আতাউর রহমান খসরু
প্রধান প্রতিবেদক
মিসরের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি’র মেয়ে উলা ও তার স্বামী হোসাম দীর্ঘ ৮ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে বন্দী আছেন। মূলত ভূ-রাজনীতির অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে ২৪০ দিনের বেশি জেলে কাটিয়েছেন তারা।
৩০ জুন ২০১৭ সাল থেকে কারাগারে বন্দী আছেন উলা কারজাভি ও তার স্বামী। কারাগারে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তার আইনজীবীর ভাষ্যমতে উলাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে সূর্যালোক পৌঁছে না। সেখানে নেই পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, মানুষের সঙ্গে বা মানবীয় যোগাযোগের কোনো সুযোগ।
উলা কারজাভির একমাত্র অপরাধ সে ইউসুফ আল কারজাভির কন্যা। যিনি মিসর ও সৌদি আরবের শত্রু রাষ্ট্র কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন। সৌদি আরব ও তার মিত্ররা মুসলিম ব্রাদারহুটের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে আল্লামা কারজাভিকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকাভূক্ত করেছে।
আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি মিসরের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও কায়রো সামরিক শাসকদের সমালোচনাকারী।
গত বছর জুনে কোনো এক ছুটি দিনে ওলা ও তার স্বামীকে উত্তর মিসর তুলে নিয়ে যায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এবং কোনো প্রকার অভিযোগ ব্যতীত তাদের এখন পর্যন্ত আটক রাখা হয়েছে।
উলা ও হোসাম উভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তাদের ৩ সন্তান সেখানেই বাস করে।
তাদের মেয়ে আয়াহ হোসাম বলেন, ‘আমরা বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষা করছি। তাদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাদের পরিবারে ধ্বংস ডেকে আনছে।’
সে তার পরিবারের দুর্বিষহ অবস্থা ফুটিয়ে তুলে বলেছে, বিষয়টি আমার সন্তানদের জন্যও কষ্টকর হচ্ছে। তারা তাদের নানা-নানুকে খুঁজছে। তাদের জন্য বিষয়টি সহ্য করা কঠিন।
আয়াহ আরও প্রশ্ন করেন, কেনো আমার মাকে দুই রাষ্ট্রের সংঘাত বা আমার নানা ও তাদের মধ্যকার বিরোধের অংশ করা হবে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, উলা ও হোসামকে আটক করার পর থেকে নিয়মিত তাদের আটকাদেশ দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। প্রথমে ১৫দিন এরপর ৪৫ দিন বাড়ানো হয়। এভাবে পার হয়েছে ২৪০টি দিন।
আয়াহ হোসামের বক্তব্য অনুসারে মূলত তাদের আটক রাখার জন্য আটক রাখা হয়েছে কোনো তদন্ত বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নয়।
আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভির সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। আর সেই সম্পদের অন্তর্ভূক্ত বাড়িতে অবস্থানের অভিযোগে ওলা ও তার স্বামীকে প্রথমে আটক করা হয়। কিন্তু আয়াহ হোসামের দাবি বাড়িটি তার মৃত নানির সম্পদ। ইউসুফ আল কারজাভির নয়।
আয়াহ হোসাম অভিযোগ করে বলেন, ৫৬ বছর বয়সী উলা কারজাভিকে কারাগারে নানান উপায়ে অত্যাচার করা হচ্ছে। তাকে সম্পূর্ণ নির্জন ও জানালাহীন একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাকে দিনে শুধু একবার প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সুযোগ দেয়া হয়।
তাদের মুসলিম ব্রাদারহুটের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয় নি।
উলার স্বামী হোসাম খালাফ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও উলা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। সর্বশেষ বার গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেও খালাফ আল ওয়াসাত পার্টির সদস্য হিসেবে দুই বছর কারাভোগ করেন। তবে তিনি কখনো ব্রাদারহুটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
ভূ-রাজনীতির শিকার হয়েই এ পরিবারটি মিসরের কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ৬ জুন সৌদি, মিসর, বাহরাইন ও আরব আমিরাত কাতারের বিরুদ্ধে বয়কট ঘোষণা করে। এর ঠিক ৩ দিন পর আল্লামা ইউসুফ কারজাভির উল্লেখসহ সন্ত্রাসীদের নামের তালিক প্রকাশ করে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আমার ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে এবং আল জাজিরাকে ব্যবহার করে আরব বসন্তের পক্ষে কাজ করেছেন। এ মাসের শেষদিকে গ্রেফতার হন উলা ও তার স্বামী হোসাম খালাফ।
আল্লামা কারজাভি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো ব্রাদারহুটের সদস্য ছিলেন না। তবে তাকে বলা হয় ব্রাদারহুটের আধ্যাত্মিক গুরু। ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আল জাজিরায় প্রচারিত ‘ধর্ম ও জীবন’ অনুষ্ঠানে তিনি ব্রাদারহুটের প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করার সমালোচনা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয় সামরিক শাসক সিসি।
সিসির অনুরোধ রাখতে সৌদি আরবের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারজাভির বই পাঠ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছে।
গত জানুয়ারিতে মিসরের আদালত ‘হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ’ প্রদানের অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: কেমন আছে পূর্ব গৌতার নারীরা! কী তাদের আহবান!