অাওয়ার ইসলাম: পবিত্র কুরআন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী ও পূর্ববর্তী পুণ্যবান আলেমদের বিবরণ থেকে যেসব বিষয় আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক স্পষ্টভাবে হারাম হিসেবে জানা যায় সেগুলোই কবীরা (বড়) গুনাহ।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে কবীরা গুনাহ শুধু সাতটি, যা হাদিসে কাবায়েরে (কবীরা গুনাহ সম্পর্কিত হাদিস) উল্লেখ আছে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। কেননা এ সাত কাজ কবীরা গুনাহ ঠিকই, কিন্তু এ হাদিসের মধ্যে কবীরা গুনাহকে এ সাতটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়নি। অর্থাৎ এ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সাতটির মধ্যে কবীরা গুনাহকে সীমাবদ্ধ করেননি, সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র। এছাড়াও অনেক কবীরা গুনাহ রয়েছে। নিচে ১০টি কবীরা গুনাহ উল্লেখ করা হলো -
১. আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। ’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৪৮)
‘আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করো না; নিশ্চয় শির্ক হল বড় জুলুম। ’ (সূরা লুকমান, আয়াত : ১৩)
‘নিশ্চয় যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার ওপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। ’ (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৭২)
২. মানুষ হত্যা করা :
‘আর যে ইচ্ছাকৃত কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার প্রতিদান হচ্ছে জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে লা’নত করবেন এবং তার জন্য বিশাল আজাব প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৯৩)
৩. যাদু করা।(বান, টোনা মেরে মানুষের ক্ষতি করা)
‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি; বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই মালাইকা হারূত ও মারূতের ওপর।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১০২)
৪. নামাজ না পড়া ও নামাজ আদায়ে উদাসীনতা
‘তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সূরা মরিয়ম, আয়াত : ৫৯-৬০)
৫. জাকাত অস্বীকার করা
‘আর মুশরিকদের জন্য ধ্বংস, যারা যাকাত দেয় না। আর তারাই আখিরাতের অস্বীকারকারী। ’ (সূরা হা মিম সাজদা, আয়াত : ৬-৭)
৬. ওজর ছাড়া রমজানের রোজা না রাখা
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। ’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৪)
৭. শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা
‘তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। ’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
৮. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া
‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন। ’ (সূরা ইসরা, আয়াত : ২৩-২৪)
৯. আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা
‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। ’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১)
‘আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে, আর মন্দ হিসাবের আশঙ্কা করে। ’ (সূরা আর-রাদ, আয়াত : ২১)
১০. জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া
‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। ’ (সূরা আল-ইসরা, আয়াত : ৩২)
‘ব্যভিচারিণীও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশ’টি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে। ’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ২-৩)
সূত্র : কবীরা গুনাহ, ইমাম আয-যাহাবী, দারুস সালাম, বাংলাদেশ, ওয়াহির আলো