বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


সমাজবিচ্ছিন্নতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যেও

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শাহনাজ শারমিন
ফিচার রাইটার

মানুষ সামাজিক জীব। তাই একে অন্যের ওপর নির্ভর করে। সামাজিকতার ভেতর দিয়েই গড়ে ওঠে মানুষের বিভিন্ন সম্পর্ক। আমরা সবাই চাই সামাজিক জীবন সব সময়ই সুন্দর ও আনন্দময় হোক, কিন্তু আপনি কি জানেন সামাজিকতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ?

সামাজিকতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এতোবেশি গুরুত্বপূর্ণ , প্রতিদিন আমাদের সুস্থ ও সুন্দর থাকতে হলে অবশ্যই সামাজিক হয়ে চলতে হবে। কেননা, একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই জীবনযাপনকে সচল রাখে।

যদি কেই সমাজবিচ্ছিন্ন থাকে তবে? দীর্ঘদিন সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা যে কারো মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মাঝেমধ্যে সবারই একা লাগে। কিন্তু দীর্ঘদিন সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার পর আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক জরুরি।

২০১০ সালে  বিভিন্ন জরিপে উঠে আসা ১৪৮টি গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্কে জড়িত থাকা মানুষ অন্যান্য দুর্বল সম্পর্কের মানুষের তুলনায় ৫০ গুণ বেশি প্রাণচাঞ্চল্যের অধিকারী হয়। এ ধরনের আরো বিস্তারিত গবেষণায় বলা হয়েছে, শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক বিভিন্ন নির্দিষ্ট রোগের ওপরও পজেটিভ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হতে পারে।

বিচ্ছিন্ন কারা
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ডেবি ফকনার বলছেন, "সবারই একা লাগতে পারে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু বয়স্কদের বেলায় এটি বেশি দেখা যায়।”

সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতার অনেক কারণ থাকতে পারে, হয়ত কেউ তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছে না। হয়ত তাদের জীবনযাত্রায় মিল নেই। তবে বয়স হওয়ার কারণেই একা হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ।

"যখন আপনি বুড়ো হয়ে যান, আপনার রোগ বেশি হয়, সঙ্গী কিংবা কোনো ঘনিষ্ঠজনের মৃত্যুশোক সইতে হয়, চলাফেরার ক্ষমতা আগের মতো থাকে না, চাকরি থেকেও অবসর নিতে হয়, এভাবে পুরনো বন্ধুত্ব জিইয়ে রাখা কিংবা নতুন বন্ধু তৈরি করাও কঠিন হয়ে যায়।"

"এই সময়টায় জীবনে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, এই পরিবর্তনের ফলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মানুষ।”

সামাজিক একাকীত্বের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা শারীরিক এবং মানসিক - দুভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: হতাশা, উদ্বিগ্নতা এবং অল্পতেই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি। সহজে ঘুম না আসা কিংবা অতিরিক্ত ঘোমানো। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া।

মাদকাসক্তি
অল্পতেই ক্লান্তি কিংবা অনুপ্রেরণার অভাব। সামাজিক একাকীত্বের নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বিস্তর গবেষণা। অবাক করার বিষয় হলো, একাকীত্বের ফলাফল হতে পারে আরও খারাপ কিছু।

বিশ্বব্যাপী ১০০টি গবেষণার প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে, একাকীত্বের প্রভাব কতটা নেতিবাচক হতে পারে।

নিঃসঙ্গতার ক্ষতিকর প্রভাব তুলনা করা যেতে পারে ১ দিনে ১৫ টি সিগারেট খাওয়া কিংবা ৬ ধরনের মদ্যপান করার সঙ্গে। ব্যায়াম না করার ফলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তার থেকেও বেশি ক্ষতিকর একাকীত্ব। স্থুলকাতরতার ফলে দেখা দেয়া স্বাস্থ্য সমস্যার চেয়ে দ্বিগুণ সমস্যা তৈরি করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা।

বন্ধুত্ব যখন সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি
কাজের খাতিরে আজকাল অনেকেই পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকেন। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে একমাত্র সঙ্গীটি। যদি আপনি একাকী বোধ করা শুরু করেন কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে বুঝতে হবে, আপনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।

এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন
আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের ফোন করুন। তাদের জানান, আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করছেন এবং তাদের কাছে সময় চান। তাদের ফোনের জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে আগ বাড়িয়ে নিজেই করুন কাজটি, যোগাযোগ দুপক্ষের ইচ্ছা থেকেই হয়।চারপাশের লোকজনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠুন।

বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা মানবসেবামূলক আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিন। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটবে।

ঘুরে বেড়ান—এলাকার বাজার থেকে সবজি কিনুন, চায়ের দোকানে একটু বসুন কিংবা আশেপাশের পার্কে হাঁটতে যান। এরই ফাঁকে পরিচয় হয়ে যাবে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ