মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ৯ রমজান ১৪৪৫


স্মার্টফোন নিয়ে প্রচলিত ৫ টি ভুল ধারণা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: কল্পনা করুন, বহুদিন পর আপনার পুরনো বন্ধুদের সাথে জমিয়ে আড্ডা হচ্ছে। অনেকদিন পর এত মন খুলে কথা বলছেন, কবে দেখা করবেন সে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এমন সময়ে আপনার ফোনের চার্জ হয়ে গেল ১% আর একটু পরেই ফোন বন্ধ! এমন হঠাৎ করে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন কম বেশি আমরা সবাই হয়েছি।

এখনকার দিনে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা অনেক। তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ব্যবহার করে আ্যন্ড্রয়েড ফোন। একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মানুষের মাথায় তার ফোন সম্বন্ধীয় যে চিন্তাটা সবচেয়ে বেশি থাকে সেটা হচ্ছে কিভাবে ফোনের ব্যাটারীর চার্জ দীর্ঘক্ষণ রাখা যায়। কেউ ফোনের ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখেন, কেউ ডাটা কানেকশন বন্ধ করে রাখেন।

এই আ্যন্ড্রয়েড ডিভাইসগুলোর ব্যাটারী নিয়ে মানুষের মনে কিছু ভুল ধারণাও আছে। হয়তোবা আপনার মনেও আছে! চলুন দেখে নেই এমনি কয়েকটি ভুল ধারণা যা আ্যন্ড্রয়েড এর ব্যাটারী সম্বন্ধে বহুল প্রচলিত।

বেশিক্ষণ চার্জে দিয়ে রাখা ব্যাটারীর জন্য ক্ষতিকর
অনেকেই আমরা রাতে ঘুমানোর আগে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পরি। কিন্তু অনেকের মনেই এই ধারণা আছে যে, বেশিক্ষণ চার্জে দিয়ে রাখা ব্যাটারীর জন্য ক্ষতিকর। ব্যাটারী ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি ফোন চার্জে দিয়ে রাখা হয়, তাহলে ব্যাটারীর কর্মক্ষমতা কমে যাবে বা ব্যাটারী বিস্ফোরিত হবে। এটি একটি ভুল ধারণা। স্মার্টফোন আসার আগে যে মুঠোফোন গুলো ছিলো, সেগুলোর ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই কথাগুলো সত্য।

আগেরদিনে যে মোবাইল ফোনগুলো ছিলো, সেগুলোর ব্যাটারীগুলোতে নিকেল ক্যাডমিয়াম ছিলো। যার কারণে মোবাইল বেশিক্ষণ চার্জে দিয়ে রাখলে ব্যাটারীগুলো ফুলে যেত, কর্মক্ষমতা কমে যেত এমনকি বিস্ফোরণ ও ঘটতো। কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারী আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী। যার কারণে বেশিক্ষণ চার্জে দিয়ে রাখলে ফোনের কোন ক্ষতি হবে না। উলটো, ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি ফোন চার্জে দিয়ে রাখা যায়, তাহলে তা ব্যাটারীর জন্য ভালো। এমনকি এতে ব্যাটারী চার্জ ধরে রাখতে পারে সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি।

তবে হ্যা, ফোন যদি কোন বিশ্বস্ত ব্র‍্যান্ডের না হয়, বা ফোনের কেসিং যদি সস্তা হয়, ফোন যদি অল্পতেই গরম হয়ে যায়, তাহলে ফোনগুলো বেশিক্ষণ চার্জে না রাখাই ভালো।

পুরোপুরি চার্জ শেষ না হলে চার্জে দেয়া যাবে না
এই ধারণাটাও পুরনো দিনের নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু বর্তমানের স্মার্টফোনের ব্যাটারীতে রয়েছে লিথিয়াম আয়ন। আগের ব্যাটারিগুলোতে চার্জ পুরোপুরি শেষ না করে পুনরায় চার্জে দিলে সেগুলোর কর্মক্ষমতা খুব তাড়াতাড়ি কমে যেত। কিন্তু এখন সে দিন আর নেই।

এখন আপনি চাইলেই আপনার ৮০% পাওয়ার সম্বলিত ব্যাটারীকে চার্জে দিয়ে ১০০% করে নিতে পারেন। এতে আপনার ব্যাটারীর কর্মক্ষমতা বাড়বে।

নির্দিষ্ট ব্র‍্যান্ডের ফোনের জন্য নির্দিষ্ট চার্জার
প্রত্যেকটা নতুন মোবাইলের সাথে সেই ব্র‍্যান্ডের একটা চার্জার দেয়া থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই চার্জার আপনার কাছে না ও থাকতে পারে। নষ্ট হয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। সেক্ষেত্রে অনেকেই চায় তার ফোনের জন্য সেই নির্দিষ্ট ব্র‍্যান্ডের চার্জার কিনতে যা খুব বেশি দামি হয়ে যায় অনেকের জন্য।

এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে দুইটা ধারণা কাজ করে। প্রথমত, অন্য ব্র‍্যান্ডের চার্জার কিনলে খুব ধীরগতিতে চার্জ হয়। দ্বিতীয়ত, অন্য ব্র‍্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারীর কর্মক্ষমতা কমে যাবে। এই দুইটি ধারণাই ভুল।

একটি চার্জার দিয়ে ফোন কত দ্রুত চার্জ হবে, এটা নির্ভর করে আপনার চার্জার কতখানি পাওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময়ে টানতে পারে। আর চার্জ যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে ব্যাটারীর ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই কোন বিশ্বস্ত দোকান থেকে দেখেশুনে চার্জার কিনলেই অল্প খরচে আপনার সমস্যা সমাধান হবে।

পাওয়ার সেভিং আ্যপস
ফোনের ব্যাটারীর মেয়াদকাল বাড়াতে আমরা একটি কাজ প্রায়ই করি। সেটি হচ্ছে বিভিন্ন পাওয়ার সেভিং আ্যপ ইনস্টল করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, এইসব পাওয়ার সেভিং, আ্যপ কিলার বা হাইবারনেটিং আ্যপগুলো কোন কাজের না। আপনি এই আ্যপগুলো ব্যবহার করে যতই “ফোর্স স্টপ” করেন না কেন, কিছুক্ষণ পরে সেগুলো আবার চালু হয়ে যায়। উলটো এই পাওয়ার সেভিং আ্যপ গুলোর জন্য আপনার ডিভাইসের জায়গা, এবং ব্যাটারি পাওয়ার দুটিই নষ্ট হচ্ছে।

তাই শুধুশুধু এই আ্যপগুলো ডাউনলোড না করে আপনি “Recent Apps” অপশনে গিয়ে আ্যপগুলো ক্লিয়ার করে দিন। এই সব পাওয়ার সেভিং আ্যপের চাইতে সেটা শতগুণ বেশি কার্যকরী।

নির্দিষ্ট কিছু সার্ভিস ডিজেবল করে রাখা
ব্যাটারী পাওয়ার বাঁচাতে আমরা অনেক সময় ব্লু টুথ, লোকেশন এগুলো বন্ধ করে রাখি। কিন্তু ব্লু টুথ, অটো রোটেশন বা লোকেশন ডিজেবল করে রাখাতে ব্যাটারীর পাওয়ারের খুব বেশি কিছু আসে যায় না। এইসব ছোটখাটো বিল্ট ইন সার্ভিস অন থাকলে কোন সমস্যা নেই। তবে ডাটা কানেকশন, ওয়াইফাই এগুলো কাজ না থাকলে বন্ধ করে রাখলে এবং ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখলে ব্যাটারী লাইফ খানিকটা দীর্ঘ হয়।

তবে এমনিতেও যে কোন আ্যন্ড্রয়েড ডিভাইস এক থেকে দেড় বছর ব্যবহার করলে তার ব্যাটারীর কর্মক্ষমতা ২০%-৩০% হ্রাস পায়। তাই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যাটারী দুর্বল হয়ে পরবে, এটাই স্বাভাবিক।

সূত্র: ইন্টারনেট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ