শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ভাষার টানে সীমান্তে মিলেমিশে একাকার দুই বাংলার মানুষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কয়েক হাজার মানুষ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের জিরোপয়েন্টে মিলেমিশে একাকার হলেন। বাংলা ভাষার জন্য শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আবেগে ভাসলেন দুই বাংলার বাংলাভাষী মানুষজন।

আজ বুধবার সকালে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বাংলাদেশের বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ও অন্য নেতৃবৃন্দ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে নোম্যানস ল্যান্ডে বিশেষভাবে তৈরি শহীদ মিনারে ভাষা শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় উভয় বাংলার মানুষদের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে উভয়দেশের প্রতিনিধিরা জিরো পয়েন্টে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ’ থেকে ভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে ভাষণ দেন।

ওই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘আমি গর্বিত যে আমি বাঙালি হয়ে জন্মেছি। আমি মারা যাওয়ার পর যদি আবার পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করি তাহলে আমি বাঙালি হয়ে জন্মাব। বাংলা ভাষায় অ-আ-ক-খ এর কোনো তুলনা হয় না! বাংলা কবি-সাহিত্যিকসহ অনেক গুণীজনের জন্ম দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রামকৃষ্ণ দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, শেখ মুজিবর রহমান প্রমুখের নাম উল্লেখ করেন।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘এ ধরণের অনুষ্ঠান কোনোদিন শেষ হবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই অনুষ্ঠানকে ধরে রাখবে। হাজার বছর ধরে চলবে এই অনুষ্ঠান। তবে হাজার বছর পর আর কোনো কাঁটাতার থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ৩৪১টি ব্লকে দার্জিলিং থেকে শুরু করে পাথরপ্রতিমা সমস্ত জায়গায় ভাষা দিবস পালিত হচ্ছে। প্রত্যেকটি স্কুলে ভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে। বাংলায় আমরা কথা বলি, বাংলা আমাদের গর্ব।’

বাংলাদেশের বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন তার আবেগময় ভাষণে বলেন, ‘একজন বাঙালি হিসেবে আমি খুব সম্মানবোধ করি, গর্ববোধ করি যে আমি বাঙালি হিসেবে জন্মেছি। আমি বাঙালি হিসেবেই বেঁচে থাকতে চাই। আমি বিনা প্রয়োজনে কখনোই একটিও অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করতে চাই না।

কারণ, আমার বর্ণমালা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। আমার বর্ণমালা আমার স্বকীয়তা, আমার বর্ণমালা ছত্রিশ কোটি বাঙালির অস্তিত্ব। আমার বর্ণমালা আমাদের সম্প্রীতি, আমার বর্ণমালা আমাদের অহংকার। এই বর্ণমালাকে আমরা কখনোই অবহেলা করতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘আজ ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার যে আগ্রাসন, অন্য ভাষার যে আগ্রাসন ও দখল আমরা যদি সেসব ভাষার প্রতি আসক্ত হই তাহলে ধীরে ধীরে আমার বর্ণমালা অভিমানী হয়ে উঠবে।’

বেনাপোল পৌরসভার মেয়র বলেন, ‘বাংলা আমাদের অহংকার, এই বাংলায় কবিতা, বাংলার গান, বাংলার নাটক, বাংলার সাহিত্য, বাংলার ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ ও অনেক উচ্চমানের। সুতরাং বাঙালি কারো কাছে মাথা নত করার নয়।’

বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমি আতঙ্কিত, রিট্রিট সেরিমনির জন্য বিএসএফ (জিরো পয়েন্টে) বাংলাদেশের মতো নান্দনিক স্থাপনা করতে চায়। তাহলে আমাদের এই সম্প্রীতির আদান-প্রদানের জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে? তিনি এ ব্যাপারে উভয়দেশের উৎসব-পার্বণ পালনের জন্য সীমান্তে দু’দেশের অর্থায়নে দুই থেকে তিন একর জমিতে নান্দনিক মঞ্চ করার প্রস্তাব দেন।

তিনি এ সময় উপস্থিত জনতাকে ভারত ও বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাত তুলে ওই প্রস্তাব সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানালে কয়েক হাজার মানুষ তা বিপুলভাবে সমর্থন জানান।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভাষা দিবসের ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশাপাশি বনগাঁর সংসদ সদস্য মমতা ঠাকুর, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজ্য হজ্ব কমিটির সদস্য এ কে এম ফারহাদ, বনগাঁর সাবেক বিধায়ক গোপাল শেঠ, মহকুমা প্রশাসক ড. কাকলী মুখার্জী, বনগাঁর এসডিপিও অনিল কুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বেনাপোলের মেয়র আশরাফুল আলম লিটনসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য পীযুষকান্তি ভট্টাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের কোম্পানি কমান্ডার লে. কর্নেল মুহাম্মদ আরিফুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পার্সটুডে/এইচজে


সম্পর্কিত খবর