মাহত করেছে?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আমার যেটা মনে পড়ে। প্রথমে এসেই যেটা দেখেছিলাম। সকাল বেলা খাবার বিতরণের জন্য বের হলাম। বুক পরিমাণ পানি টপকে পাহাড়ের উপরে গেলাম। সেখানে দেখলাম একটা মেয়ে শুয়ে আছে অচেতনের মতো। সাথে স্বামী বা ভাই হবে বসে আছে।

জিজ্ঞেস করলাম। বলল মেয়েটা র‌্যাপ হয়েছে। সে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তার কোনো অনুভুতি নেই। তার অবস্থা দেখে পরিবারের সবাই শুধু কাঁদছেন। তিনদিন পর্যন্ত মেয়েটার এই অবস্থা। জানতে পারলাম এই ধরনের আরো অনেক ঘটনা আছে।

দু’দিন পরে জানতে পারলাম মেয়েটা মারা গেছে। আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে করেই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো তাকে। এই ঘটনাটি আমাকে ব্যাপক কাঁদিয়েছে।

হাসপাতাল করে প্রসুতি মায়েদের ডেলিভারি সেবা

আওয়ার ইসলাম: চিকিৎসা সেবায় আপনারা কী কী অবদান রাখছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আমরা কুতুপালং টেবি টাওয়ার মাঠের মধ্যে মেডিকেল টিম বসাই। একজন লেডি মেজর। মেজর সাজেদা আমাদের পরামর্শ দেন ওনার ক্যাম্প ট্যাংকখালি বাজারে। ট্যাংকখালি ৬ তানজিমার গোনা। বললেন, সেখানে অনেক মাহিলা আছে ডেলিভারি রোগী। তারা অনেক অসহায়। ব্যায়বহুল হওয়ায় তারা সাপোর্ট পাচ্ছে না। ওখানে আপনার একটা হাসপাতাল করেন।

আমার তাদের কাছে জায়গা চাইলাম।পাঁচ রুম বিশিষ্ট দুইটা বড় ঘর করলাম ফ্লোর পাকা করে। এটাস্ট বাথরুম। ডেলিভারির জন্য অনেকগুলো বেড করলাম। ২জন নার্স, ৭জন মিড ওয়াইফ, একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়েছি।

প্রায় চারমাস ধরে চলছে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এরকম দুইটা হাসপাতাল আছে। একটা ট্যাংকখালি ৬ ক্যাম্পে আরেকটা হলো হাকিমপাড়া জামতলা। ওখানে এক মেজর।

নারায়ণগঞ্জের মেজর ইরতেজা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ ব্যাপক সাড়া পড়েছে এতে।

আওয়ার ইসলাম: কতজন ডেলিভারি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: চিকিৎসা তো প্রতিদিনই নিচ্ছে রোগীরা। সংখ্যাটা তো অগণিত। প্রতিদিন গড়ে জেনারেল চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ৫০০ লোক। দুটো হাসপাতালে ৬০০ উপরে ডেলিভারি করিয়েছি এই পর্যন্ত। অর্থাৎ ৬০০ র উপরে রোহিঙ্গা ‍শিশু জন্মেছে আমাদের হাসপাতালে। গড়ে প্রত্যেক দিন ১০ জন রোগীকে সেবা দিচ্ছি।

আমরা যেটা করছি একটা শিশু জন্মের পর ওয়েট ঠিক থাকে না সবার। আর এখানে যারা বাচ্চা প্রসবের জন্য আসছেন তারা সবাই ক্লান্ত ও শারীরিকভাবে দূর্বল। যার কারণে বাচ্চা জন্মের পর মা ও সন্তান দুজনই পুষ্টিহীনতায় ভোগে।

এজন্য আমরা প্রত্যেক ডেলিভারির পরই নবজাতক ও মায়েরর জন্য পুষ্টিকর খাবারের আলাদা আলাদা দুটো ব্যাগ দেই। নবজাতকের জন্য উন্নমানের হরলিক্স, মশারি, পাম্পার, বায়োমিল্ক দুধ ফ্লাক্স, ফিডারসহ পুষ্টিকর বিভন্ন খাবার দেই।

মায়েদের জন্য খেজুর, চাল-ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং সেই সাথে জুরুরি প্রয়োজন মেটাতে নগদ তিন থেকে চারহাজার টাকা দিয়ে থাকি প্রত্যেককে।

আওয়ার ইসলাম: বাচ্চাদের খৎনা করা আপনাদের এজেন্ডায় ছিলো কিনা?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: খৎনা আমরা কিছু করেছি। আরেকটা গ্রুপ আছে আমাদের পরিচিত আমরা তাদের সহায়তা করেছি। স্পেশালি আমরা ঠোট কাটা রোগীদের খুঁজে কক্সবাজারে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি।

আওয়ার ইসলাম: বাসস্থান?

মারকাযুল ইসলাম: অনেক রোহিঙ্গা প্রথমে এসে রাস্তার পাশে টাবু টানিয়ে থেকেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার তাদের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। তো সেখানে অনেকেই ঘর পায়নি। আর্মিরা আমাদের বড় একটা জায়গা দিয়েছে তানজিমার গোনায় ই ব্লকে।

আমরা তাতে ১৬ শ ফ্যামিলিকে ঘর করে দিয়েছি। টোটাল প্রায় ২ হাজারের মতো ঘর করেছি আমরা। এছাড়া আড়াই হাজারের মতো ত্রিপল রোল দিয়েছি। এক একটা রোলে ২০০ গজ ত্রিপল থাকে।

আওয়ার ইসলাম: এছাড়া আর কী কী সেবা দিয়েছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: অন্যরা যেটা করে; এসে প্রথমে আর্মি বা সংশ্লিষ্টেদের সাথে মিটিং করে বিভিন্ন ক্যাম্পের চাহিদা জেনে নিয়ে তারপর তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে। আর আমরা যেটা করি, সার্বক্ষিণিক আমাদের টিম তো এখানে কাজ করছে।

আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি কার কী প্রয়োজন। যখন যেটা প্রয়োজন হয় সেটাই ব্যবস্থা করি। যেমন অনেকে লাকড়ি চুলা দিয়েছেন কিন্তু লাকড়ি দেননি। আমরা চুলার সাথে লাকড়ির ব্যবস্থা করে দেই।

আওয়ার ইসলাম: কয়টি চুলা দিয়েছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল:  প্রায় পাঁচ হাজার চুলা দিয়েছি। এখন আমরা যেই চুলাটা দিচ্ছি সেটা খুব ব্যয়বহুল।

সোলার সিস্টেম চুলা। সোলারে মাধ্যমে চব্বিশ ঘন্টা চলে। প্রতিটা চুলার দাম প্রায় ১২ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে আমরা সেগুলো এনেছি।

সেনিটেশন ব্যাবস্থা

আওয়ার ইসলাম: সেনিটেশন ব্যাবস্থায় কতটুকু কী করেছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আমরা উন্নত মানের সেনিটেশন ব্যবস্থাও করেছি। রিমুভাল সেনিটেশন করেছি। প্রত্যেকটা বাথরুমে ৮টা রিং দিয়েছি। ৩২-৩৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে প্রতিটি বাথরুমে। এগুলো চাইলে ট্রান্সফারও করা যাবে।

কিছু স্থায়ী বাথরুমও করেছি। মোবাইল টয়লেটের মতো। যেগুলো ডাবল রিং দিয়ে ওয়ার্কসপে ঝালাই দিয়ে এঙ্গেল দিয়ে করেছি। ডিসি সাহেব আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন ডাবল রিং দেয়ার জন্য যাতে ভেঙে না পড়ে।

১ লক্ষ ২০ টাকা ব্যায়ে ডিপ টিউবওয়েল ও মহিলাদের জন্য গোসলখানা

আওয়ার ইসলাম: বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে আপনারা কী করেছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: প্রচুর পরিমানে নলকুপ দিয়েছি। প্রথম দিকে নরমাল নলকুপ দিয়েছি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি। পরে দু’মাস আগে থেকে ডিসি সাহেব আমাদের বলেছেন, এখন তো শীত এসে গেছে পানি নিচে নেমে গেছে আপনার ডিপ টিউবওয়েল করেন। আমরা সেটাই করেছি।

ডিপ টিউবওয়েল দিচ্ছি ৭০০ ফিটের। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা সর্বনিম্ন খরচ হচ্ছে প্রতিটি টিউবওয়েল বসাতে। এতে করে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে।

আমরা ২৪ ঘন্টা ফিল্ডে থাকতাম। দেখতাম কার কী প্রয়োজন। আমরা দেখলাম মহিলারা গোসল করছে কিন্তু শালীনতা বা পর্দার কারণে স্বাচ্ছন্দে গোসল করতে পারছে না।

যেহেতেু এখানে গেদারিং বেশি লোকজনের আনাগোনাও বেশি সেজন্য তারা একটু সেফারেট গোসলের ব্যবস্থা চায়। আমরা টিনসেড দিয়ে একসঙ্গে ৬টি করে গোসলখানা করেছি। এরকম প্রায় ২০০ গোসলখানা করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: তার মানে সরকার বা সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: হ্যাঁ, আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করেই কাজ করছি। এতে করে আমাদের কাজে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসছে না। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মহল থেকেও আস্থার সাথে আমাদের উপর বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পন করা হয়। যা আমরা শুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছি

পাহাড়ে পানি সাপ্লাই

এনামুল হাসান খান ফয়সাল : পাহাড়ে গভীর নলকুপ দিয়ে পানি উঠছে না দেখে আমরা জেনারেটর দিয়ে ডিপ টিউওয়েল করে সামার সিবল পাম্প দিয়ে ৩০০/৪০০ ফিট উপরে পানি সাপ্লাই দিয়েছি। উপরে পানি রাখার জন্য টাঙ্কি দিয়েছি। এরকম ২০টি পাহাড়ে পানি দিয়েছি। জেনারেটর চালানোর জন্য মাসিক ব্যাবস্থায় জ্বালানি দিয়েছি এবং নির্দষ্ট লোক দিয়েছি।

কেউ চাইলে আমরা গির্জা-মন্দিরও করে দিবো

আওয়ার ইসলাম: মসজিদ মাদরাসা করেননি আপনারা?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: হ্যাঁ, আমরা মসজিদ মাদরাসা করেছি শুরু থেকেই। মাদরাসা করেছি, মসজিদ করেছি, শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছি। মসজিদ মাদরাসাগুলোতে আমরা ইমাম-মুয়াজ্জিন, মক্তবের শিক্ষকও নিয়োগ দিয়েছি। তাদের বেতনও দিচ্ছি।

আওয়ার ইসলাম: এখানে মুসলিম ছাড়াও অন্যন্য ধর্মের লোক আছে তাদের জন্য কী করেছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আমরা সবাইকে সাহায্য করেছি। যারা আমাদের কাছে এসেছে আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, খাদ্য, বা ত্রিপলসহ অন্যান্য সাহায্য করেছি।

আওয়ার ইসলাম: কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জা বা মন্দির করেছেন তাদের জন্য?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: এটা স্পেশালি কিছু করিনি তবে যারা এসে বলেছে আমাদের এটা এটা প্রয়োজন আমরা তাদের সেটা দিয়েছি। স্পেশালি কেউ বলেনি আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করে দিন আমরাও সেটা করিনি।

আওয়ার ইসলাম: কেউ বললে দিবেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: হ্যাঁ, কেউ যদি বলে, আমাদের কাছে এসে চায় তাহলে আমরা করে দিবো।

আওয়ার ইসলাম: এটা আপনারা কেন করছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: হিউম্যান ফর হিউমিনিটি। আমরা সম্পূর্ণ মানবতাবোধ থেকেই এটা করছি। আমাদের প্রতিবেশি মুসলিম ভাই-বোনেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব তাদের জন্য কিছু করা। মানবতার স্বার্থে আমরা এটা করছি। বড় কথা তারা মানুষ এবং আমাদের প্রতিবেশী।

আওয়ার ইসলাম: এই যে ছয় মাস ধরে সেবা দিচ্ছেন, আপনাদের অর্থের উৎস কী?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: এটা একটা প্রাচীন এনজিও সেবা সংস্থা। আমাদের কিছু ডোনার আছে দেশে এবং দেশের বাইরে। বাইরের কিছু এনজিও সংস্থাও আছে যারা সরকারে থ্রোতে এনজিও ব্যুরোর মাধ্যেমে আমাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: আমি যতটুকু জানি, মারকাযুল ইসলামের স্বপ্নদ্রষ্টা মুফতি শহিদুল ইসলাম? তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কী?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: মুফতি শহিদুল ইসলাম আলেমদের মধ্যে একজন আইডল বলা যায়। ওনি যুবক বয়স খেকেই সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। ওনার মুখে শুনা ওনি নিজের পরিবার ও সন্তানদের জন্যও এতো সময় দেননি যতোটা মানব সেবায় দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও সারাদেশে বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে মারকাযুল ইসলাম। মুফতি শহিদুল ইসলামের স্বপ্ন ছিলো মারকাযুল ইসলাম অনেক বড় হবে। সেজন্যেই আজকে আমাদের এতাদূর আসা। প্রবাসে থেকেও মুফতি শহিদুল ইসলাম সার্বক্ষণিক আমাদের কার্যক্রম তদারকি করেন।

আওয়ার ইসলাম: রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনার কত টাকা ব্যয় করেছেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: কত টাকা হবে সেটা তো বলা যাচ্ছে না তবে সংখ্যাটা যে অনেক বড় হবে সেটা তো বুঝতেই পারছেন।

আওয়ার ইসলাম: এই মানবিক সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের কী করা উচিত বলে মনে করেন?

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আসলে এটা একটা মানবিক বিপর্যয়। আমরা এটা বহন করছি মানবিক স্বার্থে। কিন্তু এর একটা স্থায়ী সমাধান অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এর একটা স্থায়ী সমাধানে পৌঁছতে হবে।

রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভমিতে পুনর্বাসনের জন্য মিয়ানমার সরকারকেও আন্তরিক হয়ে আলোচনায় বসতে  হবে।

আওয়ার ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সময় দেয়ার জন্য।

এনামুল হাসান খান ফয়সাল: আওয়ার ইসলামকেও ধন্যবাদ।

আরআর


সম্পর্কিত খবর