আওয়ার ইসলাম : ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ি মাদরাসায় আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভায় মাদরাসার মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির ও গুলশান গ্র্যান্ড আজাদ মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, স্বাধীনতার নেয়ামত ধরে রাখতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।
ছাত্রদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক পরাধীন জাতি আছে। তারা বোঝেন স্বাধীনতা কী জিনিস। আমরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। আল্লাহ আমাদেরকে অনুগ্রহ করে স্বাধীনতার সম্পদ দান করেছেন। এখন এর হেফাজত করার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা এই নেয়ামতের কদর না করলে আল্লাহ একদিন তা ছিনিয়ে নিতে পারেন।
যাত্রাবাড়ি মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় দেশ। দেশের প্রতি প্রেম স্বভাবগত ও ধর্মীয় ব্যাপার। দেশপ্রেম শরিয়তগত বিষয়ও।
তিনি বলেন, ‘রাসুল সা. যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যাচ্ছিলেন তখন মক্কাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘হে মক্কা! তুমি আমাকে বের না করলে আমি মক্কাতেই থাকতাম। তোমার কওম আমাকে বের করে দিচ্ছে। এই বলে বিচলিত কণ্ঠে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। এর থেকে বোঝা যায় দেশপ্রেম স্বভাবগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
দেশের শীর্ষ এই আলেম বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার দুটি বিষয়। প্রথমে অখণ্ড ভারত থেকে ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র হয়েছিল। বলা হয়েছিল এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি রাষ্ট্র হবে। এজন্য আমাদের আকাবির এটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তৎকালীন রাজনীতিবিদরা আলেমদের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল ’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একদিকে ইসলামের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে অন্যদিকে বাঙালির ওপর শোষণ-নির্যাতন চালিয়েছে। এজন্য স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তানের প্রতি আমাদের আস্থা থাকেনি। আমাদের দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং স্বাধীনতা লাভ করে।’
আল্লামা মাহমূদুল হাসান বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার খুবই প্রয়োজন ছিল। যারা এ দেশকে স্বাধীন করেছেন তারা দেশের জন্য নিবেদিত ছিলেন। তাদের কথা স্মরণ করা, তাদের অবদান স্বীকার করা মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। আমি মনে করি স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং যারা ময়দানে যুদ্ধ করেছেন, ত্যাগ দিয়েছেন তাদের স্মরণ করা উচিত। তাদের জন্য সবসময় দোয়া করা উচিত। আল্লাহ যেন তাদেরকে নিজ নিজ ত্যাগের প্রতিদান দেন ’
গুলশান গ্র্যান্ড আজাদ মসজিদের খতিব বলেন, ‘আজ আমাদের দেশ বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সদ্য আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। এটা ধরে রাখার জন্য সবার মেহনত করা উচিত। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতি সবার সতর্ক থাকা উচিত।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া উচিত। দীনি শিক্ষা ছাড়া মানুষের চরিত্র গঠন হয় না। তাই দীনি শিক্ষাকে সর্বক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া উচিত। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিশৃঙ্খলা যেন সৃষ্টি না হয় সে দিকে দৃষ্টি দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে সচেষ্ট হতে হবে। এতে আমরা স্বাধীনতার সুফল পাবো। আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে প্রতিদান দেবেন।’