সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ; গ্রেপ্তার মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ‘বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাওয়া; দোয়া কবুল না হলেও বুঝতে হবে এতেই কল্যাণ রয়েছে’ উৎসবমূখর পরিবেশে শেষ হল ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কাতার'র ঈদ পুনর্মিলনী ঝড়ে রেললাইনে গাছ পড়ে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ ইস্তিস্কার নামাজ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়! মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা চায় মানবাধিকার কমিশন ‘কোরবানিতে ১ কোটি ৩০ লাখ গবাদিপশুর জোগান দেওয়া হবে’ ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়াসহ ৪০ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

হাফেজদের রক্তে রঞ্জিত আল্লাহর কুরআন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুবায়ের রশীদ
লেখক ও শিক্ষার্থী

তিন এপ্রিল। সোমবার। আফগানিস্তানের কান্দুজ প্রদেশে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঘাতকদের বিমান হামলায় ঝরে গেল শতাধিক প্রাণ। যার অধিকাংশ ছিল শিশু ও কিশোর। এ যেন কিছুতেই মেনে নেবার মতো নয়। অন্তর ফেটে যাচ্ছে মূক বেদনায়। শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বারবার একে একে।

গোলাবের পাপড়ির মতো একেকটা শিশু। মাথায় সুন্দর করে বাঁধা হাফেজে কুরআনের সম্মানসূচক শুভ্র পাগড়ি। চোখ দুটো বন্ধ করলেই অদৃশ্যের ভেতর শুনি ছোট ছোট শিশু ও কিশোর হাফেজে কুরআনদের আর্ত চিৎকার।

মসজিদের মেঝে লাল হয়ে আছে নিশ্পাপ ফুলের মতো কোমল বাচ্চাদের তাজা রক্তে। হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে কান্দুজের আকাশ। চারদিক যেন নির্বাক নিস্তব্ধ। বিস্ময় হতবাকে কারো মুখে রা পর্যন্ত নেই।

সকালে যে মা আদর করে তার সন্তানকে চুমু খেয়েছিল কপালে দিনশেষে তাকে দেখতে হলো সন্তানের খণ্ড দিখণ্ডিত লাশ। আহ! শুধু বিভীষিকা, ক্রন্দন। শুধু রক্ত শুধ লাশ। সারি সারি কাফনের ভেতর জীবনের তরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদের মতো সুন্দর কতো কতো শিশু।

হাফেজে কুরআন। ইতিহাস প্রত্যক্ষ করল নির্যাতনের এক অমানবিক দৃশ্য। আফগানিস্তানের সুদীর্ঘ শহীদানের তালিকায় যুক্ত হলো আরো শতাধিক পবিত্র নাম। জানি না এ তালিকা আরো কতো দীর্ঘ হবে।

একটি দৃশ্য আমার হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। চোখ থেকে অজান্তেই ঝরে পড়ল কয়েক ফোটা তপ্তাশ্রু। রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেল আত্মার ভেতর। এক অক্ষম ক্রোধ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল বিদ্যুদের তীব্রতায় পুরো শরীর জুড়ে। একটি রক্তাক্ত কুরআন। ছড়িয়ে পড়ে আছে মেঝেতে, এলোমেলো। ছোপ ছোপ রক্ত তার পাতায় পাতায়।

শহীদদের পবিত্র রক্তে ভিজে গেছে আল্লাহর বাণী। রক্তে ভিজে গেছে আল্লাহর শাশ্বত নাম। যে কুরআন ঘোষণা করেছে শহীদের মাহাত্ম, ফজিলত। যে কুরআন বলেছে, তোমরা তাদের মৃত বলো না, তারা তো জীবিত। যে কুরআন বলেছে তোমরা আল্লাহর রাহে শহীদ হও, জীবন বিলাও অকাতরে।

আজ আফগানিস্তানে সেইসব শহীদদের রক্তে ভিজেছে কুরআন। এবং আশ্চর্য! এ রক্ত স্বয়ং তাদের যারা মুখস্থ করেছে পুরো কুরআন। যাদের কলব মহিমান্বিত হয়েছে ১১৪ টি সুরার পরশে। যাদের শীরে শোভা পেয়েছে দস্তারে ফজিলত। ঐতিহাসিক বীরে মাউনার পর আবারো কলংকিত হলো পৃথিবীর মাটি।

পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে সেই দৃশ্য যেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিল ১৪০০ বছর আগে। সেদিন মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাযি. এর রক্তে ভেসেছিল পবিত্র কুরআন। কুরআন পাঠরত অবস্থায় ঘাতকরা শহীদ করেছিল ইসলামের এই মহান খলিফাকে। সেই কাহিনী আজো কলংকিত করে আছে ইতিহাসের পাতা।

বৃটিশ মিউজিয়ামে নাকি সংরক্ষিত আছে রক্তে ভেজা সেই কুরআন। আফগানিস্তানের এই কুরআনও সংরক্ষিত থাকবে ইতিহাসের মিউজিয়ামে। সংরক্ষিত থাকবে সেইসব শহীদদের নাম বীরে মাউনার শহীদ হাফেজ সাহাবীদের সাথে। কিন্তু দুর্ভাগ্য পৃথিবীর, দুর্ভাগ্য আমাদের এমন দৃশ্যও প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন : যেভাবে আমি আফগানিস্তানে নিহত হলাম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ