শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


আরব থেকে পৃথিবীর নামে; সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শুভ সন্ধ্যা, হে পৃথিবী!

বিমুগ্ধ বিস্ময়ে তোমার ভালোবাসা জড়ানো, আবেগময় কথাগুলো শুনলাম।  প্রিয় পৃথিবী, বিশ্বাস করো! তুমি আজ তোমার এমন এক অঙ্গের প্রতি তোমার হৃদয় নিংড়ানো উদ্দিপ্ত আহবান করেছো, যে অঙ্গ তোমার ব্যথায় ব্যথিত। সুখে-দুঃখে সর্বদাই তোমার পাশেই যার অস্তিত্ব।

আজ তুমি আমাকে সারা বিশ্বময় আমার অতীত শাসনের সেই সোনালি দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছো। যার স্মরণ কেবলই আমার অনিরুদ্ধ হৃদয়ের যন্ত্রণাকে ক্রমশ বাড়িয়ে দেয়।

তুমি তো জানোই, একটা সময় এমন ছিলো, যখন আমি ছিলাম তোমা হতে সম্পূর্ণ পৃথক একটি সত্ত্বাসম। আমার না ছিলো কোন মূল্য, না ছিলো ঐশ্বর্য, না ছিলো বিত্তবৈভব আর না ছিলো প্রভাব প্রতিপত্তি। তুমি তো আমার অধিবাসীদের দিকে চোখ তুলেই তাকাতে না!

তাদের ব্যাপারে তোমার কথিত সভ্যসমাজকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা কি বলতো জানো? বলত-  আরে, এরা তো গ্রাম্য বেদুঈন, মেষপালক, উটের রাখাল। পশুর চামড়ায় এদের বসবাস। তবে টুকিটাকি শুদ্ধভাষায় কথা বলে। এই আর কি! সভ্যতা, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান বলতে এরা কিছুই বোঝে না।

প্রিয় ধরণী, ওরা তো যা বলার বলেছে।  কিন্তু তুমি মোটেই এর দায়ভার এড়াতে পারো না।  কারণ কি জানো? এই অহমী কথাগুলো তারা সেই সময় বলতো, যখন রোম-পারস্য নামক তোমার অহংকারী অঙ্গগুলো, সভ্যতার উচ্চশিখরে পৌঁছেছিলো, আর তুমি সুরম্য অট্টালিকা, সৌখিন আসবাব আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের পরিধেয় পরে রঙ্গিন সাজে সেজেছিলে।

কিন্তু তুমি কি সত্যটা জানো? বস্তুত এ সবই ছিলো ধোঁকা। তোমার জীবনের আলোকপ্রদীপ ছিলো নিভুনিভু। তোমার অন্তরের উত্তাপ হয়ে গিয়েছিলো হীমশীতল। আর নবী রাসুলদের হেদায়াতী বাণী, তোমার হৃদয় থেকে উজাড় হয়ে গিয়েছিলো।

জানো! এই সব কিছুর কারণ ছিলো বিত্তবানদের আয়েশী জীবন আর বুভুক্ষদের বাঁচা মরার লড়াই। প্রজাদের উপর রাজাদের নিপীড়ন আর ক্ষুদ্র জীবনের অসীম লালসা।

তুমি তো জানোই. এগুলো এমন কিছু উপাদান, মানুষের অন্তরে ভালো কিছু প্রবেশ করার মত সামান্য ছিদ্র রাখে না।

ঠিক তাই হয়েছে।  এসব কিছু জনজীবনে সময়ের কোনো ফুরসৎ রাখেনি। ধৈর্যের কোনো বাঁধ রাখেনি।

নতিজায় তোমার অবস্থা এমন সুকরুণ হলো যে, তোমার সুবিশাল বক্ষে এমন কাউকে পাওয়ায় যেত না, যে কিনা তার দীন-ধর্ম বা ক্ষণস্থায়ী জীবনের মাকসাদ নিয়ে একটু ভাববে। তোমার সুবিস্তৃত প্রান্তরে এমন সত্ত্বা বিরল হয়ে গেলো যে তার স্রষ্টার এবাদত করবে। নিরালায়-নিভৃতে বসে বসে তোমার নামের তনবিহ পাঠ করবে।

জানো, হে প্রিয় অবনী!

সেটা এমন একটা সময় ছিলো, তুমি ছিলে সামাজিক, চারিত্রিক আর ধর্মীয় সহ সর্বক্ষেত্রে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। ছিলে কাতর, ব্যতিগ্রস্থ। কিন্তু, তখনো আমার গহীনে প্রাণের স্পন্দন ছিলো! ভয়াবহ বিপদে ধৈর্যধারণের অসীম ক্ষমতা ছিলো।  আজন্মকাল থেকেই দৃঢ়পদের দীক্ষা ছিলো।

নির্জীব বস্তুর প্রতি ছিলো অনীহা! আর জীবন চলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছিলো অকৃত্রিম সারল্যের ছাপ।  এটা তো অনস্বীকার্য, এগুলো এমন মহৎ গুণ, যার মাধ্যমেই কেবল কোনো মহান কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব।

শুকরিয়া সেই রাব্বে কারিমের! যিনি অবশেষে তোমার প্রতি কৃপার দৃষ্টি দিলেন।  দেখলেন তোমার বুকে সেই সব সভ্যতার উৎকর্ষতা, যা তার ফায়দামান্দদের খুশি করে। কিন্তু তার তিনি দেখলেন ঐসব বড় বড় নগরীর প্রদীপ্ত ঝলমলে রওনক যেগুলো দর্শকমাত্রই বিমোহিত করে তুলে। যা তার স্রষ্টার রেজা হাসিল করতে সে অক্ষম।

তিনি প্রতিটি জাতিসত্ত্বার দিকে তাকালেন। কিন্তু রেসালাতের পবিত্র আমানত অর্পণের জন্য এমন এক গোষ্ঠীকে মনোনীত করলেন, যারা ছিলো অখ্যাত, জীবিকা নির্বাহে হেয়তর! কিন্তু আমানত রক্ষায় তারা ছিলো মহা শক্তিধর জাতি ।

হ্যাঁ, আমিই সেই গর্বিত আরব! মহান রব আমার কাছেই প্রেরণ করলেন শেষ নবীকে। আমার বুকের শ্রেষ্ঠ ভূমিতে জন্মগ্রহণ করলেন তিনি। আমার বুকেই যার শ্বাসপ্রশ্বাস! আমার চোখের সামনেই যার বেড়ে ওঠা।

হায় আফসোস! তখনো আমি তার মূল্য বুঝিনি। অনুভবও করিনি, তিনি কতটা কিমতি!! অথচ তিনিই ছিলেন গোটা জাহানের জন্য সতর্কবাহী দূত।

তার সাহচর্যে এমন কিছু মানবকে বাছাই করা হয়েছিলো, যারা ছিলেন বরাবরই বাতিলের সামনে আপোষহীন দৃঢ়পদ। সর্বাধিক পবিত্র অন্তর, সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী জ্ঞানতাপস! খুবই সামান্য কৃত্রিম আচরণকারী! সুদৃঢ় ঈমানের পরম আধার আর যুদ্ধের ময়দানে সরব পদচারণায় অপ্রতিরোধ্য অশ্বারোহী।

আহ! আমি যেনো তখন ভিন্ন এক জীবন পেলাম! পেলাম এক নয়াশক্তি, এক নবজাগরণ! যার মূলমন্ত্রই ছিলো আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান আর অবিচল আস্থা।

মজার ব্যাপার কি জানো! আমার বুক থেকে উৎসারিত সেই শক্তিই হঠাৎ তোমার দিকে ধেয়ে আসলো। যার সম্পর্কে তুমি ছিলে পুরো বেখবর। এ কারণে রক্তচক্ষু নিয়ে আক্রোশ ভরা বদনে তুমি আমার দিকে তাকালে।

ভাবলে, হয়তো স্বার্থের লোভে সাম্রাজ্যবাদীদের মত আমিও এক লোভীযোদ্ধা। যে কিনা তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছি, তোমার অঢেল ধনদৌলতের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়েছি আমার ক্ষুধিতদের ক্ষুধা নিবারণ জন্যে। গরিবদের অভাব মেটানোর জন্য।

সে কারণেই তো তুমি আমার অগ্রযাত্রা রোধ করার জন্য আমার সাথে লিয়াজু করার হীন মানসে অঢেল সম্পদ সাধলে! কিন্তু বিষয়টা ছিলো একদম আলাদা।

তা কি জানো? আমার তোমার বিত্তবৈভবের প্রতি কোনো উৎসাহ ছিলো না। আমিতো বের হয়েছিলাম তোমার কল্যাণকামনায়! তোমাকে পৌত্তলিকতা, আর অসভ্যতার জ্বলন্ত অঙ্গার থেকে বাঁচাতে।

কিন্তু তুমি আমায় ভুল বুঝলে। শুধু শুধু আমার পথ রোধ করে দাঁড়ালে। বৃথাই আমার সাথে পাঞ্জা লড়লে।

কিন্তু কি হলো!  আমার জাগতিক ও ঈমানী শক্তির উত্তাপে তুমি মোমের মত গলে গেলে। আমার সামনে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলে আর নিজেকে নির্মম ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলে।

একসময় যখন তুমি অবিরাম পরাজয়ের প্রথম ধাক্কাটা কিছুটা সামলে নিয়ে আমার দ্বারস্থ হলে, তখনোই তোমার বুঝে আসলো, কি ছিলো আমার পবিত্র তামান্না।

শুকরিয়া তোমাকে, কারণ সেদিন তুমি আমার বার্তা বুঝতে পেরেছিলে। অনুভব করতে পেরেছিলে যে এতেই রয়েছে দোজাহানের খাইরিয়্যাত। এখানেই রয়েছে সভ্যতার মূল শিকড় আর মানবতার উচ্চ শিখরে পবিত্র সিঁড়ি।

ফলে তোমার ভূখণ্ডগুলো আমাকে মেনে নিল। তোমার উদ্ধত জাতিরা আমার সামনে নতি স্বীকার করলো!

আমার এই নয়াশক্তি তোমার মধ্যকার উত্তম বস্তুগুলোকে বৈধ আর অনুত্তম গুলোকে অবৈধ ঘোষণা করলো!.

তোমার কাঁধ থেকে আনুগত্যের বেড়ি নামিয়ে তোমার বোঝা হালকা করলো, আর দীন, ধর্ম, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রেই তোমাকে যোগ্য নেতৃত্ব দিতে লাগলো।

কিন্তু জানো কি!

হঠাৎ এক আকস্মিক বিপর্যয় আমাকে গ্রাস করলো! যেটা শুধু আমার জন্যই নয়, গোটা পৃথিবীর জন্যই ছিলো মারাত্মক বিপর্যয়। আমি বেদুঈন বলে যেহেতু এই অঢেল ধন সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি আর বিত্তবৈভবের সাথে আমার কোন পূর্বপরিচয় ছিলো না। তাই এগুলো সামনে পেয়ে আমার জমে ওঠা দিল নড়বড় হয়ে গেলো।

পাহাড়সম সম্পদের ঝড়ো ঝাপ্টায় আমার হৃদয়ের জ্বলে ওঠা আগুন দপ করে নিভে গেলো। নতিজা কি হলো! আমার পদস্খলন ঘটলো। উদ্দীপ্ত জাগরণ স্থবির হয়ে গেলো! আর সেই ঈমান, অতলে হারিয়ে গেলো।

ফলে সাহাবাদের উদ্দেশে দেওয়া মহানবীর সেই বাণিরই বাস্তব প্রতিফলন ঘটলো আমার সত্ত্বায়- ‘হে আমার সাহাবারা! আমি তোমাদের উপর দারিদ্রতার ভয় করি না। আমার ভয় হয়, না জানি পূর্ববর্তীদের মত তোমদের সামনেও সম্পদের প্রাচুর্য চলে আসে। আর তা তোমাদের ধ্বংস করে দেয়’।

হায় আমার আফসোস! এই প্রাচুর্যের মোহে পরেই আমার অধিবাসী লোকগুলো কেমন জানি অন্যরকম হয়ে গেলো! গায়ে গতরে খোদার খাসি! পোশাক আশাকে কৌলিন্য, চেহারাসুরতে সুদর্শন। কিন্তু সবকটাই উত্তাপহীন, বেকারগ্রস্থ আর দুর্বলা চিত্তের অধিকারী।

আমাকেও তখন অলসতা আর নির্বুদ্ধিতা পেয়ে বসলো। জীবনযুদ্ধ থেকে আমি এমনভাবে ছিটকে পড়লাম, যেখান থেকে ‍উঠে আসা আমার জন্য সম্ভব ছিলো না। আমি আর কি করবো।

নিজেকে গুটিয়ে একাকিত্বের পথ ধরলাম। পতনের পথে!  আমার এই পতন ছিলো মানবতার পতন। গোটা বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ বার্তা। আর একটি জাতি কাণ্ডারিহীন হওয়ার অশনি সংকেত।

আর তুমি! সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তোমার জাতিতের আহবান করলে। তাই তোমার বুকেই জন্ম নিলো কিংবদন্তিতূল্য বড় বড় বিজ্ঞানী, দ্রুত কার্য্যক্ষম যন্ত্রের সফল আবিষ্কারক! তারা স্টিম বিদ্যুৎ, পানি বাতাসসহ খোদাপ্রদত্ত উপাদানরাজি কাজে লাগিয়ে তোমার বুকে জ্ঞান ও শাসনের ইতিহাস আর সাম্রাজ্য গড়লো। কিন্তু তারা আত্মিক আবেদন ঈমানের দাবির দিকে ফিরেও তাকালো না!

এ কারণেই, হাজারো উৎকর্ষতা সত্ত্বেও তোমার অগ্রযাত্রা ছিলো বাঁকা, জাগরণ ছিলো বিধ্বংসী।

ভাবছি, তোমাকে কিসের সাথে তুলনা করবো।  হ্যাঁ, তোমার উদাহরণ বৃক্ষের ন্যায়, যার শাখাপ্রশাখা অনেক লম্বা। কিন্তু বক্রতায় কুৎসিত, জরাজীর্ণ। অথবা তুমি ঐ মানব শিশুর মত, যে বেড়ে উঠেছে ভল্লুকের গুহায়। যে কারণে তার নখগুলো হয়েছে ধারালো, বাহু হয়েছে শক্তিধর কিন্তু চরিত্রটা হয়েছে হিংস্র, লুপ্ত বিবেকের অধিকারী।

বিশ্বাস করো হে পৃথিবী!  এগুলোই হলো সব কিছুর হেতু। কিন্তু আমার আফসোস! আমার কপালের গর্দিশ! এসব কিছুর দায়ভার তুমি কেবল আমার উপরই চাপিয়ে দিয়েছো। এগুলোই সেই উপলক্ষ, যার দরুন সংঘটিত হয়েছে আমার উদ্দেশ্যহীন পথচলা, জ্ঞনের অপব্যবহার, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নৈতিক অধঃপতন, অধুনা কলামিস্টদের অনিয়ন্ত্রিত কলমচালনা, বিশ্বেমোড়লদের ভুয়া আশ্বাসে বিভ্রান্তি আর অযোগ্য চিকিৎসকদের ব্যর্থ অস্ত্রপাচারে দুর্বল ও অস্থির আত্মা।

তুমি মানো আর না মানো, তোমার তথাকথিত সভ্যতা আর নবী রাসুলদের হেদায়াতের বাণী উপেক্ষা করার মানসিকতাই এতকিছুর অপরিহার্য ফলাফল। যে কিনা তার জীবনকে অদৃশ্য কেন্দ্রিক পরিচালনা করে, যার ভিত্তিই হলো কিছু জড়বস্তু আর লাগামহীন কামনাবাসনা।

যদি কেউ এর গোড়ার দিকে তাকাতো তাহলে শুরুতেই সে এমন কিছুর আঁচ করতে পারতো! তুমি কি দেখো না, বীজ দেখেই মানুষ উৎপাদিত ফসলের ধারণা পায়।

মজার ব্যাপার কি জানো হে পৃথিবী!

তোমার এই সরল স্বীকারোক্তি আজ আমায় প্রচণ্ডভাবে আনন্দিত করেছে। তুমি কেমন নির্দ্বিধায় স্বীকার করলে, এই ঈমানি দৌলত তোমার উন্নত কারখানাগুলো প্রস্তুত করতে একদম অক্ষম। বিশ্ববাজারেও যা হাজারো খুঁজলেও মিলবে না।

এগুলো কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই মহামানবই এনেছেন, যার অনুসরণ করতে তোমার বিজ্ঞানীরা আর কথিত মোড়লরা কুণ্ঠাবোধ করে।

হে প্রিয় ধরা! শোন!

তুমি লজ্জা পেও না তার অনুস্মরণ করতে। বরং এই ঈমানের দিকেই এগিয়ে আসো! যতটা কষ্টই হোক, মজবুত ভাবে আঁকড়ে ধর এর রজ্জুকে! মনে রেখো, এই ঈমান ছাড়া তুমি প্রাণহীন দেহ আর আলোহ্ন ঘর ছাড়া আর কিছুই নও!

মন দিয়ে শোনো!

আমার সামনে তোমার দ্রুত চলমান গাড়ি, অপ্রতুল ধনভাণ্ডার আর উন্নত যন্ত্রপাতি পেশ করো না! এগুলো আমি প্রয়োজনাতিত হাসিল করেছি। আমিতো আরো অভিযোগ করছি, যে তোমার এই দ্রুত চলমান গাড়ি আমার স্বাধীন ঘোড়াকে শেষ করে দিয়েছে। যেই উন্নত ঘোড়াগুলো সততা, দ্রুততা আর উত্তপ্ত রণাঙ্গনে খুবই পারঙ্গম বলে বিবেচিত ছিলো।

তোমার ঐশ্বর্য আমাকে অলসতায় ডুবিয়ে দিয়েছে! আমাকে দুর্বলা করেছে। আমার শক্তি খর্ব করে দিয়েছে! চির কর্মঠ হাতগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে! তাই বলি কি, তুমি আমার থেকে তোমার কথিত সভ্যতার অকার্যকর দিক গুলো ফিরিয়ে নাও! যাতে আমি আমার হাড়ানো শৌর্যবীর্য আর বেনজীর চরিত্র মাধুরী কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারি।

হে বিশ্ব! লাজ শরম ভেঙে মুহাম্মদের আনিত শাশ্বত কিতাবের দিকে এগিয়ে আসো! তোমার যাবতীয় সমস্যার সমাধান এখানেই খোঁজো! মনে করো, এ কিতাব যেনো শুধু তোমাকে পথ দেখাতেই নাজিল হয়েছে। তাহলেই দেখবে। কিভাবে একের পর এক প্যাঁচ ক্রমান্বয়ে খুলতে থাকে। বেকারগ্রস্ত করে রাখা ঘোরগুলো কাটতে থাকে।

দেখো, ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে, সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক কিবা অর্থনৈতিক সকল সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান নিহিত রয়েছে এতেই। এ কিতাব তোমাকে এমন কিছু মূলনীতি উপহার দিবে যার অনুস্মরণ উভয় জাহানের সফলতা বয়ে আনবে।

প্রিয় বিশ্ব! বস্তুবাদ তোমার উপর চড়াও হওয়ার পর তুমি অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে আমার কাছে এসেছো আমার বুকে ধারণকৃত ঈমানী দৌলত নিতে?

যাও! আমি তোমায় আমি নিরাশ করলাম না। তোমার যাচনা আমি পূরণ করলাম। তোমার আবদার আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম।  এই স্বচ্ছ সুপেয় ঝর্ণাধারা হতে তুমি যত পারো অঞ্জলি ভরে পান করো। মেটাও তোমার হৃদয়ের তৃষ্ণা। পরিতৃপ্ত করো তোমার পিপাসু আত্মাকে। যেই নির্ঝরণীর উৎস হলো ওহিয়ে এলাহি, দীনে মুহাম্মদি।

তবে শোন! এতকিছুর বিনিময়ে আমি শুধু তোমার কাছে একটা জিনিসই চাইবো। তুমি এসব দিয়ে এমন কিছু বিদগ্ধ জ্ঞানী, ধার্মিক মানুষ তৈরি করো যারা এই রোগা, নিরাত্মা, অন্ধকারাচ্ছন্ন নিরুত্তাপ পৃথিবীকে পথ দেখাবে ।

আর তারাই হবে মানবতার বার্তাবাহক! আল্লাহর ওয়াস্তে আমায় নিরাশ করোনা!

অনুবাদ : মঈনুদ্দীন তাওহীদ, আব্দুল্লাহ জুবায়ের

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ