রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মুসলিমমুক্ত রাখাইন গড়ার ষড়যন্ত্র যেন নস্যাৎ হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেয়ার বিষয়টি যে ‘আইওয়াশ’ তা এখন স্পষ্ট। কারণ মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি করলেও তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে টালবাহানা করছে।

অন্যদিকে এটাও স্পষ্ট যে, মিয়ানমার রাখাইনকে মুসলিম-মুক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মুসলিমদের পাশে দাঁড়াবে কে?

প্রশ্নটা এই কারণে যে, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকাকে কেবল বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েই দায়িত্ব সেরেছে। এক্ষেত্রে কিন্তু কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।

তাহলে কি তারা বসনিয়া-হার্জেগোভিনার মতো একেবারে শেষ দিকে হস্তক্ষেপ করে ‘নীতি’ রক্ষার ফন্দি করছে বলে ধরে নেওয়া যায় না? অবশ্য সেখানে তারা মুসলমানদের রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেনি, বরং সার্বিয়াকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।

আসল কথা হচ্ছে, মুসলমানরা জুলুমের শিকার হলে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো শুধু মুখে মুখে সহানুভূতি প্রকাশ করে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসহ উগ্রবাদী বৌদ্ধরা যেভাবে নির্বিচারে খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করেছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। শুধু জীবন নিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।বাংলাদেশ সাধ্যানুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

কারও অজানা নয়-রাখাইন রাজ্যের ‘কাউক গ্রাম’ এক সময় ছিল রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিবাস। যে গ্রামের প্রবেশপথে এখন শোভা পাচ্ছে বৌদ্ধদের পতাকা। সেখানে বসতি গড়ে তুলছে বৌদ্ধ রাখাইনরা।

এসব কীসের আলামত? নিশ্চয়ই রাখাইনকে মুসলিম-মুক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্র!

জাতিসংঘের প্রতিনিধিসহ পশ্চিমা দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে ছুটে এসেছেন। তারা মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

বলা যায়, এক রকমের চাপে পড়েই মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে লোকদেখানো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করেছে।

প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার নাম দেওয়া হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগের দিন মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ভিন্ন কথা। তারা কিনা এ তালিকা থেকে মাত্র ৩৭৪ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে! তারপর থেকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি স্থগিত হয়ে আছে।

স্থগিত হওয়া বিষয়টির সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ যে আমাদের ধারণার বাইরে কিছু নয়। বলতে চাচ্ছি, এ সবই রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার জন্য এক ধরনের নাটক, প্রতারণা। তবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে যেহেতু চীনের ভূমিকা রয়েছে, তাই এর দায় দেশটি এড়িয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কার্যক্রমে চীনকে অবশ্যই অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করি।

এদিকে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা।

আশ্রয়শিবিরগুলোতে তারা ভয় আর হতাশায় ডুবে আছে। এক্ষেত্রে বলতে হয়, মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে তারা হয়তো মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে বন্য হাতি, সাপের কামড় এবং রাতের অন্ধকারে মানব পাচারের ভয় থেকে মুক্তি পাচ্ছে না শিশুরা। ফলে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে তাদের শৈশব।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শিশুরা শিবিরে শৌচাগার ব্যবহারের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। অধিকাংশ শিশুই জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে যেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করছে।

বনরক্ষীরা তাদের অনেক সময় লাঠি দিয়ে আক্রমণ করে, অনেকে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়; পাশাপাশি বন্য হাতি আর সাপের ভয় নিত্যদিনের সঙ্গী। আবার জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে কেউ কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ছয় লাখই শিশু। এদের মধ্যে ২৬ হাজার শিশুর বাবা অথবা মা মারা গেছে। সাত হাজার শিশুর বাবা-মা দুজনই নেই। তারা ধারাবাহিকভাবে বিষণ্নতার মধ্যে আছে। এদের জন্য শুধু বাংলাদেশ একা নয়, বিশ্ববাসীর সবার দায়িত্ব আছে বলে মনে করি।

আর এ দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বকে অবশ্যই কেবল বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

সবাই মিলে এমন একটা পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে, নিজেদের ভিটামাটিতে ফিরে যেতে পারে। নাগরিকত্বসহ সকল অধিকার নিয়ে যেন নিরাপদে বসবাস করতে পারে।

সর্বোপরি, রাখাইনকে মুসলিম-মুক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্র যেন নস্যাৎ হয়ে যায়।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

soyedfaizul@gmail.com
১৮.০৩.২০১৮

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শেষ কোথায়?


সম্পর্কিত খবর