বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


হে নারী! একটু ভাবুন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপাল জামিয়া ওসমান ইবনে আফফান রা.

পরশু নারী দিবস পালিত হলো। নারীদের জন্য আলাদা দিবসও আছে। হ্যা,তাদের জন্য তো বাসেও আলাদা সিট আছে। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৬/৯ সিট বরাদ্দ থাকে। এ সিটগুলোতে সাধারনত কোনো সচেতন ব্যাক্তি বসেন না।

বাসের বাকি সিটগুলোতে তারা বসতে পারবে না তা কিন্তু নয়। তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সিটগুলো ব্যাতীত বাকি সবগুলো সিটে সবার জন্য সমান অধিকার চলে। নারী পুরুষ সকলে বসতে পারবে।

সমাজে নারীদের আলাদা মূল্যায়নও আছে। নারী ছাড়া একটা সমাজ চলতে পারে না। একজন পুরুষ চলতে পারে না। একজন পুরুষ সৃজনশীল কাজ করতে পারে না। এ সমাজ সৌন্দর্যের মুলে রয়েছে নারী।

নারী তুমি কে? তুমি আমার মা। তুমি আমার বোন। তুমি আমার কন্যা। তুমি আমার জীবন সঙ্গিনী। তোমাকে ছাড়া সমাজ অচল। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা। তুমিই আমার পথচলার প্রেরণা। তুমিই আমার এগিয়ে যাওয়ার উৎস।

নারী তোমার ধৈর্য্যশক্তি দেখলে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। তুমিই পারো ডাটা থেকে আঁশ বেছে উপযুক্ত করে তরকারি রান্না করতে। তুমিই পারো আগুনের তাপে দাড়িয়ে আমার জন্য রুচিশীল খাবার প্রস্তুত করতে।

তুমিই পারো আমার অগ্নিমূর্তি মুহুর্তকে পানি করতে। তোমাকে স্রষ্ট্রা এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তুমি স্রষ্ট্রার সৃষ্টির মধ্যে বড়ই আশ্চর্যময় একটি সৃষ্টি। তাই তো স্রষ্টা তোমাকে কত সম্মানিত করেছেন।

তোমাকে মায়ের আসনে সমাসীন করেছেন। তোমাকে সন্তানের শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠানের ভূমিকায় রেখেছেন। স্রষ্টা তোমার জন্য কত চমৎকার করে কর্ম বন্টন করে দিয়েছেন।

নরকে বের করে দিয়ে তোমাকে ভেতরে রেখেছেন। তোমার হাতে জগৎ সংসার সাজানোর দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। শিশু পালনের মত গুরু দায়িত্বও তোমার কাঁদে দিয়ে রেখেছেন।

উত্তরাধিকার ক্ষেত্রেও তোমাকে বহুমুখী সম্পদ দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তোমাকে স্বামীর সম্পদ দিয়েছেন। তোমাকে পিতা মাতার সম্পদ দিয়েছেন। তোমাকে সন্তানের সম্পদ দিয়েছেন।

তোমাকে তোমার ভরণ-পোষণ থেকেও মুক্ত রেখেছেন। তোমাকে তোমার সন্তানের ভরণ-পোষণ থেকেও দায়মুক্তি দিয়েছেন।

হে নারী! ইসলাম তোমাকে আরো কত কিছু দিয়েছে। তোমাকে সম্মান দিয়েছে। তোমাকে মর্যাদা দিয়েছে। তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। তোমাকে মালির আসন থেকে রানীর আসনে বসিয়েছে। তোমার যথাযথ প্রাপ্য আদায়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

একটা সময় পৃথিবীর অনেক ধর্মই তোমাকে মানুষ মনে করত না। তোমাকে অকল্যাণের প্রতীক মনে করত। তোমাকে ভোগ্যপন্য মনে করত। তোমাকে ভোগ বিলাসের বস্তু মনে করত।

নিজেদের ফায়দা হাসিলের পরে ডাস্টবিন এ ময়লার মত ছুরে ফেলে দিত। ঐ সময়টায় তুমি ছিলা বাজারি পন্যের মত। কিন্তু দুঃখ আর পরিতাপের সাথে স্বরণ করতে হচ্ছে, তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদেরই কিছু মা বোন বিপথগামী হয়ে পথহারা পথিকের মত উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এরা নিজেদের ভুলে গেছে। নিজেদের মান মর্যাদার কথা ভুলে গেছে। এরা একবিংশের এ শতাব্দীতে তোমাদের নতুন মোড়কে আবার বাজারি পন্য করার পায়তারা করে বেড়াচ্ছে।

তোমাদের রানীর আসন থেকে টেনে হিছড়ে মালির আসনে নামিয়ে দিচ্ছে। আকাশ থেকে পাতালে নামিয়ে দিচ্ছে। তোমাদের আবার ১৫ শত বছর আগে নিয়ে নিতে চাচ্ছে। এরা শৃগালের ভূমিকা নিয়ে তোমাদের মোরগের আসনে বসিয়ে তোমাদের স্বাধীনতার ডাক দিচ্ছে।

তোমাদের স্বাধীনতার কথা শুনাচ্ছে। তোমাদের ক্ষমতায়নের কথা শুনাচ্ছে। তোমাদের সমান অধিকারের কথা শুনাচ্ছে। আরো কতকিছু তোমাদের শুনাবে বা তোমরা শুনবে এর হিসাব নেই।

এ জন্য এরা তোমাদের জন্য বাসে, ঘাটে, হাটে, বাজারে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সংসদে তোমাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তোমাদের জন্য আলাদা দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

কিন্তু সংরক্ষিতগুলো তোমাদের জন্য সম্মান না অসম্মান? এ সংরক্ষিতগুলো তোমাদের জন্য আত্নমর্যাদার বাহক না কি হিনমান্যতার বাহক? নারী! কোথায় তোমাদের সম্মান? কোথায় তোমাদের ইজ্জত? কোথায় তোমাদের মর্যাদা? কোথায় তোমাদের আত্নমর্যাদা?

ঘরে না বাইরে? পর্দায় না বেপর্দায়? স্বামীতে না পরকিয়ায়? সন্তানে না বাঞ্জায়? চন্দ্রে না সূর্য্যে? ছায়ায় না রোদ্রে? নারী! এভাবে তোমাদের অনেক প্রশ্ন করা যাবে। আদৌ জবাব দিতে পারবে কি না ভেবে দেখো।

সবশেষে বলি, বছরের ৩৬৫ দিনই তোমাদের জন্য। তোমাদের ছারা একটা দিনও অতিবাহিত হওয়ার সম্ভব নয়। সবসময়ই তোমাদের নিরাপত্তা কামনা করি। এ কামনা নির্ধারিত কোনো দিনকে কেন্দ্র করে নয়। নির্ধারিত সময়কে কেন্দ্র করে নয়।

সুখে থাকো। শান্তিতে থাকো। নিরাপদে থাকো।ভালো থেকো। সবসময় সব নারীদের প্রতি শুভ কামনা রইল।

ফিলিস্তিনে হাজারও নারীর বিক্ষোভ


সম্পর্কিত খবর