শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


অনন্য এক রাতের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোরশেদ জাহান

কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাস। প্রতি তলায় দুই সারিতে তিনটি করে মোট ছয়টি কামরা। দুই সারির মাঝে গলিপথ। রাত আড়াইটা তখন৷ গভীর ঘুমে নিমজ্জিত পৃথিবী।

গলিপথের বাতিগুলো জ্বলে ওঠলো হঠাৎ। দরোজায় দরোজায় করাঘাতের শব্দ শোনা গেলো। প্রত্যেক কক্ষে সবার নাম ধরে ডাকার আওয়াজও পাওয়া যাচ্ছে।

গভীর রাতে সবাইকে ডেকে তোলা হচ্ছে। অথচ কারো মনে রাগ নেই। সবাই চোখ কচলাতে কচলাতে নরম সুরে বলছে-‘ভাই! জেগেছি, বন্ধু! উঠেছি।’

সব কামরার বাতিগুলো জ্বলে ওঠছে দ্রুতই। অথচ অন্য সময় এমন গভীর রাতে কেউ ঘুম ভাঙলে বকাঝকা শুরু হয়ে যেতো। তার দিকে তেড়ে আসতো। কিন্তু আজ কারো মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

সবাই ব্যতিক্রম আচরণ করছে। পাঁচতলা ছাত্রাবাসের নিচতলায় ডাইনিংরুম। হাত-মুখ ধুয়ে একে একে সবাই ডাইনিংরুমে যাচ্ছে।

ডাইনিংরুমটা আজ খুব নীরব। কারো মুখে তেমন কথা নেই। সবার চোখ লাল হয়ে আছে। অন্যান্য সময় ডাইনিংরুমে কথার আওয়াজ বেশ শোনা যায়। সিনিয়র ব্যাচের ভাইদের মাঝে খুনসুটি চলে ভালোই। যেটা জুনিয়ররা দেখে মিটিমিটি হাসে, উপভোগ করে খুব।

 আজ সবাই নীরব। নীরবতার মাঝেও সবার চোখেমুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। পুরো রুমটাতে আনন্দময় এক পরিবেশ বিরাজ করছে।

ফজরের আজান ভেসে এলো৷ ছাত্রাবাসের সবাই মসজিদে ছুটে চলছে। একজন আরেকজনকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। সবার মাঝেই তাড়াহুড়ো, ফজরের জামাত যেনো ছুটে না যায়।

নামাজ শেষে সবাই দলবেঁধে আবার ছাত্রাবাসে ফিরছে। শহরের প্রধান সড়ক, ব্যস্ততম সড়কে কোনো যানবাহন নেই। রাত্রির শেষ প্রহরে, রাজপথে হাঁটছে মসজিদ ফেরত মুসল্লিরা। যেনো পবিত্রতার চাদরে বেষ্টিত হয়েছে তারা।

সুবহে সাদিকের স্নিগ্ধতায় যেনো আত্মাগুলো সতেজ হয়েছে। নয়নাভিরাম এক চমৎকার দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে রাজপথে। সে রাতটি ভোলার নয়। এটিই হোস্টেল জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটি রাত।

‘কদর রজনী’র অপূর্ব সমাহার। রাত্রির শেষভাগে রাজপথে মুসল্লিদের পদচারণার সে দৃশ্য জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটি দৃশ্য। যা ভোলার নয় কখনও। বাঙলার প্রতিটা কলেজজীবন হোক এমন জান্নাতি পরিবেশে ঘেরা।

শিক্ষার্থী : রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, গোপালগঞ্জ

বাবা আসে গভীর রাতে


সম্পর্কিত খবর