রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) ছিলেন একাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলেম আবু হামিদ আল গাজালি রহ.। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান ইরানের তুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। যিনি আজ পরিচিত “حجة الإسلام” (হুজ্জাতুল ইসলাম– ইসলামের সাক্ষ্য) নামে।
মহান এই মনীষীর ছোটকাল থেকেই জ্ঞান সাধনার প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও আগ্রহ আজ তাকে বিশ্ব দরবারে যুগ শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। জ্ঞান চর্চাই ছিল যার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
শিক্ষা জীবনের শুরু
আবু হামিদ আল গাজালি রহ. ফার্সিভাষী পরিবারের উত্তরসুরি হয়েও আরবি ভাষায় ছিলেন সাবলীল এবং অন্যান্য মুসলিম মনীষীর মতো আরবি ভাষাতেই লেখালেখি করেছেন।
ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও ইসলামি আইনে তিনি অল্প বয়সেই ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। শাফেয়ি মাজহাবের প্রখ্যাত আলেম আল জুয়াইনি ছিলেন তার অন্যতম শিক্ষক।
তুস শহরে তার উস্তাদ ছিলেন ইমাম রাদাখানি এবং পরে চলে যান জুরান শহরে সেখানে উস্তাদ ছিলেন হযরত ইমাম আবু নসর ইসমাইল রহ.। তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনি, আল্লামা আবু হামিদ আসকারায়েনি, আল্লামা আবু মুহম্মদ জুবায়নি প্রমুখ মহাজ্ঞানী উস্তাদের কাছে তিনি শিক্ষা লাভ করেন।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের মতবাদও তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করেন নিজেকে সে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
বিজ্ঞান চর্চায় গাজালি
প্রাচ্যবিদরা (Orientalist) ঢালাওভাবে অভিযোগ করেন যে ইমাম গাজালির দর্শন ও যুক্তি ইসলামের বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে ।
তাদের এহেন অভিযোগের ভিত্তি হলো তিনি ইবনে সিনা ও আল ফারাবির মতো বিজ্ঞানীদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করেছিলেন, যারা ছিলেন তৎকালীন বিশ্বে বিজ্ঞানচর্চার অগ্রদূত। মূলত বাস্তবতা ছিল অবশ্যই ভিন্ন।
ইমাম গাজালি তৎকালীন বিজ্ঞানীদের দর্শনগত ধারণার সাথে মতানৈক্য পোষণ করেন, যারা ছিলেন গণিত ও বিজ্ঞানের বিখ্যাত সব গ্রন্থের রচয়িতা। তাদের যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে তিনি বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেন।
কর্মক্ষেত্রের শিক্ষার্থী
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার পর তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের অধীনে নিজামুল মুল্ক শাসিত ইস্পাহান প্রদেশের আদালতে যোগদান করেন। নিজামুল মুলক মুসলিম বিশ্বে আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কর্মকান্ডের জন্য সুপরিচিত ছিলেন।
১০৯১ খ্রিস্টাব্দে ইমাম গাজালি রহ. বাগদাদের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র নিজামিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। বাগদাদে তিনি অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করেন যেখানে তার নিয়মিত লেকচারগুলোতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটতো।
শিক্ষা ভ্রমণে গাজালি
১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইমাম গাজ্জালি আধ্যাত্মিকতার সংকটের বিষয়টি উপলব্ধি করেন। এ সময় তিনি নিজের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
নিজের মাঝে আধ্যাত্মিকতার এই সঙ্কটের কথা বুঝতে পেরে তিনি নিজামিয়া থেকে পদত্যাগ করেন এবং দামেস্ক, জেরুসালেম এবং হেজাজ সফরে বেরিয়ে পড়েন।
এই দীর্ঘ ভ্রমণকালে তিনি আত্মশুদ্ধির প্রতি গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন এবং প্রচলিত ইসলামি ধ্যান-ধারণার নানান দিকগুলো বিশ্লেষণ করেন।
অবশেষে
১১০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাগদাদে ফিরে যান এবং পুনরায় শিক্ষকতা শুরু করেন। আত্মশুদ্ধি ও নিয়তের পরিশুদ্ধির উপায় অনুসন্ধানে তার কর্মকাণ্ড ও চিন্তাধারা জনগণের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
বাগদাদে অবস্থানকালে শাসকদের সাথে তার কিছু বিরোধ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজ শহর তুসে ফিরে যান এবং সেখানেই ১১১১ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
৫ ফার্সি কবি; সাহিত্যের অনন্য খোরাক যাদের লেখা