মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ৯ রমজান ১৪৪৫


মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভের নেপথ্যে কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন শিক্ষার্থীকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) কর্তৃক তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উপাচার্য ভবন সংলগ্ন কলাভবনের গেট থেকে তাদের তুলে নেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ১০টার দিকে কলা ভবনের মূল গেটের বিপরীত পাশের রাস্তায় মারধর করে র‌্যাব তিন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায়।

তুলে নেয়া তিন ছাত্র হলো তানভীর, ফয়সল ও হিমেল। এর মধ্যে তানভীর এবং ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক ছাত্র। হিমেল সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

এদিকে তাদের তুলে নিয়ে ‘জঙ্গি বলে চালিয়ে দেয়া’র ভয় দেখিয়ে র‌্যাব চাঁদা দাবি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তুলে নেয়া শিক্ষার্থীদের রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহেব আলী।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ঢাবি ছাত্র জানান, ‘মোটরসাইকেলে ওই তিন ছাত্র র‌্যাবের একটি হাই-এস মডেলের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এরপর র‌্যাবের গাড়ির চালকের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের কথাকাটাকাটি হয়। পরে গাড়িতে থাকা ১০-১২ র‌্যাবের পোশাক পরিহিত সদস্য বের হয়ে তাদেরকে বন্দুক ঠেকিয়ে মোটর সাইকেলের হেলমেট দিয়ে র‌্যাব সদস্যরা ছাত্রদের বেদম মারধর শুরু করে।’ সরেজমিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একটি সাদা রঙের অ্যাপাচি মোটরসাইকেল ( নং ২৮৯৫১৭) ও ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ভুক্তভোগী ইমরান হোসেন জানান, ‘শুরুতে তাদের ধরে নিয়ে র‌্যাব জানায় টাকা দিলে ছেড়ে দেবে। তাদের বলি টাকা পাব কোথায়? তখন র‌্যাব সদস্যরা বলেন, টাকা না দিলে জঙ্গি বলে চালিয়ে দেব।’ তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলার পরেও র‌্যাব উপর্যুপরি মারধর করে।

কিছুক্ষণ পর কালো পোশাকে ১০-১২ জন র‌্যাব সদস্য গাড়িটি থেকে নেমে শিক্ষার্থীদের মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং মারধর করে। বাইকের হেলমেটের মারধরে এক ছাত্রের মাথা ফেটে যায়।

তারপর র‌্যাব সদস্যরা তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। সরেজমিন উপস্থিত হয়ে একটি সাদা রঙের অ্যাপাচি মোটরবাইক (নং ২৮৯৫১৭) ও ঘটনাস্থলে ছোপ ছোপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে আগত বিভিন্ন রুটের গাড়ি আটকাতে থাকেন। রাত ১১টার দিকে টিএসসি অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন।

এ সময় র‌্যাব-৪ এর একটি গাড়ি টিএসসি এলাকায় এলে সেটিকে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধরা। এ কারণে গাড়িটি দ্রুত টিএসসির ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের বুথের সামনে দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে সটকে পড়ে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসানসহ বিভিন্ন হলের ছাত্রলীগ নেতারা এসে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেন।

সহকারী প্রক্টর সহকারী প্রক্টর সোহেল রানা বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের কেন ধরে নেওয়া হল সে বিষয়ে র‌্যাবের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন তারা। ছাত্ররা কোনো অপরাধ করলে তারা আমাদের জানাতে পারত। ক্যাম্পাসের মধ্য থেকে ধরে নিয়ে গেল কেন,

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা বর্তমানে হলে আছি। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানব এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘একটি বাইকের সঙ্গে গাড়িটির ধাক্কা লেগেছে বলে শুনেছি। যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কাঁটাবন এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই-তিনজন তরুণ যানজটে পড়ে। সেখানে রাস্তার পাশে র‌্যাবের একটি মাইক্রোবাস ও একটি স্টিকারহীন প্রাইভেটকার রাখা ছিল। ওই তরুণরা এসে একটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলে।

র‌্যাব সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্লাস ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেয়। কেন গ্লাস ভাঙা হল? জানতে চাইলে তরুণরা জানায়, এটা র‌্যাবের গাড়ি তা তারা জানত না। পরে তারা গ্লাস মেরামত করে দিতে চায়। এ বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’ আমাদের সময়।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ