এ এস এম মাহমুদ হাসান
বিশেষ প্রতিবেদক
সম্প্রতি টিভি অভিনেতা মোশাররফ করিম একটি টিভি চ্যানেলে নারী ধর্ষণ (নির্যাতন) নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন। আর এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার শূলে বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি।
যদিও ইতোমধ্যে মোশাররফ করিম তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
মূলত সেই অনুষ্ঠানে মুশাররফ করিম নারী নির্যাতন নিয়ে যে উদ্ভট প্রশ্ন ও বোরকা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন তা শুধু মোশাররফ করিম নয়, বরং সমাজের এক শ্রেণির বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি মোশাররফ করিমের মতো বক্তব্যকেই লালন করেন।
এমনকি তারা এসব উদ্ভট চিন্তাধারা সর্বত্র প্রচারও করেন। মোশাররফ করিমের বক্তৃতা ও চিন্তাধারা কেন উদ্ভট ও তাদের অজ্ঞতাপ্রসূত (?) আর কেনই বা বোরকা নিয়ে তার বক্তব্যটি মোটেই বুদ্ধিবৃত্তিক নয়। এবার আসুন সেটা দেখে নেই-
১। মেয়েরা স্বাচ্ছন্দের পোশাক অবশ্যই পরিধান করতে পরবে। অবশ্যই পছন্দের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ইসলাম ধর্মে রয়েছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার একটি সীমারেখা বা লিমিটেশন অবশ্যই রয়েছে। যেমনটি ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে রোগীর ইচ্ছার ইচ্ছানুপাতে ওষুধের পাওয়ার পরিবর্তন কিংবা ডোজ কম-বেশি করার সুযোগ নেই।
মেয়েরা মাহরামের সামনে এবং ঘরে অবশ্যই স্বাচ্ছন্দের শালীন পোশাক পরিধান করবে। এতে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। কিন্তু ঘরের বাইরে ও গায়রে মাহরামদের সামনে হিজাব বা বোরকা প্রতিটি নারীর শরীর ও সম্ভ্রম রক্ষাকবচ। যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা সুবিদিত।
মোশাররফ করিম সেই বক্তব্যে বোরকা পরিহিত একজন নাবালেগ মেয়ের ধর্ষিতা হওয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বোরকা বা হিজাবের অকর্মন্যতা প্রমাণের অপচেষ্টা করেছেন।
কিন্তু তিনি কি বলতে পারবেন, প্রেম, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি কাহিনিনির্ভর সিনেমা, সিরিয়াল ও নাটক একটি জাতিকে কতটা নির্লজ্জ করে তুলছে? মোশাররফ করিমদের মত অভিনেতাদের চিত্রনাট্যে যৌন সুড়সুড়ি পেয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যৌনতা লালনের যে সখ এক শ্রেণির অসভ্য লোকদের মাথায় গিজ গিজ করছে। তার দায়ভার কেন বোরকা বা হিজাবের উপর বর্তাবে?
২। সমাজে কাকতালীয়ভাবে ঘটে যাওয়া বোরকা পরিহিত নাবালিগা মেয়েকে ধর্ষণের যে চিত্র মোশাররফ করিম বক্তৃতায় এনেছেন, তা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলা যেতে পারে।
কারণ সেই বোরকা পরিহিতা নাবালিগা মেয়ের ধর্ষণে মেয়েটি মোটেই অভিযুক্ত নয়, বরং সমাজে অসংখ্য অশ্লীল ও যৌন সুড়সুড়ি নির্ভর প্লাটফর্ম ও মাধ্যম থাকায় তাতেই উদ্বুদ্ধ হয়ে লম্পটরা একজন বোরকা পরিহিতা নাবালিগাকেও ধর্ষণ করতে দ্বিধা করছে না।
সুতরাং ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে উত্তম মানসিকতা যেমন জরুরি তেমনি সমাজের এসব অশ্লীলতা ও সর্বত্র পোশাকের অশালীনতা বন্ধেও নারীর সুরক্ষা নিহিত রয়েছে।
৩। সৌদিসহ আরব দেশগুলোতে নারীদের সম্ভ্রম সুরক্ষায় শালীনতার কঠোর আইন রয়েছে। অবাধ যৌনতা সে দেশগুলোতে নিষিদ্ধ থাকায় সেখানে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রায় শূন্যের কোঠায়।
আপনার সন্তানকে ভর্তি করুন ঢাকা আইডিয়ালে
অপর দিকে ভারত ও বাংলাদেশে যৌনতা লালনের অপার স্বাধীনতা ও অশালীন পোশাকের যত্রতত্র ব্যবহার থাকায় ধর্ষণের মাত্রা ও গণ্ডি তার সব সীমা ছাড়িয়েছে। যৌন সুড়সুড়িতে উদ্বুদ্ধ হয়ে লম্পটদের দৌরাত্ম এতটাই প্রকট যে, এখন একজন বোরকা পরিহিতা নাবালিগা মেয়েও এ দেশে সুরক্ষিত নয়।
কিংবা বলা যেতে পারে যারা বোরকাকে পছন্দ করেন না তারাই পরিকল্পিতভাবে শালীন পোশাকের নারীদের হয়রানি করে উদাহরণ তৈরির ঘটনা ঘটিয়েছে।
সুতরাং মোশাররফ করিমদের মত লুকিয়ে থাকা হিজাব ও শালীনতা বিরোধীদের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা চেতনা লালন করার আহবান জানাই।
শুধু নিজ মতের উপর অটল থাকতে একগুয়েমিপনা ছেড়ে প্রকৃত মুক্তচিন্তা করার জোর অনুরোধ জানাচ্ছি। মানসিকতার পরিবর্তন ও পরিচ্ছন্নতা অবশ্যই জরুরি তবে নারীর শালিনতাও জরুরি। কারো এজেন্ডা সামনে না রেখে আরেকটু গভীরে চিন্তা করুন তাহলে ইসলামের প্রতিটি নিয়মেরই যথার্থতা বুঝে আসবে আশা করি।
মোশাররফ করিমের বিতর্কিত বক্তব্য; পেছনের দৃশ্যে কারা?
আরআর