বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


রজব মাসের রোজা ভিত্তিহীন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আলহেরা (আরবি ম্যাগাজিন)

আরবি মাসসমূহের সম্মানিত চার মাসের একটি হলো রজব। ইরশাদ হয়েছে,

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْراً فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ  التوبة/36

“নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে। সুতরাং তোমরা এই মাসসমূহে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।” (সুরা তাওবা : ৩৪)

হারাম তথা সম্মানিত মাসগুলো হচ্ছে- রজব, যুলক্বদ, যুলহজ্জ ও মুহররম মাস। হাদিসে শরিফে ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ أَبِي بَكْرَةَ رضي الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا , مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ , ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ : ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ , وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَان ) .

আবু বকরা (রাঃ) থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “বছর হচ্ছে- বার মাস। এর মধ্যে চার মাস- হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক: যুলক্বদ, যুলহজ্জ, মুহররম ও (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যে মাসটি জুমাদাল আখেরা ও শাবান মাস এর মধ্যবর্তী।” (বুখারি হাদিস নং ৪৬৬২ ও মুসলিম, হাদিস নং১৬৭৯)

রজম মাস অত্যন্ত সম্মানিত হলেও এতে বিশেষ রোজা ও নামাজের যেসব কথা শুনা যায় তা ভ্রান্ত। তবে এই মাসে বিশেষভাবে গুনাহ করতে বারণ করা হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন:

" وأما صوم رجب بخصوصه فأحاديثه كلها ضعيفة ، بل موضوعة ، لا يعتمد أهل العلم على شيء منها ، وليست من الضعيف الذي يروى في الفضائل ، بل عامتها من الموضوعات المكذوبات) مجموع الفتاوى" (25/290(

পক্ষান্তরে রজব মাসে রোজা রাখা সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস দুর্বল; বরঞ্চ মাওযু (বানোয়াট)। আলেমগণ এর কোনটির উপর নির্ভর করেন না। ফজিলতের ক্ষেত্রে যে মানের দুর্বল হাদিস বর্ণনা করা যায় এটি সে মানের নয়। বরং এ সংক্রান্ত সবগুলো হাদিস মাওজু (বানোয়াট) ও মিথ্যা। (মাজমুউল ফাতাওয়া ২৫/২৯০)

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

" كل حديث في ذكر صيام رجب وصلاة بعض الليالي فيه فهو كذب مفترى" انتهى من )المنار المنيف" ص96(

“রজব মাসে রোজা রাখা ও নফল নামায পড়ার ব্যাপারে যে কয়টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে সব ক’টি মিথ্যা” (আল মানার আল-মুনিফ, পৃষ্ঠা- ৯৬)

ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:

" لم يرد في فضل شهر رجب , ولا في صيامه ولا صيام شيء منه معين , ولا في قيام ليلة مخصوصة فيه حديث صحيح يصلح للحجة "

রজব মাসের ফজিলত, এ মাসে রোজা রাখা বা এ মাসের বিশেষ বিশেষ দিনে রোজা রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। অথবা এ মাসের বিশেষ কোন রাত্রিতে নামায পড়ার ব্যাপারে সহিহ কোন হাদিস নেই। সমাপ্ত (তাবয়িনুল আজাব, পৃষ্ঠা- ১১)

শাইখ সাইয়্যেদ সাবেক (রহঃ) বলেন:

" وصيام رجب ليس له فضل زائد على غيره من الشهور , إلا أنه من الأشهر الحرم , ولم يرد في السنة الصحيحة أن للصيام فضيلة بخصوصه , وأن ما جاء في ذلك مما لا ينتهض للاحتجاج به " انتهى. )فقه السنة 1/383(

অন্য মাসগুলোর উপর রজব মাসের বিশেষ কোন ফজিলত নেই। তবে এটি হারাম মাসসমূহের একটি। এ মাসে রোজা রাখার বিশেষ কোন ফজিলত কোন সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি। এ বিশেষ যে ক’টি বর্ণনা রয়েছে এর কোনটি দলিল হিসেবে গ্রহণ করার উপযুক্ত নয়। সমাপ্ত (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৮৩)

শাইখ উছাইমীনকে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন:

" صيام اليوم السابع العشرين من رجب وقيام ليلته وتخصيص ذلك بدعة، وكل بدعة ضلالة " انتهى . "(مجموع فتاوى ابن عثيمين 20/440)

“সবিশেষ মর্যাদা দিয়ে ২৭ শে রজব সিয়াম ও কিয়াম পালন- বিদআত। আর প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রান্তি।” সমাপ্ত )মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ উছাইমীন, ২০/৪৪০)


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ