শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
শিক্ষক ও বাবুর্চি নিয়োগ দেবে রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ.মাদরাসা উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে কি ইসলামি দলগুলো? পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে স্মার্ট জেনারেশন সৃষ্টি সম্ভব নয়: শিক্ষামন্ত্রী বিচ্ছিন্নভাবে দে‌শের স্বার্থ অর্জন করার সুযোগ নেই : সেনা প্রধান স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাশ করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী যাত্রাবাড়ীতে দুই বাসের মাঝে পড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত আ.লীগের মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা; অমান্য করলে ব্যবস্থা ফকিহুল মিল্লাত রহ. এর পরামর্শ -‘ফারেগিন কার সঙ্গে পরামর্শ করবে’ ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়া নিয়ে ভোট শুক্রবার

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার ২৫ দিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম

নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার, রোববার দুপুর ১২টা। ২৫ শিক্ষকের অপেক্ষা, যাদের ২২ জনই নারী। তারা সবাই এসেছেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে।

কিন্তু, বরাবরের মতই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী এসব শিক্ষকেরা হতাশ হয়ে ফিরে গেলেন, তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে। এভাবে প্রত্যেক দিনই কেউ না কেউ দেখা করতে এসে হতাশ মনে ফিরে যাচ্ছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন। এরপর তাকে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। ইতোমধ্যে নির্জন কারাগারের একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়া ২৫ দিন অতিবাহিত করেছেন।

শুরুতে খালেদা জিয়া ডিভিশন না পেলেও পরে আদালতের নির্দেশে ডিভিশন কার্যকর করা হয়। আবেদনের পর ব্যক্তিগত গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকেও সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে কারা কর্তৃপক্ষ।

বিগত ২৫ দিনে শুধুমাত্র স্বজনেরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বার কয়েক দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে দু’বার সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন আইনজীবীরা।

তবে প্রতিদিনই বিএনপি বা খালেদা জিয়ার অনুসারিদের মধ্যে কেউ না কেউ কারাগারে দেখা করতে আসছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তারা ফিরে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ফিরে যান। দুপুর ১২টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা কারা ফটকে অপেক্ষা করেন ২৫ শিক্ষক।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তাজমেরি এস ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি। পরে দেখা না করেই ফিরে এসেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে ২২ নারীসহ ২৫ জন শিক্ষক কারাগারে যাই। সাক্ষাতের জন্য আবেদন জমা দেই। এআইজি মামুন আবেদন গ্রহণ করেন। সে সময় জানানো হয়, আইজি প্রিজন্সের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানানো হবে। কিন্তু, তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কিছু না জানানোয় আমরা চলে এসেছি।’

জানা গেছে, আত্মীয়-স্বজনের বাইরে এখন পর্যন্ত কাউকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিচ্ছে না কারা কর্তৃপক্ষ।

৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নেয়ার পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা কারার সুযোগ পান তার স্বজনেরা। ওইদিন তার মেজ বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা ও তাদের ছেলে ফায়েক ইস্কান্দার দেখা করেন।

এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আবদুর রেজ্জাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব হোসেন।

পরে তারা কারাফটকে সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আইনি ও দলীয় বিষয়ে আলোচনা করেছেন তারা।

আদালতের নির্দেশ ১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়। ওদিনই তার সঙ্গে গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগমকেও রাখার নির্দেশনা দেন আদালত।

এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি ওকালতনামাসহ কিছু কাগজপত্রে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর আনতে কারাগারে যান তার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়াসহ কয়েকজন। কিন্তু, তারা দেখা করতে পারেননি। ফলে কাগজপত্রগুলো কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়ে ফিরে আসেন তারা।

১৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার অনুমতি চাইতে কারাফটকে যান বিএনপিপন্থী সাত চিকিৎসক। কিন্তু, তারাও অনুমতি না পেয়ে ফিরে আসেন।

১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর শাশুড়ি মোখলেমা রেজা, খালেদার ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, শাহরিয়ার আখতার ও ভাতিজা মো. আল মামুন।

১৯ ফেব্রুযারি সোমবার বিকেলে রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিচারক রায়ের কপি সত্যায়ন করার পর এটি খালেদার আইনজীবীদের হাতে তুলে দেন বিশেষ জজ আদালত-৫ এর পেশকার মোকাররম হোসেন।

পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিতে দ্বিতীয় দফায় সুপ্রিম কোর্ট বারের কনফারেন্স রুমে বৈঠক করেন তার আইনজীবীরা।

২২ ফেব্রুযারি খালেদা জিয়ার সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল গ্রহণ করে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে করা অর্থদণ্ড স্থগিতের আদেশ দেন।

একই সঙ্গে এ মামলায় বিচারিক আদালতের সকল নথি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর জামিন আবেদন শুনানির জন্য নতুন দিন ঠিক করে দেন আদালত।

২১ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ভাগ্নি অনন্যা ইস্কাদার, রাইজা ইসলাম, নাতনি শাহিনা জামান ও ভাগ্নে মো. মামুন দেখা করেন।

২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার জন্য মাছ, মুরগি, মিনারেল ওয়াটারসহ হরেক রকম ফল নিয়ে যান। কিন্তু, অপেক্ষা করে তাদের শূন্য হৃদয়ে ফিরে আসতে হয়।

খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের ওপর ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানি হয়। নিম্ন আদালতের নথি আসার পরে এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে খালেদা জিয়ার জামিনের অপেক্ষা দীর্ঘ হয়। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেয়া ১৫ দিনের মধ্যে নিম্ন আদালত থেকে নথি পাঠানোর নির্দেশ থাকলেও বিগত ১০ দিনেও তা পৌঁছেনি।

এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, নিম্ন আদালত নথি পাঠাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তারা এখন সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ