শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘কিছু আলেম মাহফিলকে যুদ্ধক্ষেত্র মনে করে, এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: মার্চ মাসের ২তারিখ শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল হক জামে মসজিদ ঢালকা নগর ঢাকার বয়ানে শায়খুল হাদিম মাওলানা আবদুল মতিন বিন হুসাইন বলেন, হযরত শাহ আবরারুল হক রহ. দুনিয়ার যেখানেই গিয়েছেন কাফের মুশরিকরা পর্যন্ত হযরতকে সম্মান-শ্রদ্ধা করতো।

হযরত যখন হারদুয়ীর দিকে যেতেন রাস্তায় হিন্দুরা দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করতো, আদাব জানাতো।

কোনো হিন্দু আবার হযরতকে দেখলে দূর থেকে সিজদায় পড়ে যেতো। হযরত জোরে বলতেন ‘মাখলুখ কু সিজদা কর না মামনু হে’ কোনো সৃষ্টিজীবকে সেজদা করা নিষেধ। তিনি এটা বলেই চলে যেতেন।

সেখানে ঝগড়া বাধিয়ে দিতেন না। তাই বলি দীনের কাজ করতে সমজ বা বুঝ জরুরি। দীনের কাজ করতে গিয়ে যদি সমজ বা বুঝ না থাকে তাহলে সে অবশ্যই ঝগড়া বা প্যাচ লাগিয়ে দিবে।

দুনিয়াতে এমন কোনো দেশ নাই যেখানে সব একই চিন্তা ধারার মুসলমান আছে। এমন কোনো দেশ নাই। সব দেশেই বহু ধরনের মুসলমান আছে। তাদের মতপথে ভিন্নতা আছে।

আপনি জর্ডান বলেন- মিশর, আফগানিস্তান, ভারত, ব্রুনাই এসব দেশে কত ধরনের মুসলামান আছে। তাই আমাদের কী উচিৎ আমার মতের সাথে না মিললেই বাস তাকে হত্যা কর সে বাতিল এটা সেটা। এগুলো তো ঠিক না। তাই দীনের সমজ বা বুঝ অত্যান্ত জরুরি।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান কর হেকমতের সাথে সুন্দর উপদেশ দ্বারা ডাকতে হবে।’ আর যারা কাফের তাদের ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে আল্লাহ বলেছেন, আগে তাদের সাথে এমন আচরণ কর যাতে তাদের সাথে তোমাদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আর তোমরা তাদের উত্তম অাদর্শের মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্যের মাধ্যমে দাওয়াত দিবে।

বিরুদ্ধাবাদিদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে ক্ষেপিয়ে তোলা, গরম বক্তৃতা করা ঠিক না। বরং তাদেরকে নরম ও ভালোবাসার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে হবে। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি রহ. বলেন ‘আওয়াম কো মুশতায়েল নাহ কর না চাহিয়ে’ সাধারণ মানুষকে দীনের কথা বলতে গিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা ঠিক না।

বর্তমান আমাদের দীন প্রচারকগণ দীনের প্রচার আর ওয়াজের ময়দানকে যুদ্ধের ময়দানের সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধের মত অশ্র দিয়ে জবাব দেয়া আর দীনের প্রচার করার জায়গায় এক শ্রেণির মৌলভী সাহেবরা জিহাদের ময়দান মনে করে। এই জন্যই আমাদের দেশে এ ধরনের সমস্যা হয়।

তারা হক্কানী আলেমদের কাছে পড়ে না। নিজেরাই আরবি পড়ে সেই অনুযায়ী তরজমা করে নিজেরাও গোমরাহ হয় আর সাধারণ মানুষদেরও গোমরাহ করে।

শক্তি প্রয়োগ করা কোনো বিচারকের অধিকার নাই। কিন্তু বর্তমান সমাজে এক শ্রেণির অল্প বিদ্যার মৌলবী তারা এ সব বিষয়কে গোলমাল করে দীনের প্রচার আর ওয়াজ নসিহতকে জিহাদ মনে করছে। সে মনে করে সেটা তারই দায়িত্ব। দাওরা পাস, দাখেল পাস কিন্তু ওয়াজের ময়দানে আসলে মনে করে তিনিই একমাত্র সব কিছু জাননে ওয়ালা।

মিয়া তুমি কী আবু হানীফা হয়ে গেছ? ইমাম মালেক রহ. হয়ে গেছ? অল্প একটু ইলম না হতেই তাদের ভাব সাবে টিকা যায় না। অথচ আমাদের শিক্ষক আল্লামা আজীজুল হক রহ. এমন দরস দিতেন পাগল হয়ে যেতে হতো।

শামসুল হব ফরিদপুরী রহ. বলেন, আমার জানা নাই তার মত বুখারী পড়নেওয়ালা বাংলাদেশে আর আছে কীনা।

ফতোয়া দেয়ার মসনদে নিজেকে কখনোই মনে করতেন না। তিনি ফতোয়া দিতেন না। যাই হোক যারা মঞ্চে বসে তারা নিজেদের সবচেয়ে বড় মনে করে তারা ভুল করে। কোনো জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটলে এটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া এটাও ভুল তরিকা। আবার নিজের আবেগকে জজবাকে ইসলাম মনে করে জনমানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়াও ঠিক না।

এতে মুসলমানরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভ্রান্ত হয়। এর থেকে বাচতে হলে আকাবিরদের পড়তে হবে। আকাবিরদের অনুসরণ করতে হবে। কোনো বিষয় কথা বলতে হলে শালীনতা বজায় রেখে বলতে হবে। উগ্রভাবে বললে তো হবে না।

ইবলিস আল্লাহকে বলেছিলো, হে আল্লাহ আপনার ইজ্জতের কসম আপনার একজন বান্দার দেহে প্রাণ থাকবে আমি তাকে জাহান্নামে নেয়ার জন্য চেষ্টা করবো। ইবলিস সবার কাছে যায় ঝামেলা করে। সাহাবায়ে কেরামও বড় বড় আওলিয়ায়ে কেরামকেও ছাড়েনি ইবলিশ।

ইবলিশ এক রাতে মুয়াবিয়া রা. কে ডেকে বলল, ওঠেন তাহাজ্জুদ পড়েন। মুয়াবিয়া রা. বললেন কাহিনী কী খুলে বল, তুই আমাকে তাহাজ্জুদ পড়তে বলছিস। সে বলল কাল তাহাজ্জুদ না পড়ার কারণে আপনার মনে যে ব্যথা ছিলো আপনার মর্তবা বেড়ে গেছে তাই আমি ভাবলাম আগের জায়গায় থাকুন আপনারে জাগিয়ে দেই।

ইবলিশ চায় সবাইকে গোমরাহ করতে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া লাগিয়ে দেয় এ ইবলিশ। ইবলিশ কাউকে ছাড়েনি। রাসুল সা. নামাজ পড়তে গেছেন আগুন নিয়ে ইবলিশ খেলা করে যাতে রাসুলের নামাজে কষ্ট হয়।

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো বুঝার তাউফিক দান করুন।

অডিও থেকে বয়ানটি লিখেছেন আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ