বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্য: পাল্টাবে কি নাস্তিকদের বিশ্বাস?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কাজী হামদুল্লাহ

সর্বপ্রথম শোক প্রকাশ করছি পৃথিবীসেরা পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন উইলিয়াম হকিংয়ের মৃত্যুতে। তার মৃত্যুতে পৃথিবী হারালো একজন প্রতিভাবান মেধাবী বিজ্ঞানী। বলা হয়ে থাকে আইনেস্টাইনের পরে প্রথিতযশা বিজ্ঞানী ছিলেন স্টিফেন হকিং। আর তাই তার অসংখ্য সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে বেশ সমাদৃত।

বিজ্ঞানের একটা বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। তার মেধার প্রখরতা দেখে পৃথিবীর জ্ঞানীসমাজে তার প্রতি বেশ অনুরাগও দেখা যায়। পাশাপাশি আরেকটা ভ্রষ্ট বলয়ও গড়ে উঠেছে মি. স্টিফেন হকিংকে ঘিরে।

স্রষ্টা এবং পরকাল বিষয়ে তার অবস্থান নিয়েও পৃথকভাবে আলোচিত হয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে নাস্তিকসমাজের কাছে তার মূল্য বেড়ে গেছে অনেক গুণ। তারা তাকে আইডল হিসেবেও গ্রহণ করে থাকে বোধ হয়।

তার সেই মতবাদ বা মন্তব্যকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে অনেক জায়গায়। যদিও বাংলাদেশী পদার্থ বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের কথায় 'তিনি অতোটা নাস্তিক ছিলেন না'।

স্টিফেন হকিংয়ের ব্যক্তিগত মতামত হলো- স্রষ্টা এবং পরকাল বলতে কিছু নেই। বিগব্যাং বা মহাবিষ্ফোরণের ফলে সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে। পরকাল একটি কাল্পনিক রূপকথা। অন্ধকারে ভয় পাওয়া মানুষের মতো চিন্তা।

কয়েক বছর আগে বিবিসি এবং লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় পৃথক সাক্ষাৎকারেও বিষয় দু'টি তিনি ম্যানশন করেছিলেন। তার এসব কথাকে লুফে নিয়ে বিশ্বজুড়ে একটা তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো নাস্তিকসমাজ।

আজ সেই মহান ব্যক্তি আর নেই। গতকাল তিনি মারা গেছেন। স্তব্ধ হয়ে গেছে তার সামনে চলা। তবে তার মৃত্যু চিন্তাশীল যে কাউকেই ভাবানোর কথা। বিশেষ করে নাস্তিকদের এ বিষয়টি নিয়ে প্রচুর ভাবা উচিত।

কারণ ক'বছর আগে এই বিজ্ঞানীই দাবি করেছিলেন পরকাল বলতে কিছু নেই। সব কল্পনামাত্র। অলীক চিন্তাধারা। কিন্তু তিনি আজ কোথায় গেলেন?

স্রষ্টা বলতে কেউ নেই বলে তিনি মত ব্যক্ত করেছিলেন। এই পৃথিবী শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে। আবার শূন্যেই বিলীন হবে। মানুষকে চালানোর জন্যও কোনো স্রষ্টা লাগে না।

এক্সাম্পল হিসেবে কম্পিউটারকে সামনে আনেন তিনি। নাস্তিকসমাজ এখানে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে কথাটি প্রমাণ করতে চেয়েছে। তারা দেখাতে চেয়েছে কম্পিউটার আর মানুষ প্রায় একটি রকম। নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিংই এগুলোর চালিকাশক্তি।

আমি বিজ্ঞানী নই। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও আমার নেই বললে চলে। তাই বলে কেউ মানুষকে কম্পিউটারের সাথে তুলনা করলে মেনে নিতে পারি না। তাছাড়া একটি কম্পিউটার যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুধু প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে চলে, এটা তো কোনো জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কথা হতে পারে না।

কারণ কম্পিউটারের জন্যও একটি পাওয়ার লাগে। সে পাওয়ার না থাকলে যতো আধুনিক মানের কম্পিউটারই হোক না কেন, তা অচল। তদ্রুপ মানুষসহ পৃথিবীর সব কিছুই সচল হবার জন্য একটি পাওয়ার লাগে। এসব পাওয়ারের প্রাথমিক পাওয়ারই তো স্রষ্টা!

আমি কিছু নাস্তিক বন্ধুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম স্টিফেন হকিং সম্পর্কে; তিনি তো এখন মারা গেছেন। মারা যাবার আগে তার দেহে একটা জীবন বা প্রাণ ছিলো। যে প্রাণটি আজ থেকে প্রায় ৪৯ বছর আগেই চলে যাবার আশঙ্কা হয়েছিলো। সে যাত্রায় তা যায়নি। (এতে পৃথিবী কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে।)

কিন্তু ১৪ মার্চ তিনি সেই জীবনটা হারিয়েছেন, তার প্রাণ চলে গেছে। জানার বিষয় হলো, কোথায় গেছে তার প্রাণ? এখন কোন গ্রহে এবং কিভাবে তা আছে?

নাস্তিক বন্ধুরা এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। জবাবে শুধু স্টিফেন হকিংয়ের কথাটিই রিপ্লাই করেছে, পরকাল বলতে কিছু নেই। পরকাল বলতে কিছু আছে কিনা সেটা মি. স্টিফেন থাকাবস্থার বিতর্ক।

এখনকার প্রশ্ন হলো তার দেহের অনুপস্থিতিতে তার প্রাণ বা জীবনটা কোথায় গেছে, কোথায় আছে? নাস্তিকদের মাঝে এসব বিষয়ে চিন্তাশীল কী কেউ নেই? ধার করা যুক্তির পরে কি আরেকটু যুক্তি খাটানো যায় না?

বিজ্ঞানের তথ্যমতে, বিদ্যমান পৃথিবীতে আমরা যতো জিনিস দেখি তা পুরো পৃথিবীর মাত্র ৪% (চার ভাগ)। বাকি ৯৬% অামরা দেখি না। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Dark Matter বা অদৃশ্য বিষয় বলা হয়।

এখন কথা হলো, শুধু পৃথিবীরই প্রায় পুরোটা যদি Dark Matter হতে পারে, তাহলে সামান্য ৪ (চার) পয়েন্ট বাড়িয়ে পরকাল কেন ১০০% Dark Matter হতে পারবে না? কেন অদৃশ্য, দেখা যায় না বা কল্পনা করা যায় না বলে ফালতু সব প্রশ্ন তোলা হবে?

আমি স্টিফেন হকিংয়ের উত্থাপিত প্রশ্নের কথা বলছি না। বলছি অন্যান্য কট্টরপন্থী নাস্তিকদের কথা। কারণ স্টিফেনের জীবনটাই অন্যরকম। জানা যায়, তিনি গবেষণা করতে গিয়ে অনেকগুলো মতামত ব্যক্ত করেছিলেন, কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝতে পারলে তা থেকে ফিরে এসেছেন।

নির্দ্বিধায় স্বীকারও করেছেন স্বীয় ভুলের কথা। সময়ের উল্টোগতি এবং ব্ল্যাকহোলের ঘটনা ছাড়াও আরও বেশ কিছু ঘটনা তা-ই প্রমাণ করে।

১৯৯৭ সালে স্টিফেন হকিং ব্ল্যাকহোলের বিষয়ে একটি বাজি ধরেছিলেন। তার পক্ষে ছিলেন কিপ থ্রোন নামে এক বিজ্ঞানী। তার বিপক্ষে একাই ছিলেন বিজ্ঞানী প্রেসকিল। পদার্থ বিজ্ঞানে এটা Thorne-Howking-Preskill bet (থ্রোন-হকিং-প্রেসকিল বাজি) হিসেবে পরিচিত।

২০০৪ সালে স্টিফেন হকিং এই বাজিতে পরাজয়ের কথা প্রকাশ করেন এবং প্রেসকিলের দাবী মেনে নেন। কিন্তু কিপ থ্রোন বাজির পুরস্কার দিতে রাজি হননি। এখানে সুক্ষ্ণ একটি বিষয় ভাবতে গেলে স্টিফেনের প্রতি শ্রদ্ধা জাগে।

বোঝা যায় তিনি ছিলেন সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি। ৫/৬ বছর পরে হলেও গবেষণায় নিজের ভুল বুঝে ফিরে এসেছেন এবং সেটা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু কিপ থ্রোন তার সে জায়গাটিতে পৌঁছতে পারেনি। অকপটে সত্য প্রকাশ তাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি।

মানলাম স্টিফেন হকিং বলেছেন, পরকাল বলতে কিছু নেই। এটা হয়তো তৎকালীন গবেষণায় তার সীমাবদ্ধতার কারণেই মনে হয়েছে। হয়তো তিনি এখান থেকেও ফিরে আসতেন সময় পেলে বা ফিরে এসেছেনও কিন্তু তা প্রকাশ করার সুযোগটা তার হয়নি।

তবে স্টিফেনের একটি প্রসিদ্ধ কথা থেকে বলা যায় যে, তিনি হয়তো স্রষ্টা বিষয়ক তার মতামত থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, 'পৃথিবী বিজ্ঞানের নিয়মেই চলে। এমন হতে পারে যে, নিয়মগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন কিন্তু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করেন না।'

এছাড়াও দেখা যায়, তিনি তার বিভিন্ন বইয়ের অনেক স্থানে ঈশ্বর শব্দটিও অনেক ব্যবহার করেছেন। এসব দিক বিবেচনায় রেখে সহজেই বলা যায়, স্টিফেন হকিংয়ের স্রষ্টার অস্তিত্য সম্পর্কে ধারণা হয়তো তিনি পাল্টে নিয়েছিলেন।

পরকাল সম্পর্কে তার ধারণা পাল্টানোর সূত্র পাওয়া না গেলেও মত পাল্টানোর সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেবার মতো নয়। যেহেতু নিজের অনেক ধারণা থেকে ফিরেছিলেন, এটার থেকেও ফিরে আসাটা হয়তো সময়ের ব্যাপার ছিলো মাত্র বা ফিরেছেনও।

যদি না-ও ফিরে থাকেন, তবে তার মৃত্যুই তো নাস্তিকদের পরকালে বিশ্বাসী বানানোর কথা। তার যে প্রাণ চলে গেছে, তা তো কোথাও না কোথাও গেছে। কিন্তু সেটা কোন জায়গা? নাকি ১০০% Dark Matter তথা পরকালে চলে গেছে?

জগতখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মরে গিয়ে একটি চিরসত্য প্রকাশ করে গেছেন। পরকাল বলে কিছু যে আছে তার মৃত্যুই এর প্রমাণ বহন করে। নাস্তিকরা কি স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুতে তাদের পূর্বস্থিত ধারণা এখন পাল্টাবে?

লেখক: শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা। সম্পাদক, সাহিত্য সাময়িকী প্রবচন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ