বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ইলমের সবুজ শ্যামল শস্যক্ষেত নদওয়াতুল উলামা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাঈদ আহমাদ খান

১৮৫৭ সালের দিকে সিপাহী বিপ্লব শেষ হল৷ সুদূরপ্রসারি মুসলমানদের এ আন্দোলন ততক্ষণাৎ কোনো ফলপ্রসূ হলো না৷ ইংরেজগণ আয়ত্ব করে নিলো পুরো হিন্দুস্তান৷ দিশেহারা মুসলিম কর্ণধারগণ তখন অস্ত্রের ময়দান ছেড়ে শিক্ষার যুদ্ধ শুরু করলেন৷

দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম জাতিকে উদ্ধার করতে প্রতিষ্ঠিত হলো দু'ধরনের প্রতিষ্ঠান৷ দারুল উলুম দেওবন্দ৷ আর আলীগড় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি৷

কিন্তু দু:খের বিষয় হলো, আলিগড় ইউনিভার্সিটি তার উদ্দেশ্য অর্জনের পরিবর্তে পশ্চিমা কৃষ্টিকালচারকে অনেকটা যেনো বুকে চেপে ধরলো৷ অন্যদিকে পাশ্চাত্যের ধোঁয়ায় পৃথিবীর আকাশে ছেয়ে পড়া আধুনিকতাকে সম্পূর্ণ বর্জন করতে উদগ্রীব করলো অনেকে৷ ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করলো দু'টি চিন্তাধারা৷

হতাশাগ্রস্ত মুসলিম জাতিকে বিভক্তির আভাস ছুঁয়ে দিলো এ দ্বন্দ্ব৷ ঠিক এ মূহুর্তে-১৮৯২ সালে (হিজরি- ১৩১০) মাওলানা সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. এবং তার মত একদল মহান আলেমদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় এক যুগান্তকরি ঐতিহাসিক ইসলামিক সংস্থা৷

মাদরাসা ফয়জে আম- কানপুরে যার প্রথম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়৷ দু'টি চিন্তাধারার যুগোপযোগি ইসলামিক সমন্বয় সাধনই ছিলো যার মূল লক্ষ্য৷ প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের সব কৃষ্টিকালচার থেকে হাত গুটানো নয়, বরং ইসলামের উন্নত রঙ দিয়ে এগুলোকে সাজানোই হলো একজন দক্ষ মুমিনের সরল কাজ৷ এটাই ছিলো সংগঠনের মূল দৃষ্টিভঙ্গি৷

উন্নত এ চিন্তা- চেতনাকে বাস্তবের রুপ দিতেই মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ. সংগঠনকে কেন্দ্র করে হিজরি- ১৩১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিদ্যালয়৷ এটাই হলো আজকের দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা৷ যা বিশ্ব মুসলিম জাতিকে দীনের এক অনবদ্য খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে৷ খৃস্টীয় ১৮৯৮ সালে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়৷

লক্ষ ও উদ্দেশ্য

দারুল উলুম লি নদওয়াতুল উলামা প্রতিষ্ঠিত হয়, আকাবির ও আসলাফের চিন্তাধারাকে সামনে রেখে৷ বিদেশি কৃষ্টিকালচারে আহত মুসলিম জাতিকে ইসলামের মধ্যপন্থার সঠিক দিশা দিতে৷ তাই বুনিয়াদি চার উসুল নিয়ে এগিয়ে চলে নদওয়াতুল উলামা৷

১. শিক্ষা সিলেবাসের পূর্ণতা দানে এমন এক নেসাব তৈরি করা, যা ভরপুর থাকবে মুসলিম উম্মাহর সকল প্রকার সঠিক দিক- নির্দেশনাতে৷ সহনীয় সব মতোপার্থক্য ভুলে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব- বন্ধনকে মজবুত করবে যে সিলেবাস৷

২. দীনের সকল শাস্ত্র; বিশেষ করে তর্কশাস্ত্র ও ফিকহশাস্ত্রের আধুনিক রুপায়ন৷ যা শিখে একজন তালেবে ইলম কুফুরি শক্তির জওয়াব দিবে৷ এবং মুসলিমদের দৈনিক জীবনে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করবে৷

৩. ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুনে আকাবের ও আসলাফের পথের পূর্ণ অনুসরণ৷ যাতে করে, প্রতিটি তালেবে ইলম উন্নত আখলাকের মজবুত ধারকবাহক হতে পারে৷

৪. ওসয়াতে কলব তথা কলবের প্রশস্ততা আর উম্মাহর প্রতি দরদে দিলে এমন বেচাইন বানানো; যাতে ইসলামের তরে নিজের জীবনকে ওয়াকফ করে দিবে৷ এটা হলো এমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা অর্জন করা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছাড়া দুষ্কর প্রায়৷

উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নদওয়ার পদক্ষেপ

নদওয়াতুল উলামা আপন লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার শুরুর দিন থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মুহাম্মাদ আলি মুঙ্গিরি রহ.'র মতো অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন মহান বুযুর্গদের বরকতময় হাতে শুরু এর যাত্রা৷ তাই আপন লক্ষ্য অর্জনে আধুনিক ও ইসলামিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ে এমন এক সিলেবাস তৈরি করেছেন তারা।

যার সুনাম, সুখ্যাতি শুধু উপমহাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ তাই তো নদওয়া বাগানের মধু আহরণে ছুটে আসছে চিন, নেপাল, বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী৷

এমনকি আরব ও ইউরোপের রাজ্যগুলো থেকেও তালেবে ইলমগণ ভিড় করছেন এখানে৷ ইদানিং বিদেশিদের জন্য চার দেয়ালে বেষ্টিত আধুনিক সব সরঞ্জামাদি বিশাল ভবনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

ইংরেজি ভাষা নেসাবভুক্ত করা

মাওলানা শিবলি নো'মানি রহ.'র পরামর্শে নদওয়া প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বছরেই ইংরেজি ভাষাকে নেসাবভুক্ত করা হয়েছে৷ নদওয়ার সম্পূর্ণ কোর্সেই আধুনিক ইউনিভার্সিটির সাথে কিছুটা সামঞ্জস্যতা রাখা হয়েছে৷ সানুবিয়্যা (অষ্টম বছর) পর্যন্ত ইসলামের সকল ফনের ব্যাপক নিসাব নিয়ে এক নয়া কারিকুলাম বানানো হয়েছে৷

এরপর কিছুটা নির্দিষ্ট পড়াশোনার জন্য আলিয়া নামের চার বছরের কোর্স৷ যাকে ‘আলিমিয়্যাত’ বলা হয়৷ আধুনিক কলেজে যাকে আমরা ‘অনার্স কোর্স’ বলে জানি ৷ এরপর শুরু হয় নির্দিষ্ট ফনের উপর বিশেষ পড়াশোনা৷ উলয়াউলা আর উলয়া সানিয়া নামে দু' বছরের কোর্স এতে৷ যাকে ‘ফযীলাত’ও বলা হয় ৷ চলবে ...

লেখক :  শিক্ষার্থী, নদওয়াতুল উলামা, ভারত।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ