শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


সাধারণ খাবার স্যালাইন কেড়ে নিতে পারে আপনার শিশুর জীবন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা. জাকির হোসেন
চিকিৎসক ও কলামিস্ট

খাবার স্যালাইন মানুষের জীবন রক্ষাকারী অতি প্রয়োজনীয় মেডিকেশন। খাবার স্যালাইন আবিষ্কারের পর থেকে ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎিসার জন্য এই ওষুধটির উপকারিতা ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।

যদিও কোন ওষুধ বিপনণের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপণ দেওয়ার কোন বিধিবিধান নেই, তারপরও কিছু কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে এই আইন শিথিল করা হয়। যেমন খাবার স্যালাইন, পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন উপকরণ ও ওষুধ সম্পর্কে মানুষকে বেশি করে অবগত করার জন্য গণমাধ্যমে সচরাচর বিজ্ঞাপণ দেওয়া থাকে।

নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রটি ছিল এরকম প্রতিটি ক্রিয়ার সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই সূত্রটি বাস্তব জীবনের প্রতিটি প্রেক্ষাপটে ধ্রুব সত্য। খাবার স্যালাইন বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার ছিল এবং তৎকালীন প্রেক্ষাপটে এই ওষুধটি বহু শিশুর জীবন রক্ষা করেছে।

কিন্তু প্রায় প্রতিটি ওষুধেরই তার স্বাভাবিক ক্রিয়ার পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। আর এই জন্যই কোন ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। যেসময় খাবার সেলাইন অসংখ্য শিশুর জীবন রক্ষা করছে, ঠিক সচেতনতার অভাবে তখনও হয়তো এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক শিশু আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসারণ কম ছিল বিধায় আক্রান্ত শিশু চিকিৎসার আওতায় আসেনি।

আজকের যুগে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসারণের ফলে শতভাগ না হলে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যগত সমস্যাই চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি রয়ে গেছে সেটি হলো এখনও বেশির ভাগ মানুষই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যথিত মেডিকেশন সেবনে অভ্যস্ত।

তাছাড়া বেশির ভাগ ওষুধ বিক্রেতাই নিজেকে খুব বড় চিকিৎসক হিসেবে জাহির করার জন্য হরহামেশাই সাধারন ওষুধ থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ও ষ্টেরয়েড থেকে শুরু করে সকল ধরনের ওষ্ধুই সাধারন জনগণের হাতে তুলে দিচ্ছে।

গণমাধ্যমের এই যুগেও মানুষকে সচেতন করা সম্ভব হচ্ছে না যে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যথিত ওষুধ সেবন করলে তা জীবনে মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এই মারাত্মক পরিণতির বেশি শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরা। আমাদের দেশে মিশুরা হরহামেশাই ডায়রিয়া এবং কলেরায় আক্রান্ত থাকে।

এই রোগে শরীর থেকে পানি ও লবন বেরিয়ে যাওয়ার ফলে শিশুরা দ্রুত হাইপোভলিয়েমিক শক (ঐুঢ়ড়াড়ষবসরপ ংযড়পশ) এ আক্রান্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।এই অবস্থার দ্রুত উত্তরণের খুব সহজ পথ হলো শিশুকে সঠিক নিয়মে পরিমিত খাবার স্যালাইন খাওয়ানো।

পরিমিত এবং সঠিক নিয়মে খাবার স্যালাইন তৈরি না করে শিশুকে পান করালে শিশু মারাত্মক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। খাবার স্যালেইনে প্রচুর লবন থাকে। এই লবন হলো শরীরের অপরীসীম এক ইলেকট্রোলাইট যেটি তার স্বাভাবিক পরিমান থেকে কমে বা বেড়ে গেলে শিশুর খিুচনী,মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এমন খুব দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে।

বয়স্ক লোকেরা সাধারণত তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারে বিধায় খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় বিধায় এই ধরনের সমস্যায় কম আক্রান্ত হয়। কিন্তু শিশুরা তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো প্রকাশ করতে পারে না বিধায় পিতা-মাতা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না।

আবার শরণাপন্ন হলেও শিশুরোগ সর্ম্পেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অপ্রতুল্যতার কারণে সমস্যা বুঝতে অনেক দেরি যায়। ততক্ষণে শিশুর জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়।

তাই শিশুদের খাবার স্যালাইন নিয়ম মেনে পান করানো অত্যন্ত জরুরী সেই সাথে কোন ওষুধকেই সাধারণ ওষুধ মনে করে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যথিত শিশুদের সেবন করানো উচিত নয়। আমাদের সময় ডটকম।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ