মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
প্রথমবারের মতো টাইফয়েডের টিকা পেল মাদরাসা শিক্ষার্থীরা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে কাপ্তাইয়ের পিলারবিহীন মসজিদ নোয়াখালীর সংঘর্ষের কথা বলে প্রচারিত মসজিদের ছবির সত্যতা কতটুকু? চবির পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে কোরআন বিতরণ আবারও ‍খুলে দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত স্বাধীন দেশে থেকেও আমরা ছিলাম পরাধীন: ফয়জুল করীম নোয়াখালীতে কোরআন তালিমে হামলার প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ইসরায়েলকে কঠিন পরিণতির হুঁশিয়ারি ইয়েমেনের  সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী/ভাতা পুনঃনির্ধারণ: অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এবার এক টাকা কেজি গরুর গোশত বিক্রির ঘোষণা এমপি প্রার্থীর!

হাফেজদের রক্তে রঞ্জিত আল্লাহর কুরআন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুবায়ের রশীদ
লেখক ও শিক্ষার্থী

তিন এপ্রিল। সোমবার। আফগানিস্তানের কান্দুজ প্রদেশে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঘাতকদের বিমান হামলায় ঝরে গেল শতাধিক প্রাণ। যার অধিকাংশ ছিল শিশু ও কিশোর। এ যেন কিছুতেই মেনে নেবার মতো নয়। অন্তর ফেটে যাচ্ছে মূক বেদনায়। শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বারবার একে একে।

গোলাবের পাপড়ির মতো একেকটা শিশু। মাথায় সুন্দর করে বাঁধা হাফেজে কুরআনের সম্মানসূচক শুভ্র পাগড়ি। চোখ দুটো বন্ধ করলেই অদৃশ্যের ভেতর শুনি ছোট ছোট শিশু ও কিশোর হাফেজে কুরআনদের আর্ত চিৎকার।

মসজিদের মেঝে লাল হয়ে আছে নিশ্পাপ ফুলের মতো কোমল বাচ্চাদের তাজা রক্তে। হাসপাতালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে কান্দুজের আকাশ। চারদিক যেন নির্বাক নিস্তব্ধ। বিস্ময় হতবাকে কারো মুখে রা পর্যন্ত নেই।

সকালে যে মা আদর করে তার সন্তানকে চুমু খেয়েছিল কপালে দিনশেষে তাকে দেখতে হলো সন্তানের খণ্ড দিখণ্ডিত লাশ। আহ! শুধু বিভীষিকা, ক্রন্দন। শুধু রক্ত শুধ লাশ। সারি সারি কাফনের ভেতর জীবনের তরে ঘুমিয়ে আছে চাঁদের মতো সুন্দর কতো কতো শিশু।

হাফেজে কুরআন। ইতিহাস প্রত্যক্ষ করল নির্যাতনের এক অমানবিক দৃশ্য। আফগানিস্তানের সুদীর্ঘ শহীদানের তালিকায় যুক্ত হলো আরো শতাধিক পবিত্র নাম। জানি না এ তালিকা আরো কতো দীর্ঘ হবে।

একটি দৃশ্য আমার হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। চোখ থেকে অজান্তেই ঝরে পড়ল কয়েক ফোটা তপ্তাশ্রু। রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেল আত্মার ভেতর। এক অক্ষম ক্রোধ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ল বিদ্যুদের তীব্রতায় পুরো শরীর জুড়ে। একটি রক্তাক্ত কুরআন। ছড়িয়ে পড়ে আছে মেঝেতে, এলোমেলো। ছোপ ছোপ রক্ত তার পাতায় পাতায়।

শহীদদের পবিত্র রক্তে ভিজে গেছে আল্লাহর বাণী। রক্তে ভিজে গেছে আল্লাহর শাশ্বত নাম। যে কুরআন ঘোষণা করেছে শহীদের মাহাত্ম, ফজিলত। যে কুরআন বলেছে, তোমরা তাদের মৃত বলো না, তারা তো জীবিত। যে কুরআন বলেছে তোমরা আল্লাহর রাহে শহীদ হও, জীবন বিলাও অকাতরে।

আজ আফগানিস্তানে সেইসব শহীদদের রক্তে ভিজেছে কুরআন। এবং আশ্চর্য! এ রক্ত স্বয়ং তাদের যারা মুখস্থ করেছে পুরো কুরআন। যাদের কলব মহিমান্বিত হয়েছে ১১৪ টি সুরার পরশে। যাদের শীরে শোভা পেয়েছে দস্তারে ফজিলত। ঐতিহাসিক বীরে মাউনার পর আবারো কলংকিত হলো পৃথিবীর মাটি।

পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে সেই দৃশ্য যেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছিল ১৪০০ বছর আগে। সেদিন মুসলিম জাহানের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রাযি. এর রক্তে ভেসেছিল পবিত্র কুরআন। কুরআন পাঠরত অবস্থায় ঘাতকরা শহীদ করেছিল ইসলামের এই মহান খলিফাকে। সেই কাহিনী আজো কলংকিত করে আছে ইতিহাসের পাতা।

বৃটিশ মিউজিয়ামে নাকি সংরক্ষিত আছে রক্তে ভেজা সেই কুরআন। আফগানিস্তানের এই কুরআনও সংরক্ষিত থাকবে ইতিহাসের মিউজিয়ামে। সংরক্ষিত থাকবে সেইসব শহীদদের নাম বীরে মাউনার শহীদ হাফেজ সাহাবীদের সাথে। কিন্তু দুর্ভাগ্য পৃথিবীর, দুর্ভাগ্য আমাদের এমন দৃশ্যও প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন : যেভাবে আমি আফগানিস্তানে নিহত হলাম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ