সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কবি নজরুল কলেজ এক সময় মাদরাসা ছিল!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মেহেদী হাসান: বর্তমানে পুরান ঢাকায় অবস্থিত কবি নজরুল সরকারি কলেজ একসময় ছিল একটি মাদরাসা।

একটি পরিপূর্ণ মাদরাসা কালের পরিক্রমায় কিভাবে তার ধর্মীয় পরিচয় সম্পূর্ণ হারিয়ে সাধারণ শিক্ষার একটি কলেজে পরিণত হতে পারে তার সাক্ষ্য বহন করছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু ধর্মীয় পরিচয়ই নয়, মুছে গেছে প্রতিষ্ঠানটির আসল নামও।

দানবীর হিসেবে খ্যাত হাজী মুহম্মদ মুহসীনের রেখে যাওয়া অর্থে ১৮৭৪ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মোহসীনিয়া মাদরাসা। খুব অল্প সময়ে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে এ মাদরাসার খ্যাতি।

১৭৮০ সালে কলিকাতায় প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদরাসার সাথে তুলনা করা হতো ঢাকার এই মোহসীনিয়া মাদরাসাকে। সে কারণে মাদরাসাটি পরিচিতি পায় ঢাকা মাদরাসা নামে এবং এ নামেই বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করে।

কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরবর্তীকালে মাদরাসাটি দুর্ভাগ্যের শিকার হয়। ১৯১৫ সাল পর্যন্ত মাদরাসাটি হাজী মুহম্মদ মুহসীনের রেখে যাওয়া অর্থে পরিচালিত হতো।

অনেকের মতে, ১৯১৪-১৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার নিউ স্কিম মাদরাসা চালু করার কারণে এ মাদরাসাসহ আরো অনেক মাদরাসা শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের কারণে এসব মাদরাসা তাদের ধর্মীয় চরিত্র অনেকটা হারিয়ে ফেলে।

ফলে মুখ ফিরিয়ে নেয় ধর্মীয় শিক্ষায় আগ্রহী ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ। নিউ স্কিম মাদরাসা চালুর পর মোহসীনিয়া বা ঢাকা মাদরাসাটিকে এর আওতায় নেয়া হয় এবং ১৯১৫ সালে এর নাম রাখা হয় ঢাকা হাই মাদরাসা।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী পরের বছর ১৯১৬ সালে মাদরাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগ আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করা হয় গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল। এরপর ১৯২৩ সালে মোহসীনিয়া মাদরাসাকে রূপান্তর করা হয় ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র মসজিদ যার দেখাশুনা দায়িত্বে শিখ সম্প্রদায়

এভাবে মাত্র ৪৯ বছরের মাথায় মোহসীনিয়া মাদরাসাটি হয়ে গেল একটি কলেজ। ১৯৬৮ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ।

১৯৭২ সালে আবার প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ করা হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজ। একটি প্রতিষ্ঠান কী উদ্দেশে চালু হয়েছিল এবং কিভাবে তার আসল নাম পরিচয় মুছে যেতে পারে তার সাক্ষী হিসেবেই যেন আজো ভিন্ন নামে দাঁড়িয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।

১৯২৩ সালে মোহসীনিয়া মাদরাসা বিলুপ্ত করে সেখানে কলেজ শিক্ষা চালু করলেও ১৯৪৭ সালে এখানে আবার মাদরাসা শিক্ষা চালু হয়। তবে তা মোহসীনিয়া মাদরাসা পুনরায় চালুর মাধ্যমে নয়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় ঢাকা আলিয়া মাদরাসা নামে। আজকের ঢাকা আলিয়া মাদরাসার কার্যক্রম চালু করা হয় মোহসীনিয়া মাদরাসার ভবনে।

দীর্ঘ দিন এখানে থাকার পর ১৯৬১ সালে বর্তমান বকশিবাজার ভবনে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা আলিয়া মাদরাসার কার্যক্রম।

মোহসীনিয়া মাদরাসার আজকের পরিণতি বরণ করেছে বাংলাদেশের আরো অনেক নামকরা মাদরাসা। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাজশাহী সরকারি মাদরাসা এবং চট্টগ্রামের আজকের মহসীন কলেজ। এ মাদরাসা দুটিও হাজী মুহম্মদ মুহসীনের অর্থে ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

চট্টগ্রামের মহসিন কলেজও ছিল একটি মাদরাসা

হাজী মুহম্মদ মুহসীন ফান্ডের অর্থে ১৮৭৪ সালে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় চট্টগ্রাম মাদরাসা। ঢাকার মোহসীনিয়া মাদরাসার মতো এ মাদরাসাটিও নিউ স্কিম মাদরাসার অধীনে নেয়া হয় এবং ১৯১৮ সালে এর নাম হয় নিউস্কিম মাদরাসা। ফল দাঁড়ায় একই।

এর পর থেকে মাদারাসা হারাতে থাকে তার ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য ও পরিচয়। ১৯২৭ সালে মাদরাসা বিলুপ্ত করে একে পরিণত করা হয় ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। ১৯৭৯ সালের ২০ জুলাই এর নামকরণ করা হয় মহসিন কলেজ।

আরো করুণ রাজশাহী মাদরাসার পরিণতি

ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো রাজশাহীতেও ১৮৭৪ সালে হাজী মুহম্মদ মুহসীনের রেখে যাওয়া অর্থে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি মাদরাসা। যত দূর জানা যায় প্রথমে এর নাম ছিল দরসে নিজামিয়া সিনিয়র মাদরাসা।

১৯৩০ সালে এর নামকরণ করা হয় ‘রাজশাহী সরকারি মাদরাসা’। ১৯৬০ সালে মাদরাসটিকে রূপান্তর করা হয় একটি হাইস্কুলে। তবে মজার বিষয় হলো, মাদরাসটিকে একটি হাইস্কুলে পরিণত করা হলেও আজো এর নাম রাজশাহী সরকারি মাদরাসাই রয়ে গেছে।

অনেকে তাদের সন্তানদের মাদরাসায় পড়ানোর জন্য এসে জানতে পারেন এটি একটি স্কুল। ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর রাজশাহী জেলা প্রশাসন, শিক্ষা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মিলে এর নামকরণ করেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

পরবর্তীকালে একে একটি সিটি ইউনির্ভাসিটি করারও সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়।

সূত্র: এডুকেশন বাংলা

আরও পড়ুন: মুহাম্মদ সা. এর অবমাননা করে ছবি নির্মাতার ইসলাম গ্রহণ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ